ভারতের মুসলমানদের খিলাফত আন্দোলন ছিলো ইসলামের শেষ খিলাফত ও খলিফা রক্ষার আন্দোলন।

আগের লেখাটা লেখার পর মনে হলো সবটুকু বলা হয়নি। মুসলিম ঐতিহাসিক পরম্পরা না জানলে সবটুকু বুঝা যাবে না। মুসলমান কেন অন্যের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গড়তে পারে না সেটা বুঝতে হবে আগে। ভারতের কথাই ধরুন। ভারতের আফগান তুর্কি শাসনের নাম "ইসলামের ইতিহাস" আর "মুসলিম শাসন"। অপর দিকে পুর্তগীজ ফরাসি ইংরেজি শাসন কেবলই ইউরোপীয়ান শাসন, "খ্রিস্টান শাসন" নয়। যখন আপনি ইসলামের শাসন নিয়ে গর্ব করবেন আর কুতুব মিনার দেখিয়ে মুসলমানদের কীর্তি দাবী করবেন তখন শিবাজী অশোক ইত্যাদি রাজাদের হিন্দুত্বের প্রতীক হিসেবে অন্যরা আলাদা জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠা করতে চাইবেই। সমস্যা এখান থেকেই। অথচ হিন্দুত্ববাদ, মুসলিম জাতীয়তাবাদ দুটোই অবাস্তব অসম্ভব। সত্যি এটাই যে ভারতে আফগান তুর্কি আরবীরা এসেছিল আর এসে ভারতীয় হয়ে গিয়েছিল। ইউরোপীয়ানরা সেটা করেনি তারা করেছিল উপনিবেশ কলোনি। কিন্তু মুসলমান নিজেই নিজেকে ভারতের বাইরের কোন সত্তার অংশ মনে করেছে।

ভারতের মুসলমানদের খিলাফত আন্দোলন ছিলো ইসলামের শেষ খিলাফত ও খলিফা রক্ষার আন্দোলন। ভারত তখন পরাধীন। তারা তুরস্কের খলিফার খিলাফত রক্ষায় এখানে আন্দোলন করেছে। কারণ তারা অবিচ্ছিন্ন মুসলিম জাতির অংশ!

দেওবন্দের ভারত ভাগের বিরোধিতা, জামাত ইসলামীসহ অন্যান্য ইসলামী শক্তির পাকিস্তান বিরোধিতা ছিলো ভারতকে "দারুল ইসলাম" বা মুসলমানের দেশ করার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা থেকে। হিন্দুস্তানকে মুসলমানের দেশ করাই ছিলো তাদের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন আসে মুসলমানের সতন্ত্র "ইসলামের ইতিহাস " আর "মুসলিম শাসন " পরম্পরা থেকে। সেই ইতিহাস আমাদের পাঠ্য। স্বপ্ন তো জারি থাকবেই। 

এখন ভারত নাকি আবার ভাগের মুখে! কেন সেটা হতে যাবে? যদি সেটা কোন নৃতাত্ত্বিক জাতি চেতনার কারণে হত কোন যুক্তি ছিলো। কিন্তু ঘুরেফিরে ভারতে সেই মুসলমানের ইতিহাস! পুলকিত বাংলাদেশ পাকিস্তান ভারতের মুসলিমরা। ভারতে মুসলমানরা দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে দেশই ভাগ করে দিবে।  এই ভেবে  শংকিত বাংলাদেশ পাকিস্তান ভারতের হিন্দুরা। এই ভাঙ্গনের কথিত সম্ভাবনার মূল কুশিলব সেই মুসলিম ইস্যু। খ্রিস্টান বৌদ্ধ জৈন শিখ কেউ নয়।

বিষয়টা ঐ ইসলামের ইতিহাস আর মুসলিম শাসন যে দর্শন থেকে আসে সেখানেই আছে।  নইলে বেলজিয়ামে খালি মুসলিম অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কেন সংখ্যাগরিষ্ঠরা? সেখানে মুসলিম নেতারা বলছে ২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপের প্রথম শরীয়া দেশ হবে বেলজিয়াম। বেলজিয়াম পার্লামেন্টে ইসলামী দল নিষিদ্ধের বিল আসল কেন?

থাইল্যান্ডের অতি সামান্য মুসলিম অধিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে কেন জিহাদের বোমা ফাটে?

শ্রীলঙ্কায় সিংহলীজ বৌদ্ধরা কেন মুসলিম বিরোধী?

ইউরোপ জুড়ে খালি মুসলিম অভিবাসী বিরোধীতা কেন? 

চীনে কেন শুধু উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চাইনিজ সরকার নির্যাতন চালায়?

বার্মাতে কেন শুধু রোহিঙ্গা মুসলিমদের খেদানো হয়?

ভারতের মাদ্রাসাগুলো কেমন করে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হবে?  ভারতের বামপন্থীরা কি মনে করেন ভারতের মাদ্রাসায় ভগবৎ সিং জন্ম নেয়? পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ায় মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে মুসলিম ধর্মবেত্তারা এমন মনে করায় যেখানে বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোতে জাতীয় সংগীত বাজানো হয় না। শেখ মুজিবের প্রতি ক্ষোভ থেকে তারা মুজিবকে জাতির পিতা স্বীকার করে না। মুসলমানের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম। অথচ কায়দে আজম জিন্নাহকে জাতির পিতা মানতে তাদের সমস্যা হয়নি। পাকিস্তানে মুনির কমিশন কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা প্রসঙ্গে মুসলমানের সংঙা কি আলেমদের মতামত জানতে কমিশনে ডেকেছিলো পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেমদের। তারা এক প্রশ্নের উত্তরে সবাই একমত হয়েছিলেন, ভারতের মুসলমানদের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ লাগলে অবশ্যই পাকিস্তানের পক্ষ নিতে হবে...। ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র হচ্ছে দেওবন্দ। বাংলাদেশের আলেমরা এখানে এসেই ডিগ্রী নিয়ে যায়। তাহলে ভারতের একজন মুসলমান মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উড়াতে গিয়ে মার খাওয়ার দাবী করায় তাকে বিজেপির দালাল বলছেন কেন? ঘটনাটা কোন দিক দিয়ে অস্বাভাবিক? 

ভারত যদি ভাঙে সেটা মুসলমাদের জন্যই ভাঙবে। এটা বাংলাদেশের সলিমুল্লাহ খানরা জানে। পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা জানে। সার্জিল ইমামরা খালি উছিলার আশায় আছে। তারা চায় হিন্দুত্ববাদীরা আরো বেশি করে গেরুয়া রঙ ধরুক যাতে তাদের এজেন্ডা দ্রুত বাস্তবায়ন হয়। দেওবন্দের হুজুররা চেয়েছিল ভারত অখণ্ড থাকলে এক সময় সংখ্যা দিয়ে দারুল আমানকে দারুল ইসলাম করা যাবে রক্তপাত ছাড়াই। এখন মোদীরা রক্তপাতের রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে শুধু। মানে ভারত উগ্র নম্র যাইই থাক ভেতরে গন্ডগোল থেকে যাবেই। এটা নেহেরু জিন্নাহ জমানায় ভারতের লালট লিখন হয়ে গিয়েছিল। 

এ বিষয়ে কথা শেষ।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted