নূপুর শর্মার পর এখন ‘দ্য লেডি অব হেভেন’!

নূপুর শর্মার পর এখন ‘দ্য লেডি অব হেভেন’! এটি একটি সিনেমার নাম। মুসলমানদের বিরোধীতার কারণে সিনেমাটির সকল প্রদর্শনি ইংলেন্ডে বন্ধ করা হয়েছে। ইংলেন্ডের মসজিদগুলির মুল্লাদের বিভিন্ন নামে সংগঠন আছে, মূলত এরাই সংগঠিত হয়ে সিনেমা প্রদর্শনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। ইংলেন্ডের অভিবাসী মুসলমানদের নেতৃত্ব এখন এই মুল্লাদের হাতে। কিন্তু ‘দ্য লেডি অব হেভেন’ কি নূপুর শর্মার মত কোন অমুসলিম বানিয়েছে? 

একদমই না! এই সিনেমার কাহিনীই লিখেছেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, তিনি শেখ ইয়াসের আল হাবিব। তিনি একজন জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার। শিয়া মুসলিমদের একজন ধর্মগুরু। যে সিনেমায় বলা হয়েছে আইএস বা অন্যান্য যত ইসলামিক সংগঠন আছে ফাতেমা হচ্ছেন সেই সন্ত্রাসের প্রথম শিকার। এই সিনেমার কাহিনী এক ছোট্ট বালককে ঘিরে। ইরাকে আইএসের আক্রমনে যে তার মাকে হারায়। কেন এই রক্তপাত শিশুর সেই প্রশ্নে তাকে জানানো হয় এর সূচনা হয়েছিলো হযরত ফাতেমাকে দিয়ে।
 

এখানেই সিনেমা নিয়ে আপত্তি। কাদের আপত্তি? এইখানেই আরো বড় ঝামেলাটা! এই সিনেমাকে ‘মুসলিম বিদ্বেষ’ ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ বলার উপায় কোথায়? সিনেমার কাহিনীতে প্রফেট মুহাম্মদের সহকারী আবু বকর, আবু বকরের কন্যা ও প্রফেটের সর্বকনিষ্ঠ স্ত্রী আয়েশা ও হযরত ওমরকে ভিলেন হিসেবে দেখানো হয়েছে। দেখানো হয়েছে কি করে নবী কন্যাকে হত্যা করা হয় ক্ষমতা দখল করতে। এই সিনেমা নিয়ে তাই ‘সুন্নী অনুভূতি’ আহত হয়েছে বলা যায়। ইসলামের প্রথম গৃহযুদ্ধ নিয়ে সুন্নীরা কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করে। তারা কেউ ফাতেমার মৃত্যু নিয়ে কথা বলতে চায় না। তারা ফাতেমা পুত্র হোসেনের কাটা মন্ডু নিয়ে ফুটবলের মত লাথি দেয়া, সেই কাটামন্ডু পেছনে রেখে আসর নামাজ আদায় করা সুন্নী মুসলমানদের ইতিহাস নিয়ে নিশ্চুপ থাকতে চায়। শিয়াদের ৮০ পারা কুরআন পক্ষান্তরে সুন্নীদের মাত্র ৩০ পারা কুরআন বিষয়ে তারা এড়িয়ে যেতে চায়। শিয়া সুন্নীদের রক্তপাত তো কোনদিন থামেনি। আজো রক্ত ঝরছে। মধ্যপাচ্যে ‘মুসলমান’ এই পরিচয়ে কোনদিন কোন জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। দুনিয়া থেকে সমস্ত অমুসলিমদের যদি মুসলমানরা কচুকারা করে ফেলে কিংবা ধর্মান্তরিত করে ফেলে তখনো শুধু মুসলিম পরিচয়ে কেউ শান্তিতে সুখে বসবাস করতে পারবে না। তারা মৌলিকভাবে দুইভাবে বিভক্ত থাকবে। তারা উপভাগে একশো ভাগে বিভক্ত থাকবে। এই সিনেমায় সেটাই বলা হয়েছে যে এই রক্তপাতের শুরু ১৪০০ বছর আগে এবং কারা এই রক্তপাতের শুরু করেছিলো সেটাই দেখানো হয়েছে।

লন্ডনে অনেকগুলি বিক্ষোভ হয়েছে রাস্তাঘাটে। সেসব বিক্ষোভ থেকে তারা ইসলামের নবী অবমাননা, সাহাবী অবমাননার দাবী তুলেছে। সিনেমাতে প্রফেট কন্যা ও সাহাবী চরিত্রে কোন অভিনেতা ও অভিনেত্রী অভিনয় করেনি মুসলমানদের যাতে আহত না করে। বিশেষ গ্রাফিক্স ও লেজার ব্যবহার করে স্কিনে অবয়ব সৃষ্টি করা হয়েছে। নারী চরিত্রগুলো ছিলো কালো বোরখায় ঢাকা। এটা ইসলামের প্রথম গৃহযুদ্ধের কাহিনী। এটা একজন নূপুর শর্মার মুখে বলা কোন কাহিনী নয়। এটা একজন প্রবলভাবে বিশ্বাসী মুসলমানের লিখিত চিত্রনাট্য। এটা সালমান রুশদি লিখেনি। সুষুপ্ত পাঠকও লিখেনি। লিখেছেন একজন পীর সাহেব। তিনি শিয়া। তাই সুন্নীরা এখন তাকে ‘শিয়ারা সহি মুসলমান নহে’ বলতেই পারে। কিন্তু ‘ইসলামফোবিয়া’ তো বলতে পারছে না। বরং এই সিনেমার কারণে সুন্নী জঙ্গিরা বোমা মারবে শিয়া মসজিদগুলিতে। নোয়াম চমেস্কির জন্যও সময়টা বেকার যাবে। আন্তর্জাতিক বামাতীবৃন্দ্রের এখানে জ্বালাময়ী কিছু বলারও নেই। মুসলমান মুসলমানের হাড়ি হাটে ভাঙ্গছে! বলছে ইসলামের সাহাবীরা একে অন্যকে ঠকিয়েছে। তারা হত্যা করেছে ক্ষমতার লোভে। আমি বলছি না। ১৪০০ বছর ধরে আলী-ফাতেমাপন্থি মুসলমানরা বলছে। এবং বলতেই থাকবে। মুসলমানরাই বলছে, আইএস, আল কায়দা আরো যেসব বাহারী জঙ্গি দল সেগুলির সূচনা হয়েছিলো ফাতেমা হত্যার মাধ্যমে। ‘লেডি অব হেভন’ বলছে এই সন্ত্রাসের প্রথম বলি হযরত ফাতেমা! এখানেও বিশ্ব বামাতীদের তত্ত্ব ‘আমেরিকা তেলের লোভে জঙ্গিবাদ তৈরি করেছে’ অপমৃত্যু ঘটল! নূপুর শর্মা বলছে না ভারতের ইসলামিক দলগুলিকে জঙ্গি, বরং শেখ ইয়াসের আল হাবিব বলছেন সুন্নী ইসলামিক খিলাফতবাদীরা সব সন্ত্রাসী যাদের জন্ম ফাতেমাকে হত্যার মাধ্যমে। মাঝখানে পরাজয় ঘটেছে আরেকটি অংশের। সেটি ব্রিটিশ মুক্তচিন্তা, বাক স্বাধীনতা, স্বাধীন সাহিত্য চলচিত্র প্রকাশের গর্ব আজ পরাজয় মেনে নিয়েছে। হাউস অব লর্ডসের পিয়ার ব্যারনেস ক্লেয়ার ফক্স বলেছেন, এটা শিল্পের জন্য বিপর্যয়ময় একটি দিন। সিনেমাটির প্রযোজক মালিক প্লিবাক যিনি একজন ধার্মিক মুসলমান তিনি বলেছেন, সিনেমাটি দেখার দর্শকদের অধিকার রয়েছে। কিন্তু ইংলেন্ডের হল মালিকরা বলছে তাদের কর্মীদের ও দর্শকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে বিধায় তারা সিনেমাটি নামিয়ে ফেলেছে...। প্রশ্নটা তারপরই সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে আমাদের সকলের মাথাতে, কাদের ভয়ে সিনেমাটা হল থেকে নামিয়ে ফেলতে হলো? ইংলেন্ডের ‘সংখ্যালঘুদের’ কি এতই সন্ত্রাস করার ক্ষমতা? তাহলে সিনেমার স্কিপ্ট রাইটার তো মিথ্যে কিছু লিখেনি? নূপুর শর্মাকে ইসলাম বিদ্বেষী বলে পার পাবেন, কিন্তু ‘দ্য লেডি অব হেভেন’ দেখতে গেলে যারা হামলা করতে পারে তাদের সম্পর্কে আজ হোক কাল হোক মানুষ তো মুখ খুলতে শুরু করবেই...।

#সুষুপ্তপাঠক
10 June 2022

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted