ইরফান খান কি মুসলিম ব্রদারহুডের শিকার?
ইরফান খানের মৃত্যুতে আমার যেটা ভীষণভাবে চোখে পড়েছে, লোকজন এতখানি ভারত প্রেমি হয়ে উঠলো কি করে? এটা তো অষ্টম আশ্চর্যের ঘটনা! ওমর সানীর বক্তব্যকে নিয়ে যে নিউজ ছাপা হয়েছে তার নিচে কমেন্টে লোকজন ওমর সানীকে ধুয়ে ফেলেছে ইরফান খানকে ‘জুনিয়র’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টাকে। ইরফান খানের জায়গায় যদি অন্য কোন ভারতীয় অভিনেতা মারা যেতো তাহলে কি আমরা এই প্রতিক্রিয়া দেখতাম?
ওমর সানী লিখেছে, ‘আমি তাকে (ইরফান খানকে) কোনওদিন দেখিনি, হৃদয় বলছে আমার বন্ধু ও আমার ভাই অসাধারণ অভিনেতা ইরফান খান, চলচ্চিত্রে আমার পরে এসেছে, তারপরও বলি অসাধারণ অভিনেতা, এক কথায় বলব স্যার সমতুল্য, আল্লাহ তোমাকে জান্নাত দিক…’।
ওমর সানির পরে শুধু ইরফান খানই নয়, জাস্টিন ট্রুডো, ডোনাল্ড ট্রাম্প, আঙ্গেলা ম্যার্কেলও রাজনীতিতে এসেছেন। ওমর সানীর থেকে ইনারা সবাই জুনিয়র! তবু তাদেরকে সানী ভাই যে গোণায় ধরেন এটাই বেশি! যাই হোক, ওমর সানীকে নিয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। আমি জানি ইরফান খানের ফ্যান যারা, যারা অভিনয় ও সিনেমার আসল ভক্ত তারা নিখাঁদ জায়গা থেকেই কষ্ট অনুভব করছেন ইরফান খানের জন্য। কিন্তু বিশাল একটা জনসাধারণ ইরফানের জন্য ওমর সানীকে ধুয়ে দিচ্ছে এর কারণ কি? ইরফান খান মুসলমান বলে?
বাংলাদেশী মুসলমানরা প্রিন্সেস ডায়না মারা যাবার পর তাকে বেশ্যামাগি বলেছিলো! এখন বুঝবি কবরে গিয়া! ডায়না প্রচুর জনহিতকর কাজ করতেন। মাইন অপসারণ থেকে এইডস রোগীদের সামাজিকভাবে অচ্ছুৎ করে রাখার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে তাকে দেখা যেতো। দিব্যা ভারতী মারা যাবার পরও একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ছিলো বঙ্গ মুসলিমরা। তখন অবশ্য ফেইসবুক ছিলো না। কিন্তু এই কালে যখন শ্রীদেবী মারা গেলো তখন তাকে দোযগের আগুনে কিভাবে পোড়ানো হবে সেই বর্ণনায় ভরে উঠেছিলো ফেইসবুকের কমেন্টে সেকশন। ঠিক আজই বাংলাদেশের নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু যখন প্রথম আলোতে বলছিলেন দ্রুত করোনা পরিস্থিতি কেটে যেন তাদের কাজের পরিবেশ তৈরি হয়… তখন কমেন্টে তাকে উপদেশ দেয়া হয়েছিলো আল্লাহ খোদার কাজ করতে, তওবা করতে ইত্যাদি…। সেখানে ইরফান খান বেতিক্রম হলো কেন?
এটাকেই বলে মুসলিম ব্রাদারহুড! ইসলামে হারাম এমন কোন কাজে যদি মুসলমানদের অমুসলিমদের থেকে এগিয়ে থাকার মধ্যে কোন সামাজিক মর্যাদা থাকে তাহলে সেটাকেই সমর্থন করতে হবে। তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠদের নিয়ে গর্ব করতে হবে। যেমন বক্সার মোহাম্মদ আলী। হলিউডের মিশরীয় অভিনেতা ওমর শরীফ। ইউরোপীয়ান লীগে খেলা মোসেত ওজিল। ভারতীয় গায়ক মোহাম্মদ রফি।… ইনারা সবাই ইসলামে হারাম এমন কাজেই লিপ্ত। তবু তাদের জন্য ব্রাদারহুডীদের ক্যাম্পেইন দেখবেন সারা বছর। অথচ এই একই কাজগুলো মুসলিম বিশ্বে যারা করছেন সেই তাদেরকেই এইসব ব্রাদারহুডীদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়! আজকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটা অতি সহজে আমাদের চোখে আসে।
ইরফান খান স্রেফ বাংলাদেশী হলেই তাকে আইয়ুব বাচ্চুর ভাগ্যবরণ করতে হত। বাচ্চুর মৃত্যুর পর তার পরকাল নিয়ে বাংলাদেশী মুমিনরা ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো। গোটা অনলাইন বাচ্চু যে এখন কবরে কি আজাব পাচ্ছে তারই প্রতিক্রিয়া! কিন্তু ইরফান খান "হিন্দু ভারতে" অভিনয়ে নিজের একটা আলাদা স্থান করে নিয়েছিলেন যা মুসলিম ব্রাদারহুডের চোখে এটা মুসলিমদের একটা বিজয়! এ কারণেই বাংলাদেশের মুমিনকূল অনলাইনে ইরফান খানকে ভাসিয়ে দিচ্ছে ভালোবাসায়!
অবশ্যই শিল্প আর শিল্পীকে ভালোবাসা মানুষের চোখ আজ সিক্ত ইরফানের জন্য। আমি তাদের কথা এখানে বলিনি। আমি তাদের কথা বলেছি যারা প্রতিনিয়ত শিল্প আর শিল্পীকে দোযগের আজাব বলে নছিয়ত করে যায়…।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................