এই ছবি দেখিয়ে আমাকে হুজুর ও ইসলামের প্রশংসা করতে বলা হচ্ছে!

এই ছবি দেখিয়ে আমাকে হুজুর ও ইসলামের প্রশংসা করতে বলা হচ্ছে!

যতটুকু জেনেছি এটা চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের ত্রাণ বিতরণের ছবি (নাও হতে পারে, অনেকে বলছে এটা ভারতের ছবি) ।


 এই ছবি যারা তুলেছে তাদের প্রচারের উদ্দেশ্যে কি? একটি ইসলামিক দল রিলিফ দিচ্ছে হিন্দুদের। ছবিও তোলা হয়েছে এমন জায়গায় যেখানে কুমাররা মূর্তি বানাচ্ছে। খাঁটি হিন্দু পরিচয় ছবিতে যাতে ধরা পড়ে। চরমোনাই পীরের চেয়ে কি তার মুরিদরা মানবতা বেশি বুঝে? তাদের পীর সাহেব হুংকার দেন, এটা মুসলমানদের দেশ কোন হিন্দু মুশরিকদের দেশ না। যিনি কাফেরদের বন্ধু না করতে মুরিদদের উপদেশ দেন তিনি এখন মানবতার ডালি সাজিয়ে কেন হিন্দু ডেরায়?

এই সব প্রচারণাকে বলা হয় দাওয়াত। কাফেরদের ইসলামের দাওয়াত দেয়া। ইসলামিক দল হিন্দুদের রিলিফ দিয়ে ছবি তুলে বলার চেষ্টা করে ইসলামে কত উদারতা, হুজুরদের কি ভীষণ অসাম্প্রদায়িকতা! তাবলীগ জামাতের কোন দাওয়াতের বয়ানে যদি কেউ যেয়ে থাকেন, তারা সেখানে দাওয়াতের কৌশল হিসেবে শেখায়, অমুসলিমদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে, গায়ে হাত বুলিয়ে, ভাই সম্বধন করে তাদের মন জয় করতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে ইসলামের মধ্যে এমন ভ্রাতৃত্ব আছে যেন এটা দেখে তারা ইসলাম গ্রহণ করতে মনস্থির করে…।
 
প্রশ্ন হচ্ছে এই ত্রাণ বিতরণ ইসলামের কৌশল নাকি স্রেফ মানবতাবাদ? ইসলামের অন্যতম মানবিক বিধান হচ্ছে জাকাত। গরীবদের মধ্যে সম্পদের একটা অংশ দান করা। জাকাত কি অমুসলিম কাফেরদের দেয়া যাবে? উত্তর হচ্ছে, যাবে না। জাকাত পাওয়ার শর্ত হচ্ছে মুসলমান হতে হবে। যদি কোন মুসলমান অভাবগ্রস্ত অমুসলিমকে খাবার দিয়ে সাহায্য করে সেটা একদমই তার ব্যক্তিগত বিষয়। ইসলামে এই বিষয়ে নিষেধ আছে তেমন কথা শরীয়তে নেই। তবে কোন অমুসলিমকে বিপদে সহায়তা না করলে তার জন্য আপনাকে পরকালে জবাবদেহী করতে হবে না। কিন্তু জাকাত না দিলে আপনাকে পরকালে অবশ্যই জবাবদেহী করতে হবে। এই লাইনটা আপনাকে গুরুত্ব দিয়ে মাথায় রাখতে হবে।

তাই এই ধরণের রিলিফ দেয়াটা ইসলামের আকিদা অনুসারে নয়, বরং ব্যক্তির দানের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটাকে ব্যক্তির দান হিসেবে প্রশংসা করা যায় কিন্তু ইসলামিক ব্যানারে এটা হচ্ছে একটা মার্কেটিং। ইসলাম হচ্ছে মিশনারী ধর্ম। যে কোন মূল্যে, ছলেবলে কৌশলে অমুসলিমকে মুসলিম বানানো একজন মুসলমানের জন্য ফরজ। অর্থ্যাৎ ‘ভান’ করা ইসলামের একটি বৈধ বিধান। অমুসলিমদের বাড়িতে দাওয়াতে যাওয়া, তাদের বাড়িতে, মন্দিরে নামাজের সময় হলে নামাজ পড়ার অনুমতি চাওয়া, এরকম ছুৎ মার্গহীনতা প্রদর্শন করে নিজেদের অনন্য সাজানোর কৌশল ইসলামে জায়েজ। প্রকৃত পক্ষে ইসলামে বলা আছে সারা বিশ্বের মুসলমান একটা অভিন্ন দেহের মত যেখানে কোন একটা অঙ্গ আঘাত প্রাপ্ত হলে সেটা সারা দেহে জানান দেয়। মুসলমান অপর মুসলমানের দোষ লুকিয়ে রাখবে। কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্বতা করবে না। তাদের প্রতি সন্দেহ প্রসন করবে। আমাকে দেখান অমুসলিমদের দান করতে ইসলামে কোথায় বলা আছে? এরকম দান করলে কি রকম পুরস্কার দেয়ার কথা বলা আছে? যদি এরকম কথা ইসলামে থাকত তাহলে জাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে অমুসলিমদেরও বিবেচনা করা হত। আপনি যদি কোন অভাবী হিন্দুকে খাবার না দেন তার জন্য কি পরকালে আপনাকে ইসলাম জবাবদেহী করার কথা বলেছে? কিন্তু জাকাত না দিলে আপনাকে জবাবদেহী করার কথা বলা আছে। আর জাকাত কেবলই মুসলমানের জন্য! কাজেই এসব ছবি তুলে ইসলাম আর হুজুরদের মানবিক করার বিজ্ঞাপন এখানে খাটবে না! এগুলো করার উদ্দেশ্য ইসলামের বিজ্ঞাপন করা।

কেউ হয়ত এখন বলতে পারেন তবু এই সময়ে কেউ যদি এগিয়ে আসে আমার উচিত নয় এরকম কিছু লেখা। কিন্তু আমরাই তো ত্রাণ দিয়ে ফটোসেশনের সমালোচনা করি! ত্রাণের গায়ে অমুক কোম্পানির নাম, অমুক ভাইয়ের সালাম নিন, প্রধানমন্ত্রীর দান ইত্যাদি লেখার সমালোচনা করি। তাহলে ইসলামের মার্কেটিংয়ের সমালোচনা কেন করব না? এই যে বিদ্যানন্দ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার, অকাতরে এত মানব সেবা করে যাচ্ছে এর প্রতিদান ইসলাম কিভাবে দিবে জানেন?  মরণের পর সোজা দোযগে পাঠানো হবে তাকে! কাফের যত ভালো কাজই করুক পরকালে তাকে আল্লার আক্রোশ থেকে বাঁচতে পারবে না। কারণ সে ইসলাম গ্রহণ কর মুসলমান হয়নি!  

এত মানবতা যে ধর্মে সে ধর্মের সৈনিকরা মানবতাবাদী সাজে কি বিনা স্বার্থে?

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted