"হিন্দুত্ব"---- মৃনালানন্দ হিন্দু
( ৩ য় ভাগের শেষ অংশ)
মানুষের জীবনে ধর্মের প্রয়োজন কি ?
কার্ল মার্ক্স তো বলে গেছেন “ধর্ম হচ্ছে সমাজের জঞ্জাল”। তার সেই মতকে আঁকড়ে ধরে এক সময় সারা পৃথিবীর প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ “ধর্ম ত্যাগ” করেছিলো? আমাদের পশ্চিম বংগে আজো অনেক মানুষ আছেন যারা নিয়মিত ধর্মকে বিশেষ করে হিন্দুদের গালাগালি করেন, তাদের উপাস্য দেব দেবী, এবং নানা আচার পদ্ধতিকে শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে কুৎসিত ভাষায় গালি গালাজ করেন।
আগেই বলেছি, ধর্ম হচ্ছে কিছু নিয়ম কানুন, ভাবনা চিন্তা, দৈনিন্দিন জীবনের চলার পদ্ধতি যা মানুষকে এক সঙ্গে চলতে শেখায়, চলার সঙ্গীদের ভালোবাসতে শেখায়, একে অন্যের ক্ষতি না করতে শেখায়, সৃষ্টি কর্তা রুপী ঈশ্বরকে হৃদয়ে স্থাপন করে তার সৃষ্ট সব কিছুর সঙ্গে আত্মীয়তা (নিজের আত্মার সঙ্গে অন্যের আত্মার যোগ= আত্মীয়) প্রতিষ্ঠা করে। এক একটি সুস্থ সমাজ তৈরী হয়।
সুতরাং, যারা ধর্ম মানে না, তার ঠিক এর উলটো রাস্তায় চলে। ঈশ্বর (সৃষ্টিকর্তা) মানে না তাই সে হয় উদ্ধত, অহংকারী, আমিত্ব সর্বষ্ব। এর ফল অন্যকে ,অর্থ্যাত তার কথা যে না শোনে তাকে ঘৃনা করা। েরাই সমাজে ঘৃনা ছড়ায়, এরা নিজেরাই ঘৃন্য মনের মানুষ।
ধর্ম না মানার অর্থ তারা অধার্মিক। ধর্ম আমাদের শেখায়, সবাইকে সমান ভাবা, নিজের মধ্যে যে ‘আদিম প্রবৃত্তি থাকে তাকে সংযমের মধ্যে বেধে রেখে সমাজে শান্তি বজায় রাখা। অধার্মিকেরা তাই নিজেকে অন্যের থেকে বড়ো মনে করে “আমি – তুমি, আমরা – তোমরা” এই ঘৃনা ছড়ায়। এরা অসংযমী জীবন যাত্রা বেছে নিয়ে সমাজে , সংসারে , শিক্ষালয়ে “অশান্তি” র বীজ বপন করে।
অধার্মিকেরা লোভী হয়= তাই নানা ভাবে চুরি করে, কাম রিপু এদের বশে থাকে না= লালষা তাই এদের নিত্য সঙ্গী, ক্রোধ এরা দমন করতে পারে না= সামান্য কারনে তাই এরা মারামারি করে, এদের নিজেদের জীবনে কোনো শৃংখলা থাকে না তাই অধার্মিকেরা সমাজে বিশৃংখলার বীজ বপন করে সমাজকে উচ্ছন্নে দেয়। ধর্ম সুস্থ সমাজের সৃষ্টি করে, অধর্ম সমাজকে অসুস্থ করে তোলে।
তথাকথিত “ধার্মিক” এবং স্বঘোষিত “অধার্মিক= ধর্ম মানি না বলা মানুষ, এই দুই ধরনের মানুষের সম্বন্ধে বিখ্যাত ‘গীতা ভাষ্যকার’ অধ্যাপক অতুল চন্দ্র সেন কি বলেছেন তাই জেনে এই ধর্ম এবং অধর্মের আলোচনা শেষ করবো।
অতুল চন্দ্র সেন বলছেন “--- এক শ্রেনীর লোকের মন হইতে ‘ধর্মের নিবিড় যোগ’ ছিন্ন হইতেছে, অপর দিকে তেমনি অনেক লোক কতকগুলি আচার অনুষ্ঠানকেই ‘প্রকৃত ধর্ম’ বলিয়া আঁকড়াইয়া ধরিয়া আছে। অনেকে দেখা যায় যাঁহারা ধর্মের আচার অনুষ্ঠান যথাযথ পালন করেন, কিন্তু তাঁহাদের জীবন ও চরিত্রে ধর্মের ধর্মের কোনো প্রভাবই পড়ে না। যে আচার অনুষ্ঠান চিত্তকে নির্মল করেনা, তাহা ধর্ম জীবনের সহায়ক না হইয়া কেবল বন্ধনের ই কারন হয়। ধর্ম কতকগুলি আচার- নিষ্ঠার পুঞ্জীভুত কংকাল নহে”।
‘হিন্দুত্ব’ কি এবং মানুষের জীবনে তার কি অবদান, বুঝতে হলে এই বিদগ্ধ অধ্যাপক অতুল চন্র্হ সেনের বক্তব্যই সার কথা।
*******
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................