“কমল দাশগুপ্ত।“ লাভ জিহাদ যে কিভাবে একজন মানুষকে শেষ করে দিতে পারে তার সব থেকে উৎকৃষ্ট উদাহরণ.
তিনি বাংলা ছবির সংগীত-পরিচালক হিসেবে চারবার ও হিন্দি ছবির জন্যে একবার, মোট পাঁচবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের পুরস্কার লাভ করেন। সংগীতের ক্ষেত্রে তার মৌলিক অবদান স্বরলিপির শর্টহ্যান্ড পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং আকারমাত্রিক পদ্ধতি ও স্টাফ নোটেশন পদ্ধতির স্বরলিপি স্থাপন।
নজরুলের গানের সুর নজরুল নিজেই করতেন। তবে মাঝে মাঝে তিনি গান লিখে তা তার স্নেহধন্য কাউকে কাউকে দিয়ে সুর করাতেন। আর সেক্ষেত্রে কমল দাশগুপ্ত ছিলেন তার প্রথম পছন্দ। কমল দাশগুপ্তের চেয়ে বেশি কেউ নজরুলের গানের সুর করেননি। কমল একাই প্রায় ১৫০, কারো মতে ২০০ বা মতান্তরে ৪০০টি নজরুলের গানের সুর করেছেন। নজরুলের গান অসম্পূর্ণ কমল দাশগুপ্তের সুর ছাড়া।
কমল দাশগুপ্ত ছিলেন তার সময়ের সেরা কম্পোজার। নজরুল, রবীন্দ্রনাথের গানের বাইরে যেয়ে, মূলত আধুনিক গানের স্বর্ণযুগের ভিত্তিটা তার হাত ধরেই তৈরি হয়। ১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশকের সুরশিল্পীদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
বড়দা বিমল দাশগুপ্ত এবং কনিষ্ঠ সুবল দাশগুপ্তও সংগীত জগতে প্রতিষ্ঠিত। বড়দা বিমল দাশগুপ্তের জন্ম হয় ১৯১০ সালে। আর সুবলের ১৯১৪ সালে। তিন ভাই, তিন বোনের প্রায় সবাই সংগীত সাধনা করেছেন। শুধু কমল দাশগুপ্ত নয়, পরিবারের সকল সদস্যেই নজরুলের সান্নিধ্যে ছিলেন। কমল, বড়দা বিমল ও ছোট সুবলও নজরুলের গানে সুর করেছেন।
দাদা বিমল দাশগুপ্তের সহকারী হিসেবে এইচএমভি গ্রামোফোন কোম্পানিতে ঢুকে প্রায় ২৩ বছর বয়সে সংগীত পরিচালনা ও গানের সুর করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন কমল। যদিও গ্রামোফোন কোম্পানিতে ঢুকেছিলেন একজন তবলাবাদক হিসেবে। তিনি নিয়মিত ম্যান্ডোলিন ও জাইলোফোন বাজাতেন।
কমলের সুরে এতো বৈচিত্র্য ছিলো যে, তার সমসাময়িক কেউই তার ধারে কাছে ছিলেন না। এই সৃষ্টিশীল মানুষটি খ্যাতির আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন সারাজীবন। আর সাধনা করে গেছেন সংগীতের, করেছেন একের পর এক নতুন নতুন সুরের সৃষ্টি।
যূথিকা রায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, জগমোহন মিত্র, তালাত মাহমুদ ও ফিরোজা বেগমসহ অনেকেই তার কাছ থেকে সংগীতের তালিম নিয়েছেন, সুরারোপে গান করেছেন।
মুক্তির মন্দির সোপানতলে, এনেছি আমার শত জনমের প্রেম, ভালবাসা মোরে ভিখারি করেছে, তুমি কি এখন দেখিছ স্বপন, মেনেছি গো হার মেনেছি, পৃথিবী আমারে চায় রেখোনা বেধে আমায়, আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়, দুটি পাখি দুটি তীরে, কতদিন দেখিনি তোমায়, মেনেছি গো হার মেনেছিসহ এরকম বহু জনপ্রিয় কালোত্তীর্ণ গানের সুরকার এই মহান গুণী শিল্পী।
তিনি যূথিকা রায়কে দিয়ে মীরাবাঈয়ের ভজন গাওয়ালেন। ভজন এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে মহাত্মা গান্ধী যূথিকাকে ‘মীরাবাঈ’ উপাধি দিয়ে দেন আর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় কমল দাশগুপ্তকে ‘ডক্টরেট’ উপাধি প্রদান করে।
১৯৫৮ সালে তার সুরারোপিত গানের সংখ্যা সাত হাজার হওয়ায় এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি তার সিলভার জুবিলী পালন করে। প্রতিমাসে গড়ে ৪৫টি গান সুর করার কৃতিত্ব ছিল কমল দাশগুপ্তের।তিনি বাংলা ছবির সংগীত-পরিচালক হিসেবে চারবার ও হিন্দি ছবির জন্যে একবার, মোট পাঁচবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের পুরস্কার লাভ করেন। সংগীতের ক্ষেত্রে তার মৌলিক অবদান স্বরলিপির শর্টহ্যান্ড পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং আকারমাত্রিক পদ্ধতি ও স্টাফ নোটেশন পদ্ধতির স্বরলিপি স্থাপন।
যে কমল দাশগুপ্ত ১৯৪৬ সালে সাঁইত্রিশ হাজার টাকা আয়কর দেন, গাড়ি ছাড়া চলতেন না, সেই কমল একটা সময় পারিবারিক সঙ্কট ও ব্যাংকের দেউলিয়াত্বের কারণে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৫৫ সালে যখন কমল-ফিরোজার বিয়ে হয়, তখন কমলের বয়স ছিল ৪৩ বছর। বিয়ের চার বছর পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তার নাম হয় কাজি কামাল উদ্দিন। কমল হলেন কামাল। জীবিকার জন্যে শেষজীবনে ঢাকায় একটা মুদিখানার দোকান খুলেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এক প্রকার অনাদরে-অবহেলায়, বিনা চিকিৎসায় ১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই মাত্র ৬২ বছর বয়সে গুণী সুরকার বিদায় নেন এই নশ্বর পৃথিবী থেকে।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................