হিন্দুত্ব

“হিন্দুত্ব”---- মৃনালানন্দ হিন্দু 
(দুই) 

সনাতনী বৈদিক দর্শন বা ‘হিন্দুত্ব’ র কথা বলতে গেলে, এমন এক সময়ের কথা বলতে হয় , যখন এই পৃথিবীতে একটাই ধর্ম ছিলো, তার নাম “মানব ধর্ম-মানুষের ধর্ম’। বৈদিক ঋষিরা মানুষে মানুষে প্রভেদ করতে শেখান নি। মানুষে - প্রানীতে বা মানুষ- উদ্ভিত জগত কে প্রভেদ করতে শেখান নি। 

বৈদিক দর্শনের সুচনা প্রায় ১০০০০ বছর। বৈদিক দর্শন কোনো এক ব্যাক্তির কথা নয়। ‘সৃষ্টি কর্তার’ সঙ্গে বা তার প্রেরিত কোনো দুতের (গেব্রিয়েল) সঙ্গে গুহার মধ্যে বসে কথোপকথন নয়।  ঈশ্বরের কোনো এক পুত্র সন্তানের মুখ নিঃসৃত বানী নয়। অথবা ‘হিংসুটে জিহোবা’র ( I am a Jealous God) কথা নয়। যারা বলেন “আমি যা বলছি তা স্ব্যয়ং সৃষ্টি কর্তা তার কানে কানে এসে বলে গেছেন বা তার পুত্রকে পাঠিয়ে বলেছেন, তারা ভ্রান্ত বা ‘Temporal Lobe Epilepsy’ তে ভোগা রোগী। 

বৈদিক দর্শন, অসংখ্য জানা বা নাম না জানা জ্ঞান তপস্বী দের জ্ঞান লব্ধ বানী, যা আজো লিখিত আকারে বিদ্যমান। ১০০০০ বছর ধরে যে জ্ঞান লাভ হয়েছে তা মাত্র একটি গ্রন্থে বলা যায় না। তাই আছে চারটি বেদ, ১৮ টি উপনিষদ, ব্রহ্মসুত্র, ৬ টি দর্শন শাস্ত্র এবং সর্বোপরি এই সবের সার সংক্ষেপ “শ্রী গীতা”। রামায়ন, মহাভারত, ১২০ খানি পুরান মুলত বৈদিক সভ্যতার ইতিহাস। 

আমরা যারা নিজেকে হিন্দু বলে মনে করি, তারা এই “শ্রী গীতা” শাস্ত্র খানি পাঠ করি না। কিছু কিছু হিন্দুদের বাড়িতে পুজোর জায়গায় এক খানা রাখা থাকে,তার পাতা ওল্টাই না। আর মানুষ মরে গেলে শ্মশানে নিয়ে যাবার আগে ঘটা করে মৃত দেহের উপরে রাখি, যে ব্যাক্তি তার সারা জীবনে ওই গ্রন্থ খানি কি বস্তু তা মনেও করেনি। 

অন্য ধর্মীয়রা কিন্তু, একজন ব্যাক্তি, কোন গুহার মধ্যে তার কানে কি কথা শুনতে পেয়েছে  (Auditory Hallucination, very very common in Temporal Lobe Epilepsy, গ্রামে গঞ্জে অনেকে ‘ভর’ পড়ে, সেই রকম একটা কিছু) আর লোকের সামনে তাই বলেছে । তারা সেই লিপিবদ্ধ কথা রোজ পাঠ করে এবং তা পাঠ করানোর জন্য শিক্ষালয় আছে, সরকারী অনুদান আছে। 

বেদ, বেদাংগ, উপনিষদ, ব্রহ্মসুত্রের মধ্যে যাবো না--- মাথা খারাপ হয়ে যাবে। শ্রী গীতায় কি আছে, তা বলা যায়, যা কিছুটা সময় নষ্ট করে পড়লে, জানলে বা মানলে, অন্তত আর কিছু না হোক “হিন্দু’ হতে পারা যায়। 

গীতায় আঠারোটি অধ্যায়—৭০০ শ্লোক। ভালো করে অনুধাবন করে, যদি নিয়মিত পড়া হয় তাহলে বোঝা যাবে এর মধ্যে মুলত মাত্র দুটি কথা বলা আছে। একটি, নৈতিকতা (মানুষের নৈতিক সমস্যা), অন্যটি ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে কোন ধর্ম “আদর্শ স্থানীয়”- ‘মানুষের জীবনে কোন আদর্শ নিয়ে চলতে হবে’, কোন আদর্শ জীবনে প্রতিফিলত করতে পারলে ‘মানুষ সঠিক মানুষ হবে, সেটাই “হিন্দুত্ব”। শুধু ‘হিন্দু হিন্দু বলে চীৎকার করলেই ‘হিন্দু” হবার পথ পাওয়া যাবে না।   

মানুষ তার ‘জীবনের নীতি নির্ধারন করতে পারে তখনই, যখন তার জীবনে একটি আদর্শ ওতোপ্রোত ভাবে গেখে যায়। সেই আদর্শ একবার ‘চিত্তে’ গ্রোথিত হলে আর সে সেই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতে পারে না। মা কে ‘মা’ হিসাবে জানলে আর ‘মায়ের স্বরুপ এবং মর্যার্দা ক্ষুন্ন হতে পারে না। সেটাই হয়ে দাঁড়ায় “ নিয়ম, নীতি এবং কি তার ‘কর্ম’, তার দিশা এসে যায়। 

তাই আগে জানি, মানুষের ‘আদর্শ’ কি হবে?

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted