হিন্দু জাতির বিরুদ্ধে বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে। বলা হচ্ছে,বর্ণহিন্দুরা আর্য - এরা ভারতবর্ষে বহিরাগত ; নিম্নবর্ণের হিন্দুরা অনার্য - তারা ভারতবর্ষের ভূমিপুত্র। বহিরাগত 'মনুবাদী- ব্রাহ্মণ্যবাদী' - সংখ্যালঘু আর্যদের উৎখাত করে, ভারতে মূলনিবাসীদের শাসন কায়েম করতে হবে। মূলনিবাসী কারা ? বলা হচ্ছে, মূলনিবাসী হচ্ছে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা এবং নিম্নবর্ণের হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত মুসলমানরা। মুসলমান ও নিম্নবর্ণের হিন্দুরা মিলে ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ; এজন্য স্লোগান তোলা হচ্ছে, 'দলিত-মুসলিম' - ঐক্য।
হিন্দুদের বড় সমস্যা হচ্ছে, তারা ধর্মের মূলতত্ত্ব 'জ্ঞান'(বেদ) থেকে বিচ্যুত হয়ে,কতগুলো অলীক-উদ্ভট মিথ্যা-তত্ত্বকে অন্ধভক্তিতে ধর্ম হিসেবে মেনে নিচ্ছে। এই অন্ধবিশ্বাসের ফলে তারা জ্ঞানচর্চাকে প্রাধান্য দেয় না। তার উপরে হিন্দু নামধারী কতিপয় সেক্যুলার রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও বুদ্ধিজীবী, পাঠ্যপুস্তকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ইতিহাস বিকৃত করে, অপরিনত বয়স থেকে হিন্দু ছেলেমেয়েদের মাথায় মিথ্যা তথ্য ঢুকিয়ে দিয়ে, স্বজাতি-বিদ্বেষী সেক্যুলার বানানোর নোংরা চক্রান্ত বাস্তবায়িত করে ফেলেছে। 'আর্য' কোন জাতিবাচক শব্দ নয়, গুণবাচক শব্দ। আর্য শব্দের অর্থ হচ্ছে - শ্রেষ্ঠ, গুণী, মহৎ,বিদ্বান ইত্যাদি। দক্ষিণ রাশিয়ার ভোলগা উপত্যকা থেকে ভারতের গাঙ্গেয় উপত্যকার মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী অভিন্ন ধর্ম,ভাষা ও সংস্কৃতির জনগোষ্ঠী ছিল বিদ্যা-বুদ্ধি-বীরত্ব সবদিক দিয়েই পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ - এজন্য এই জনগোষ্ঠীকে বলা হতো 'আর্য'। আর্য বহিরাগত নয়, তারা ভারতের ভূমি পুত্র।
'মনু' এবং 'ব্রাহ্মণ' শব্দে দুটিকে কেন টার্গেট করা হয়েছে, এ বিষয়ে কেবল আলোচনা করাই যথেষ্ঠ নয় ; গণসচেতনতা সৃষ্টি করাও আবশ্যক। আদি পিতা ব্রাহ্মণ 'মনু' -র বংশধর সমস্ত সনাতন হিন্দু বংশানুক্রমে জন্মগত ভাবে ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণ শব্দের অর্থ যার ব্রহ্মজ্ঞান আছে। ব্রহ্মাজ্ঞান ব্যতীত কোন কর্ম নিষ্পন্ন করা সম্ভব নয়। যুদ্ধ - রাজনীতি - ব্যবসা,এমনকি হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ করতেও ব্রহ্মাজ্ঞান লাগে। দ্বিজ- বিপ্র-পুরোহিত হতে বাড়তি গুণ-যোগ্যতা লাগে, কিন্তু ব্রাহ্মণ হতে বাড়তি যোগ্যতা লাগে না। পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য যাবতীয় ব্রহ্মাজ্ঞান, ঈশ্বর মানুষের মস্তিষ্কে প্রদান করেছেন। হিন্দু জাতির মধ্যে ভেদ-বিদ্বেষ টিকিয়ে রেখে ঐক্য বিনষ্ট করতে, এই সব আর্য-অনার্য বিতর্ক, আদিপিতা 'ভগবান মনু স্বায়ম্ভুব' ও 'ব্রাহ্মণ' - বিদ্বেষ প্রচার করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে দলিত - অস্পৃশ্য বা নিম্নবর্ণের হিন্দুরা কোথা থেকে এল?
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ 'বেদ' - এ আছে, জনগণ যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের শাসনকর্তা নির্বাচিত করবে। অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা 'গণতন্ত্র' - সনাতন ধর্মের একমাত্র ধর্মগ্রন্থ 'বেদ' - থেকে এসেছে। প্রাচীন যুগে একদল দুষ্ট শাসক বললো, জ্ঞান নয়, বাহুবল অগ্রগণ্য। তারা বংশাক্রমিক ভাবে রাজত্ব ভোগের সুবিধা নিতে গায়ের জোরে 'বেদ' - বানী অমান্য করে বললো, 'রাজার ছেলে-ই রাজা হবে,সে যোগ্য হোক বা অযোগ্য হোক...'
তখন যে সমস্ত বিপ্র -পুরোহিত - পণ্ডিত,এই অশাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন, রাজশক্তি তাদের সমাজচ্যুত করে অস্পৃশ্য দলিত ঘোষণা করে। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রথম দলিতটি থেকে সমস্ত অস্পৃশ্য তথাকথিত নিম্নবর্ণের হিন্দু ছিল - নীতিবান বিপ্র,পুরোহিত তথা সত্যনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত। পরিবারতান্ত্রিক দুষ্ট-লোভি রাজশক্তি বংশাক্রমিক পেশার ভিত্তিতে জাতিভেদ তথা বংশীয় বর্ণবাদ সৃষ্টি করে, সনাতন হিন্দু জাতিকে হাজার টুকরা করে ফয়দা লুটেতে গিয়ে, জাতির দীর্ঘমেয়াদী সর্বনাশ করে ফেলেছে। এরপর রাজ্য জয়ের জন্য যখন যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়, তখন বিজয়ী রাজা - পরাজিত রাজা ও তাদের অনুগতদের সমাজচ্যুত করে দলিত-অস্পৃশ্য বানিয়েছে। সুতরাং দলিত - নমঃশূদ্র -মহিষ্য দাশ - কপালি - চর্মকার - ভুঞ্জমালী সহ সমস্ত অস্পৃশ্য শ্রেণি অতীতে বংশগত বিশুদ্ধ ব্রাহ্মণ ছিল। তাদের ব্রাহ্মণ সমাজে ফিরিয়ে এনে হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া অত্যাবশ্যক।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবু আলা মওদুদি যখন অবিভক্ত পাকিস্তানকে ইসলামী রাষ্ট্র ঘোষণা করার কথা বলেছিলেন, তখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, 'আপনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভারত যদি হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা করে ,তাহলে ভারতে মুসলমানদের অবস্থা কি হবে?'
উত্তরে আবু আলা মওদুদি বলেছিলেন,'ভারতের মুসলমানদের চিন্তা আপনাদের করতে হবে না, তাদের ব্যবস্থা তারাই করে নেবে।'
দেশ বিভাগের সময় ভারতে যত সংখ্যক মুসলমান ছিল, পাকিস্তানে সমান সংখ্যক হিন্দু ছিল এবং চীনে ঐ সংখ্যক মুসলমান ছিল। আজ ভারতে মুসলমান ২১ কোটি, পাকিস্তান প্রায় হিন্দুশূন্য, বাংলাদেশে হিন্দু দেড় কোটি আর চীনে মুসলমান পৌনে দুকোটি। পাকিস্তান বা বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে হিন্দুরা টিকে থাকতে পারে নি ; কিন্তু ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি থেকে বেড়ে ২১ কোটি হলো, চীনে মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে ২১ কোটি না হয়ে, সাড়ে তিন কোটি থেকে পৌনে দুকোটিতে নেমে এলো কেন ?
চীনের কমিউনিষ্ট নেতা মাও সেতুং ষাটের দশকে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে, ৬ কোটি মানুষ হত্যা করেছিলেন - যা ছিল মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহত্যা। ঐ গণহত্যার শিকার ৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ছিল মুসলমান। চীন যত মুসলমান হত্যা করেছে,তার একশো ভাগের একভাগ মুসলমানও বিগত চৌদ্দশত বছরে অমুসলিমদের হাতে নিহত হয় নি। ইতিহাসের সর্ববৃহৎ মুসলিম-হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে, চীন মুসলিম জাহানের পরীক্ষিত বন্ধু। ভারত মুসলমানদের যত সুযোগ সুবিধা দেয়, কোন মুসলিম রাষ্ট্র মুসলমানদের অত সুযোগ সুবিধা দেয় না - অথচ সেই ভারত আমেরিকা-ইসরাইলের মতো মুসলিম জাহানের প্রধান শত্রু।
নেহেরু-ইন্দিরা-রাজীব-সোনিয়ার কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। সেটা কেমন ধর্মনিরপেক্ষতা - হিন্দুরা ভেবে দেখে নি, ঐ বিষয়ে যথাযথ গবেষণাও করে নি। ভারত রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে, হিন্দু জাতির সাথে চরমতম প্রতারণা। হিন্দুরা ধর্মশিক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে একটি টাকাও পায় না ; মুসলমানদের হাজার হাজার মাদ্রাসার যাবতীয় ধর্মশিক্ষার ব্যয়, ধর্মনিরপেক্ষ ভারত-রাষ্ট্র নির্বাহ করবে। হিন্দুরা তীর্থযাত্রায় একটি টাকাও পায় না, লক্ষ লক্ষ মুসলমান সরকারি টাকায় প্রতিবছর সৌদি আরবে হজ করতে যায়। হিন্দুদের একাধিক বিবাহে নিষেধাজ্ঞা আছে, মুসলমানদের বহুবিবাহ তথা অধিক সন্তান জন্মদান উৎসাহিত করতে বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে, হিন্দু জাতির সাথে এরকম একশো-একটি বৈষম্য বিদ্যমান। এই ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভারতে হিন্দুর সংখ্যা কমিয়ে ৫০% - এর নিচে আনা। ভারতে হিন্দুর সংখ্যা ৫০% - এর নিচে নেমে এলে, ভারত আর ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকবে না - আফগানিস্তানের মতো একবারে দ্রুত হিন্দুশূন্য করে ফেলা হবে। ধর্মনিরপেক্ষতা নামক হিন্দু-বিরোধী ষড়যন্ত্রে স্বাধীন ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা হার ৮৯% থেকে ৭৮% - এ নেমে এসেছে। ৭৮% হিন্দুর কাছ থেকে ভারত রাষ্ট্রের ৯৮% আয়কর আদায় হয়। হিন্দুর কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করে, ঐ অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ ভারত-রাষ্ট্র, মুসলমানদের বিভিন্ন আর্থিক প্রণদোনা দেয়। হিন্দুদের কষ্টার্জিত অর্থে মুসলমানরা বসে বসে খেয়ে, আরামছে বংশবৃদ্ধি করছে - কথায় কথায় রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে আগুন জ্বালাচ্ছে ; এই ধরনের সুযোগ-সুবিধা পৃথিবীর কোন ইসলামী রাষ্ট্রেও মুসলমানরা পায় না। ভারতের যেখানে মুসলমানরা সংখ্যালঘু, সেখানে তারা ধর্মনিরপেক্ষতা-যত মত তত পথ তত্ত্ব প্রচার করছে ; যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে তারা আই এস- এর খেলাফত প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। ১৯৮৯ সালে কাশ্মীর ভ্যালি থেকে তিন লক্ষ হিন্দু পণ্ডিতদের মেরে-কেটে, নারীদের ধর্ষণ করে, রাতারাতি উচ্ছেদ করার সকরুন-স্মৃতি, নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। এখন হিন্দুরা যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে বলে, 'রাষ্ট্র আমাদের কাছ থেকে আয়কর নিয়ে,ধর্মনিরপেক্ষতার নামে হিন্দু জাতিকে ধবংস করে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। অতএব সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করে দাও, নতুবা আয়কর দেওয়া বন্ধ করে দেব।' ― তাহলেই কেবল সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক পদক্ষেপ গৃহীত হতে পারে।
কুঠারের হাতল ছিল না। কুঠার গিয়ে সুবিশাল বৃক্ষের কাছে বলল,'হে বৃক্ষ তোমার শরীরে অফুরন্ত কাঠ,আমাকে একখণ্ড কাঠ দাও,তাতে তোমার বিশাল দেহের কাঠের একটুও কমতি হবে না।'
বোকা বৃক্ষ উদারতা প্রদর্শন করতে গিয়ে, কুঠারের হাতে একখণ্ড কাঠ তুলে দিলো। কুঠারের শরীরে ঐ কাঠ দিয়ে হাতল সংযুক্ত করে, ঐ সুবিশাল বৃক্ষটিকেই সমূলে উচ্ছেদ করে ফেলা হলো।
হিন্দুরা উদারতা - সহিষ্ণুতা - ধর্মনিরপেক্ষতা - যত মত তত পথ প্রভৃতি মুখরোচক শব্দের ধুম্রজালে,শত্রুর কুঠারগুলোতে একের পর এক হাতল নামক কাষ্ঠখণ্ড তুলে দিচ্ছে। শত্রুপক্ষের অগনিত কুঠার একত্রিত হয়ে, হিন্দু জাতির মর্মমূলে আঘাতের পর আঘাত হেনে চলেছে।
হিন্দুজাতি সচেতন হও। জেগে ঘুমানোর দিন শেষ। উঠো - জাগো,অন্ধভক্তি - অন্ধবিশ্বাস পরিত্যাগ করে জ্ঞানমুখী হও। জ্ঞানের চেয়ে বড় শক্তি কিছুই নেই। আগুন যেরকম খাদ্যের সমস্ত বিষ শোধন করে, জ্ঞানও তেমনি সমস্ত সমস্যা সমাধান করতে পারে। সনাতন ধর্মের একমাত্র ধর্মগ্রন্থ 'বেদ' । 'বেদ' - শব্দের অর্থ জ্ঞান। সমস্ত শাস্ত্র 'বেদ' - এর ব্যখ্যা। অর্থাৎ সনাতন ধর্মের ভিত্তি জ্ঞান। সনাতন ধর্মে কোন জাতিভেদ নেই। ঈশ্বরের সমস্ত সন্তান সমান।
রচয়িতা
দেবাশীষ মুখার্জী
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................