ইসলামের 'আমরা' আর 'তোমরা' :
--------------------------------------------
ইসলাম অনুসারে তো মানুষ দুইভাগে বিভক্ত : মুসলমান এবং অমুসলমান, তাই না ? তাহলে তো অতি অবশ্যই আমরা আর তোমরা চলে এলো। আসুন তাহলে এই 'আমরা' আর 'তোমরা' নিয়ে দু কথা হয়ে যাক !
তোমরা যারা আরবের টাকায় অনেকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছ, ভারত দেশটা খুব শীগগির দার-উল-হারব থেকে দার-উল-ইসলাম হয়ে যাবে, শত্রুর রাজ্য থেকে আল্লাহ তালার রাজ্যে অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যাবে, সেই উৎসাহে লম্বা দাড়ি রাখছ, ঝুলওলা জামা পরে খুব ছুটোছুটি করছ—তােমরা কি জাননা, আরব হচ্ছে এখন মদ আর মেয়েছেলে কেনার সবচেয়ে বড় বাজার। শেখেরা তেল বিক্রী করছে আর নানাদেশ থেকে হুরী খরিদ করছে। আশী বছরের মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধ শেখেরা শতশত স্ত্রী, রক্ষিতা থাকা সত্ত্বেও ভারতে এসে দশ বছরের আমিনাদের বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে। কামাসক্ত এই পশুরা ভারতে ইসলাম প্রচারের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভাবছে, পূণ্য সঞ্চয় করছি, ধর্মকর্ম করছি। মদ আর মেয়েছেলের দোজখে নিজেরা ডুবে থেকে তােমাদের বেহেস্তে অনন্তযৌবনা হুরীর লােভ দেখিয়ে মুসলমান করে রাখছে। আগে চরিত্রহীনেরা স্ফূর্তি করতে প্যারিসে, মাদ্রিদে যেত আর এখন যায় বাগদাদ, কায়রাে, কুয়েত, বাহারিণে। খােমইনি মেয়েদের বােরখা চাপা দিয়ে গেলে কি হবে, নগ্ন নৃত্যের পসরা আরবের সর্বত্র। মসজিদের চেয়ে বাড়ছে নাইট ক্লাবের সংখ্যা। শ্রেষ্ঠ বেলী ড্যান্সারদের ডিপাে আর বু ফিল্মের আড়ৎ এখন আরব আমীরশাহী।
এগুলাে সত্য কথা, আর সত্য সবসময় অপ্রিয়। বলি কি,আমাদের পিছনে না লেগে যদি নিজের ঘর সামলাতে সেটাই ভাল হতাে। নিজেদের ঘরে আগুন আর তােমরা যাচ্ছ অন্যের ঘরের আগুন নেভাতে। কয়েক লক্ষ ইহুদী তােমাদের কোটি কোটি মুসলমানকে চাবকে সিধে করে রেখে দিয়েছে। যতবার যুদ্ধ হয় লাখে লাখে তােমরা শুধু মরাে ! তােমরা কি জানাে, তােমাদের আরাফতের গুরু পি. এল. ও নেতা অনেকদিন আগে সব আরব রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের নিয়ে একবার আলােচনায় বসেছিলেন, আলোচ্য বিষয় : ইস্রায়েল দখল করে নিলে ঈহুদীদের কোথায় পাঠানাে হবে? নাসের, যিনি কায়রাে বেতারে প্রায়শঃই আহ্বান জানাতো, আল্লাহ আমাদের সহায়, আসুন আমরা পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ইস্রায়েলকে মুছে দিই। সেই নাসেরই একটু দয়াধর্ম দেখিয়ে বলেছিল, ওরা যে যে রাষ্ট্র থেকে এসেছিল, সেখানেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পি. এল. ও. নেতা বলেছিল, অতদূর পর্যন্ত আপনারা ভাবতে যাচ্ছেন কেন। ইস্রায়েল দখল করে আমরা ইহুদীদের জীবিত রাখলে তবে তাে ফেরৎ দেওয়ার প্রশ্ন। একবার ভাবাে তাে ব্যাপারটা ! ঠাণ্ডা মাথায় সবাই মিলে যেন কিছুই নয় এমনভাবে আলােচনা করছে কি? জিতলে পরাজিত ইহুদীদের কাউকে জীবিত রাখা হবে না। ইস্রায়েল বীরের মতাে লড়ে আত্মরক্ষা করতে পেরেছে তাই, না হলে কি দৃশ্য আমাদের দেখতে হতো ভাবা যায় না ! এগুলাে তো ইতিহাস। এই আমরা বাংলাদেশের যুদ্ধে সেনা নামিয়ে জয় করে যাদের দেশ তাদের হাতে তুলে দিয়ে পঁচানব্বই হাজার পাকিস্তানী সেনাকে বন্দী করে নিয়ে এসে ভারতে রেখে দিলাম তিনবছর। উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে, যথাসময়ে সম্মানের সঙ্গে পাঠিয়ে দিলাম পাকিস্তানে। অথচ এদের বিরুদ্ধে অভিযােগ ছিল ত্রিশলক্ষ নরহত্যার, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোেগ, লুঠ, অত্যাচার অর্থাৎ প্রত্যেকে ছিল মৃতুদণ্ডযােগ্য অপরাধী। এইরকম পচানব্বই হাজার শত্রু সৈন্য তােমরা যদি পেতে কি করতে? নৃশংসতার চূড়ান্ত করতে, একটাকেও জীবন্ত ছাড়তে না। আমরা তোমাদের পাকিস্তানী সেনাদের হত্যা করলাম না, আদর যত্ন করে বাঁচিয়েই শুধু রাখলাম না, তাদের পরিবারগুলােও যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য প্রত্যেক সেনার বাড়ীতে বাড়ীতে মাইনে পাঠালাম। এতাে ভালাে ব্যবহারের কি প্রতিদান পেলাম আমরা ? এই টাকাগুলাে আজ পর্যন্ত পাকিস্তান আমাদের ফেরৎ দিল না। আমরা একটু উদাসীনতা দেখিয়ে পাঁচানব্বই হাজার ইসলামের সৈনিকদের নিরস্ত্র করে, সেদিন ঢাকায় ছেড়ে দিয়ে আসতাম আমাদের কিছুই করতে হতাে না। তােমাদের ইসলামী ভাইয়েরাই মুহূর্তে এদের পঁচানব্বই লক্ষ মাংসখণ্ডে পরিণত করে দিতাে ! ইতিহাসের কি ট্রাজিক প্রবর্তন দেখাে, এই বাঙালী মুসলমানেরা কত উৎসাহ নিয়ে একদিন হিন্দু নিধন করেছে, সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে হিন্দুদের ভারতে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাদেরই ধর্ম ভাইদের হাত থেকে জান-মাল-মা-বােনেদের সম্মান বাঁচানাের জন্য দ্বারস্থ হতে হ’ল কা-র ভারতের কাছে। একে বলে ইতিহাসের মার, প্রকৃতির মার ! তােমাদের শাস্ত্রে তো আবার এগুলাের নামই ধর্ম !
লেবাননে ইহুদীরা যখন হাজার হাজার মুসলমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, অত্যাচার করেছে, প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্রগুলাে সাহায্যের হাত বাড়াতে ইতস্ততঃ করলেও আমরা সর্বাগ্রে সবরকম সাহায্য পাঠিয়েছি। তােমাদের অনুকুলে বিশ্বজনমত গঠন করেছি, আরাফতকে রাজকীয় সম্বর্ধনা জানিয়েছি। যদিও জানি, হিন্দুস্তানকে মুসলিম রাষ্ট্র করার যে প্যানইসলামিক চক্রান্ত, তােমরা সে চক্রান্তের অংশীদার ! এও জানি পাকিস্তানেই সাথে ভারতের যুদ্ধ হলে তােমরা মুসলমান বলে পাকিস্তানকেই মরাল সাপোর্ট দাও ! শুধু গোঁড়ামী আর উন্মাদনা দিয়ে একটা হট্টগােল করা যায়, পৃথিবীতে বেশীদিন টিকে থাকা যায় না। তোমাদের আবার কিছু মানুষজন কথায় কথায় রাম-রহিম টেনে আনে। রামের বাবা দশরথ, তাকে নিয়ে আছে কল্পকথা রামায়ণ। রহিমের বাপ কে ? যারা ধর্ম ও মতবাদের পার্থক্য বােঝে না, ত্যাগ এবং ভােগকে আলাদা করে বােঝার সামর্থ্য নেই, কোন দর্শনকেই যারা ভালােভাবে বুঝে উঠতে পারেনি, সেই পণ্ডিতেরা সব ধর্মের মধ্যে সমন্বয় করতে যায় । তারাই কোরাণের চন্দ্রবিন্দু আর পুরাণের ওঁ শব্দের মধ্যে মিল খোঁজে আর সেখানেই বারেবারে মুখ থুবড়ে পরে !
তােমরা কোনদিন শত চেষ্টায় “আমরা” হয়ে উঠলেও, সহস্র চেষ্টাতে আমরা কোনদিন “তােমরা” হয়ে উঠতে পারবো না......
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................