ভারতীয় মুসলমানদের সমস্যা সমূহ এরকম: তাদের গরুর মাংস খেতে বাধা দেয়া হচ্ছে। বন্দেমাতারাম বলতে বাধ্য করছে। পাকিস্তানে চলে যেতে বলছে। এই সবগুলো অভিযোগই সত্য। কোন না কোনভাবে ভারতের মুসলিমদের এইসব ব্যাপারে অপমানিত করার ঘটনা ঘটেছে সুদীর্ঘকাল থেকে।
গরুর মাংস নিয়ে হিন্দুরা বরং কমই করেছে! গরু মুসলমানদের ঠিক হিন্দুদের মত নবীর বিশেষ কিছু হলে বাংলাদেশ পাকিস্তানে এতদিনে আইন করে গরু খাওয়া বন্ধ করা হত। বাংলাদেশের হিন্দুদের যেমন কিছু হলেই প্যাকেট করে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলা হয় তেমন ভারতের মুসলমানদের পাকিস্তানে চলে যাবার খোটা দেয়া হয়। আসলে দুই প্রান্তের এই দুই সম্প্রদায় সত্যিকারের ভারত ও পাকিস্তান লাভার। বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতপ্রেমী। বাড়িতে দোকানে যে ধুপকাঠি জ্বালায় সেটাও ভারত থেকেই আনা। পয়সাঅলা হিন্দুরা ভারতে বাড়ি কেনে। ভারতের মুসলমানরাও পাকিস্তানের সমর্থক। পাকিস্তান জিতলে তাদের ভালো লাগে। পাক ভারত যুদ্ধে সি আর দত্ত ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হিন্দু বাঙালী অফিসার হিসেবে। কিন্তু তার সম্প্রদায়ের সবাই পূর্ব পাকিস্তানে রীতিমত গাদ্দার হিসেবে মুসলমানদের কাছে সন্দেহে কাঁটা হয়ে থাকত। হিন্দুরা হচ্ছে ভারতের স্পাই। এরা পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য নিয়মিত হিন্দুস্তানে যাতায়াত করে…।
কাজেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুসলিম সদস্যের পাকিস্তান বিরুদ্ধে খেতাব জেতা আসলে একই রকমের বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সত্যি কথা হলো পাকিস্তান হবার পর পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যাওয়া হিন্দুরা পাকিস্তানকে মেনে নিতে পারেনি। একইভাবে পাকিস্তান হবার পর ভারতে থেকে যাওয়া মুসলমানরাও ভারতকে মেনে নিতে পারেনি। উচিত ছিলো ভারতবর্ষকে দুই ভাগ করে প্রতিটি হিন্দু মুসলমানকে যার যার সম্প্রদায়ের জন্য নির্ধারিত দেশে চলে যাওয়া। সেদিক থেকে বাংলাদেশ পাকিস্তান নিরাপদ। কারণ এরা ঘোষণা দিয়েই জন্ম নিয়েছিলো এগুলো মুসলমানদের দেশ। পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ নামে স্বাধীন হলেও তার ভিত্তি দ্বিজাতিতত্ত্ব। এখানে হিন্দুরা কখনই রাজনীতি অর্থনীতি সমাজজীবনে মুসলমানদের প্রতিদ্বন্দি হতে পারবে না। পাকিস্তানেও একই কথা। এ কারণে বাংলাদেশ পাকিস্তানে হিন্দুদের হাউকাউ নেই। তারা জানেই মার খাওয়া কিংবা সম্পদ লুট হওয়াটাই স্বাভাবিক কারণ এটা তো মুসলমানদের দেশ। বাংলাদেশের সব হিন্দুই জানে বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ, ভারত হচ্ছে হিন্দুদের দেশ। ক্যাব পাশ হওয়ায় এমন হিন্দু কি পাওয়া যাবে যে অখুশি হয়েছে? পাবেন না। গুটিককয়েক বাস্তবজ্ঞানরোহিত বামপন্থি কি বলল না বলল সেটা ধাতব্যের নয়। কিন্তু ভারতে মুসলমানদের চিৎকার চলতেই থাকবে। এই আজাদী মানি না…। জাতীয় সংগীত গাইব না। বন্দেমাতারম বললে আমার ঈমান থাকে না।… যদি বেশি চাপ দাও তো ভারত আবার ভাগ হবে বলে দিচ্ছি…। সবাই জানে পাকিস্তানে থাকলে এই ভারতীয় একটি মুসলিমকেও খুঁজে পাওয়া যেতো না যে দরদ দিয়ে জাতীয় সংগীত গাইবে না। এর মানে কিন্তু এটা নয় সমস্ত ভারতীয় মুসলমানকে আমি এই কাতারে ফেলছি। মোটেই তা নয়। আমি বুঝাতে চাইছি খুব সাধারণভাবে ভারতীয় মুসলমানদের পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতি ভালোলাগা খুব স্বাভাবিক মানবিক একটি দিক কারণ পাকিস্তানের মুসলমানের সঙ্গে তাদের আছে কালচারের নৈকট্য। একইভাবে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের হিন্দুদের আছে দুর্বলতাও কালচারাল। একই ধর্ম একই বিশ্বাস।
বাংলাদেশের হিন্দুদের বাড়িতে সকালবেলা বুড়োবুড়িরা ভারতের চ্যানেল ঘুরিয়ে দেবদেবতার কথা, ঠাকুরের বাণী শোনে। এটা তো বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল থেকে তার তৃষ্ণা মিটবে না। ভারতকে হারালে বাংলাদেশের মুসলমানরা যখন ভারতকে বিদ্বেষ করে খিস্তি করে তখন কোন হিন্দুরই সেটা ভালো লাগে না। একইভাবে ভারত পাকিস্তানকে হারানোর পর পাকিস্তানকে নেংটা করে ছেড়ে দেয়ার খিস্তি মাস্তি ভারতীয় মুসলমানদের ভালো লাগে না। হোক জহির থান ৫ ইউকেট নিয়ে জিতিয়েছে। হোক লিটন দাস সেঞ্চুরি করে ভারতকে হারিয়েছে। তারা বুনো উল্লাসের বদলে ভদ্রস্ত উল্লাস চায়। এই চাওয়া পাকিস্তানের প্রতি/ ভারতের প্রতি ভালোবাসা থেকে। এই সত্যগুলো এত নগ্ন যে চেয়ে দেখার মত নয়! তাই এ উপমহাদেশে পাকিস্তান বাংলাদেশ যতদিন আছে ততদিন ভারতের মুসলমানদের অভিযোগ অনুযোগ কান্না প্রতিবাদ হুমকি বন্ধ হবে না!। একইভাবে বাংলাদেশের হিন্দুদের ‘বাপের দেশে’ যাওয়া আসাও বন্ধ হবে না!
বলছেন সমাধানটা কি? ভারতের সেক্যুলাররা আসলে কি চায় আমি বুঝতে পারি না। বামপন্থিদের কিছুটা বুঝা যায়। তারা ভারত ভেঙ্গে হলেও মুসলমানদের শক্তিতে একটা কমিউনিস্ট দেশ করা যায় কিনা ভাবতে পারে। এরকম চিন্তা আসতে পারে যদি ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশের হিন্দু মুসলমানদের এই মানসিক দ্বন্দ সংঘর্ষকে বুঝতে না পারা থেকে। আমার মনে হয় ভারতের ‘হিন্দুর দেশ’ হওয়াই সমাধান। তার মানে কি সেখানে মুসলমানরা থাকতে পারবে না? অবশ্যই থাকবে। বাংলাদেশ পাকিস্তানের মত স্বঘোষিত মুসলিম দেশের মত নয়, সমান নাগরিক অধিকার নিয়ে থাকতে পারবে। সেই হিন্দুর দেশে ভবিষ্যতে কোন মুসলমান প্রধানমন্ত্রীও হতে পারবে। কিন্তু যে হাউকাউটা আছে, ভেঙ্গে দেয়ার যে হুমকি, অভিযোগ আর অনুযোগ তা বন্ধ হয়ে যাবে। ইজরাইয়েল যদি স্বঘোষিত (এখন সাংবিধানিকভাবে) ইহুদী রাষ্ট্র না হতো সেই মিডলইস্টে যেখানে চারদিকে মুসলিম দেশের সাড়ি, যদি স্বঘোষিত সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতো তাহলে ইজরাইলে বসবাস করা মুসলমানরা ঠিক এই কায়দায় নিজেদের বৈষম্য নির্যাতিত অবেহেলিত বলে অভিযোগ করত। এখন সেটা নেই। ইজরাইলে বসবাস করা মুসলমান আরবের যে কোন দেশের থেকে ইজরাইলে বেটার আছে। আমি বলতে পারতাম অন্য কথা। ধর্মনিরপেক্ষ ভারত, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান হওয়ার কথা। কিন্তু এগুলো এত জটিল বিষয় যে এরকম সস্তা প্রেসক্রিপশনে এই রোগের ঔষধ মিলবে না।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................