বিশ্বাসযোগ্য বাংলাদেশ কিংবা ভারতে হিন্দু খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মীয় ইস্যুতে এরকম তান্ডব চালাবে?

পুরো হাওড়া আতংকে কেঁপেছে। কারণ জুম্মা ফেরত ‘তৌহদী জনতা’ রাস্তা দখল নিয়েছে। ট্রেন অবরোধ করেছে। অফিস ফেরত মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এই অফিস ফেরতদের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু। তাদের উপর পুরো বিশ্ব দায় চাপায় যে তারা ‘মুসলিম বিদ্বেষী’। তারা মুসলমানদের গরুর মাংস খেতে দেয় না। জোর করে জয়শ্রীরাম বলায়...। সেই তারা ঘরে ফিরতে গিয়ে চরম বিড়ম্বণায় পড়ল ‘সংখ্যালঘুদের’ তান্ডবে! এটা বিশ্বাসযোগ্য বাংলাদেশ কিংবা ভারতে হিন্দু খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মীয় ইস্যুতে এরকম তান্ডব চালাবে? স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হাতজোর করে মিনতি করে মুসল্লিদের অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করল...। ভারত কাপড় চাকরি খাবার দাবারের দাবীতে নয়, শিক্ষার দাবীতে নয়, একজন পয়গম্বকে নিয়ে একটি দলের একজন মুখপাত্র কি বলেছে তার জন্য ভারতের মুসলমানরা কাল পুরো ভারত অচল করে দিয়েছে!
এরাই নাকি ভারতের হিন্দুদের হাতে মার খাওয়া ‘সংখ্যালঘু’! তাদের নাকি পথেঘাটে জয় শ্রীরাম বলায় হিন্দুরা! সেই দেশে ট্রেন বন্ধ করে দিতে পারে তারা! রাঁচিতে বিশেষ বাহিনী নেমে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। কেন? কোলকাতা থেকে পাকিস্তানের দাবীতে ডাইরেক্ট এ্যাকশন ডে’র পর কেন পশ্চিমবঙ্গে থেকে গিয়েছিলো মুসলমানরা? কেন তারা পাকিস্তানে চলে গেলো না? ‘মুসলমানদের নিজস্ব দেশে’ না গিয়ে কেন তারা ভারতে হিন্দুদের হাতে ‘বঞ্চিত’ হতে থেকে গেলো?

ভারতীয় বামপন্থীরা এদেশের ইতিহাসকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি করে রেখেছে! হিন্দুদের ‘রামরাজ্য’ পরাবাস্তব হলেও মুসলমানরা ‘পাকিস্তান’ করে দেখিয়েছে। লাহোর প্রস্তাবে মুসলমানদের একাধিক রাজ্যের দাবীর কোথাও বলা হয়নি ‘পাকিস্তান’ শব্দটি, অর্থ্যাত মুসলমানদের নিজস্ব দেশের নাম যে কোন কিছুই তারা রাখতে পারে। উপমহাদেশে সেরকম দেশ এখন দুটি যা লাহোর প্রস্তাব মেনে ভাগ হয়ে আবার উপভাগ হয়েছে। ভারতের মধ্যে কাল যে তান্ডব সেটি সেই লাহোর প্রস্তাবের অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের সৈনিকদের তান্ডব। কোথায় তাদের ‘সংখ্যালঘু’ তকমা? ভারতের মুসলমান কখনোই বলেনি তারা মাদ্রাসায় পড়তে চায় না। কখনোই তারা বলেনি তারা শরীয়া নয় আধুনিক আইন চায়। তারা সব সময় ফুঁসে উঠেছে ধর্মের নামে। কখনো নবী অবমাননা, কখনো তিন তালাক, কখনো বহুবিবাহ, কখনো শরীয়া আইনের জন্য। মুসলমানের সংখ্যালঘুত্ব একটা ইউটোপিয়া! সংখ্যায় কম একটি অঙ্গ শাস্ত্রের বৈজ্ঞানিক অবস্থান। সংখ্যায় কম মানেই সে দুর্বল নিরহ বা অহিংস নয়। তাহলে ইউরোপের সাদারা কি করে আফ্রিকায় উপনিবেশ চালালো? কি করে ভারতবর্ষকে বাগে আনল? কি করে ভারতে ‘সংখ্যালঘু’ মুসলমানরা মুসলিম সাম্রাজ্য সাতশো বছর ধরে টিকিয়ে রাখল?

অনেকেই বলছেন গতকালের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে বিজেপির? কিসের লাভ? বিজেপি এখন মুসলমানদের সহিংসতা দেখিয়ে মুসলিম বিরোধী ভোটকে নিজেদের দিকে টেনে নিবে। ...আরে দুর! তাতে মহাভারত কি অশুদ্ধ হবে শুনি? ভারত ‘রামরাজ্য’ হয়ে যাবে? হলে কার কি ছেঁড়া যাবে? হিন্দুদের কোন ধারণা আছে ‘রামরাজ্য’ কি জিনিস? রাম তার রাজ্যকে কোন আইনে চলাতো? ভূ-ভারতে এরকম কোন হিন্দু রাজ্যের ধারণা নেই যেমনটা ইসলামিক রাষ্ট্রের কথা আমরা জানি। কি হবে ভারত কথিত ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হলে? মুসলমানদের সমস্যা হবে? কেন বাংলাদেশ পাকিস্তানসহ ৫৭টা ‘মুসলিম কান্ট্রি’-তে কি অমুসলিমরা নেই? হিন্দু রাষ্ট্রে সুষমা স্বরাজের মত নারী নেত্রীত্ব করতে পারে। এখানে নূপুর শর্মার মত নারী নেতৃত্ব আছে। কিন্তু ইরানের খোমনি শাহের মন্ত্রী সভার নারী মন্ত্রীদের পতিতাতলয়ের নিয়ে গিয়ে ফাঁসি দিয়েছিলেন কারণ পুরুষের মত সমঅধিকার চাওয়ার অর্থ বেশ্যা হতে চাওয়া। কোন একটি ইসলামিক দেশেই নারীদের সুষম অধিকার নেই। রাজনীতিতে দিনকে দিন তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। হিন্দুরা কি করে ‘হিন্দু আইন’ দিয়ে পুরো ভারত চালাবে? শতেক হিন্দুর শতেক আইন! ফালতু ভীতি ছড়ানো হয়েছে! ভারত ‘হিন্দু দেশ’ হলে আমার কোন কিছু ছেঁড়া যাবে না! ইজরাইল স্বঘোষিত ইহুদী রাষ্ট্র হলেও সেখানে ১৫ শতাংশ মুসলিম বসবাস করে! ইজরাইল চলে সেক্যুলার আইনে। সেখানে মুসলিম বিচারপতি থেকে এমপি পর্যন্ত আছে! আপনি আরব বিশ্বে এরকম নজির দেখান? আমি জানি আপনি ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের মন্ত্রীসভার কথা বলতে পারে। খ্রিস্টান তারেক আজিজের কথা বলতে পারেন। কিন্তু সেটা তো বেতিক্রম। বেতিক্রম দেখিয়ে কুতর্ক করা গেলেও ‘ইসলামিক রাষ্ট্রের’ যে কনসেপ্ট তাতে কোন অমুসলিমের অধিকার মুসলমানদের সমান হতে পারে না।

মানুষের প্রতি বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষ একটা রাজনৈতিক প্রাণী। রাজনৈতিক বলেই এরা সত্য স্বীকার করে না। আমার মত ‘অরাজনৈতিক’ মানুষরা সত্যকে খাঁদ ছাড়া দেখায় বলেই সত্যগুলো দগদগে ঘায়ের মত লাগে তাই সহ্য হয় না। বিজেপির জুজু ভারতের বাম কংগ্রেসদের রাজনৈতিক অবস্থান ছাড়া আর কিছুই না। মসিজদের মধ্যে শিবলিঙ্গ খুঁজে বেড়ানো প্রায় বন্ধ হয়ে গেলে ভারত থেকে। আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্যিকভাবে মার খাওয়ার ভয়ে সমানে মোদি যোগী হয়ে উঠবে আরো বেশি সেক্যুলার! কিন্তু যে শাতমে রাসূলপন্থিরা ভারতে আগুন দিলো তাদের কে সেক্যুলার বানাবে? তাদের লাহোর প্রস্তাব থেকে মুখ ফিরিয়ে কে নিবে? সঙ্গে আছে গজওয়াতুল হিন্দ! এখনো বাংলাদেশের মহান নেতাদের বক্তব্যগুলি চেক করে দেখুন। বাংলা আসাম ত্রিপুরা সব তাদের! দিল্লিও তাদের! পুরো পশ্চিমবঙ্গ তাদের। এগুলো সব মুসলমানদের। সেখানে হিন্দুরা নাই। ভারত দেশটাই নাকি মুসলমানরা বানিয়েছে! এগুলো বামপন্থীরা বই লিখে জানিয়ে গেছে। লাহোর প্রস্তাবের প্রেতাত্মা তাই আজো মরে যায়নি। তারা তাদের হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে কখনো মডারেট শিক্ষিতদের ‘লাহোর প্রস্তাবে’ ফিরে আসে। কখনো কট্টর ধার্মিকদের কাছে ‘গজওয়াতুল হিন্দের’ মাধ্যমে ফিরে আসে। এই সত্য কাউন্টার যদি দিতে না পারেন তো আমাকে ‘বিজেপির পেইড এজেন্ট’ বলে একটা গালি দিয়ে নিজের গর্তে গিয়ে লুকান!

#সুষুপ্তপাঠক
11 June 2022

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted