বাবরী মসজিদ ভাঙ্গায় ‘নিরপেক্ষ মানবতাবাদীরা’ এখন কোথায়?

তুরস্তের পর এবার পাকিস্তানে শিখ গুরুদ্বারকে মসজিদ বানানো হবে! ভারত এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ভারতের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের মুমিন সমাজ বলছে, বাবরী মসজিদকে রামমন্দির বানানোর এটাই হচ্ছে উপযুক্ত জবাব- এবার দেখ কেমন লাগে!



হিন্দু মন্দির বানানোর প্রতিশোধ কি করে শিখ মন্দিরকে মসজিদ বানানো হয় বুঝলাম না! দ্বিতীয়ত, ভারত যদি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হয়ে থাকে তাহলে তাদের শিখ গুরুদ্বার নিয়ে এত মাথা ব্যথা হবে কেন? পৃথিবীতে মাত্র একটি মসজিদকে ভাঙ্গার পর যে পরিমাণ হৈচৈ হয়েছিলো, ভারত জুড়ে হিন্দুদের সঙ্গে মুসলমানরা দাঙ্গা করেছিলো, বাংলাদেশে পাইকারী হারে হিন্দুদের মন্দির বাড়িঘর ভেঙ্গে পুড়িয়ে দিয়েছিলো। হিন্দু নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছিলো একটি পরিত্যাক্ত মসজিদকে ভাঙ্গার কারণে। সেই ঘটনা নিয়ে তসলিমা নাসরিন ‘লজ্জ্বা’ নামে একটি উপন্যাস লিখে ইতিহাসটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। সারা ভারত তখন বাবরী মসজিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলো। সারা বিশ্ব নিন্দা করেছিলো। ভারতকে যতখানি নিন্দা কটুক্তি শুনতে হয়েছিলো খোদ নিজ দেশের মানুষের কাছ থেকে তার এক চিমটি কি পাকিস্তানে হচ্ছে গুরুদ্বারকে মসজিদ বানানোতে? তুরস্কে তো হাইয়া সোফিয়ায় নামাজ পড়তে তুর্কিরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতা করেছে!

 
বাবরী মসজিদের প্রতিশোধ যদি গুরুদ্বারকে মসজিদ বানানো হয় তাহলে ভারতের কুতুব মিনার যেসব হিন্দু ও জৈন মন্দির ভেঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছিলো সেটা কিসের প্রতিশোধ ছিলো?

আসলে এই প্রশ্নগুলোর কোন জবাব নেই একচোখা পৃথিবীর কাছে। পৃথিবী চিরকাল ধড়ীবাজ মিথ্যাচারীদের। এই চিটিংবাজরা ৫০ বছর পর এই গুরুদ্বারকে মসজিদ বানানোর বিষয়ে বলবে, শিখরা এটা বিক্রি করেছিলো মুসলমানদের কাছে। তারপর এটাকে মসজিদ বানানো হয়! তুরস্কে হাইয়া সোফিয়া গির্জা বিষয়ে যে রকম বলা হয়। মুসলমানরা তিন দিন ধরে যে শহরে লুটপাট চালিয়েছিলো, যে শহরের দখল নিয়েছিলো তারা কিনা গির্জা কিনবে অর্থ দিয়ে! কি গাঁজাখুরী গল্প!

ইসলাম যদি অন্য ধর্মের মন্দির, দেব দেবতায় সন্মান জানাত তাহলে মক্কায় থাকা হাজার হাজার প্যাগন মন্দিরের একটিরও ধ্বংসাবশ পাওয়া যেত। ইসলাম যেদিন মক্কা দখল করল সেদিন একটিও প্যাগন মন্দির আস্ত থাকেনি। যে কারণে সেই ঐতহ্য বা ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে ভারতবর্ষে যত আফগান তুর্কি আরবী সেনাপতিরা অভিযান চালিয়েছিলো তারা মন্দির, গুরুদ্বার, মঠ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের এই গুরুদ্বার সম্পর্কেও একই রকম ইতিহাস জানা যায়। মুঘলদের ধর্মান্তকরণ বিষয়টি জড়িয়ে আছে এই গুরুদ্বার নির্মাণে। 

জানা যায়, “১৭৪৫ সালে ভাই তারু সিংহের চরম ত্যাগের কথা মাথায় রেখেই ওই গুরুদ্বারটি তৈরি হয়েছিল। অমৃতসরের বাসিন্দা ভাই তারু সিংহ মূলত কৃষিকাজ করতেন। সে সময় ভারতে মোগলরাজ। পাঞ্জাব অঞ্চলে মোগল তহসিলদারের অত্যাচার বাড়ায় শিখদের একটি দল বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় মোগলরা বহু শিখকে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করছিল বলেও অভিযোগ। এরই প্রতিবাদে মোগলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের দলে নাম লিখিয়েছিলেন তারু সিংহ। ধরাও পড়ে যান। প্রবল নির্যাতন সত্ত্বেও ধর্মান্তরিত হতে রাজি হননি তিনি। এমনকী, তাঁর চুলও কেটে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। যা শিখদের পবিত্র বস্তু বলে মনে করা হয়। ১৭৪৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। ভাই তারুজিকে মনে রেখেই লাহোরে তৈরি হয়েছিল শহীদি আস্থান ভাই তারুজি গুরুদ্বারটি। এখনও ভারত এবং পাকিস্তানের শিখ সম্প্রদায়ের কাছে ওই গুরুদ্বারটি অত্যন্ত পবিত্র”।

তো, বাবরী মসজিদ ভাঙ্গায় ‘নিরপেক্ষ মানবতাবাদীরা’ এখন কোথায়?

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted