সৌদি আরবে পৃথিবীর সবচে' কম ধর্ষণ কেন?
একবার ওদের মতো শরিয়া আদালত প্রয়োগ করে দেখুন, দেশ থেকে ধর্ষণ উঠে যাবে।”
--এই আলাপ অনলাইনে বেশ চাউর হইতেসে দেখলাম। এবার দেখি সৌদি আরবের শরীয়াহ কোর্টের অবয়ব কেমন।
১) ধর্ষণ হইলে ৪ জন স্বাক্ষী লাগবে। কেইস ফাইল করার সময়েই দিতে হবে। নইলে পুলিশ কেইস নিবে না।
২) ওদের এই পেনাল কোড চলে 'হুদুদ' আইনের বলে। শরীয়াহ এর এই হুদুদ আইনে 'কোন নারী স্বাক্ষী গ্রহণযোগ্য না। মানে ৪ জন পুরুষ স্বাক্ষী হইতে পারে। কিন্তু ওইখানে ১ জন নারী স্বাক্ষী থাকলেও ধর্ষণের 'চাক্ষুষ ' স্বাক্ষী এই ক্রাইটেরিয়া ফুলফিলড হয় না।
৩) কোন নারী পুলিশ অফিসার তদন্ত করে না।
৪) হুদুদ আইনের ফলে সৌদি কোর্টে কোন নারী বিচারকও থাকেন না।
৫) মামলা করার সময় ধর্ষিতা মাহরাম অভিভাবক (প্রধানতঃ বাবার) অনুমতি নিয়ে থানায় যাবেন।
এবং বাকী কোর্ট প্রসিডিং এ বাবা কিংবা ভাই সমস্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণের বিধান করবেন।
৬) ম্যারিটাল রেইপ বা স্বামী দ্বারা ধর্ষণের অভিযোগ নাই।
৭) সমস্ত আলামত, ডিএনএ টেস্টে যদি প্রমাণ হয় ইন্টারকোর্স হয়েছে; তাহলে সবার আগে প্রমাণ করতে হবে এটা জেনা নয়। বলপ্রয়োগ হয়েছে। ধর্ষিতা যদি ৪জন স্বাক্ষী দিয়ে প্রমাণ না করতে পারেন যে, উনি এটি মিউচুয়াল সেক্স করেন নাই; বরং উনাকে জোর করে রেইপ করা হয়েছে; তবেই কোর্টের বিচার চলবে। নইলে ধর্ষক ও ধর্ষিতা উভয়েরই বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের দায়ে বেত্রাঘাত থেকে মৃত্যুদন্ড হতে পারে। যেমন আয়েশা দুহোলো শরীয়াহ কোর্টে ৩জন পুরুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন ২০০৮ সালে। ১৩ বছরের এই নারী প্রমাণ করতে পারেন নাই, ৪ জন স্বাক্ষী দিয়ে নাইজেরিয়ার শরীয়াহ কোর্টে। তারপর উল্টো ওই মেয়েকেই পাথর মেরে হত্যা করা হয়। এই নিয়ে নিউজ অনলাইনেই আছে। জাতিসঙ্ঘের নিন্দাসহ।
৮) ৪ জন স্বাক্ষীর কথা বলা হয়েছে, যারা প্রমাণ করবে তারা দেখেছেন- যে মিউচুয়াল সেক্স হয় নাই, রেইপ হয়েছে। তখন ভিক্টিম ছাড়া পাবেন। নইলে জেনার দায়ে রেপিস্ট আর ভিক্টিম উভিয়েরই বিচার হবে। যেমন কাতিফ রেইপ কেইসে রেইপড মহিলাকেও ১০০ বেত্রঘাত দেয়া হয়েছিল, কেননা উনি সন্ধ্যার পর একা গাড়িতে ছিলেন। ৪ রেপিস্টকে দেয়া হয়েছিল ৮০ থেকে ১ হাজার বেত্রাঘাত।
৯) উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষী যেমন নারী দাস-দাসী, গায়িকা এবং সমাজের নিচু ব্যক্তির (রাস্তা পরিষ্কারকারী বা শৌচাগারের প্রহরী ইত্যাদি) সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় কোন কোন প্রদেশের শরীয়াহ কোর্টে। (যারা মূলতঃ হানাফি কোর্ট)
১০) ধর্ষণ হয়েছে স্বীকার করলে ধর্ষকের শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু সে যদি আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে ধর্ষিতাকে বিয়ে করতে রাজি হয়, তবে ঐ কেইস বাতিল করে তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়া হবে।
সৌদি, বাহরাইন, ইয়ামেন, নাইজেরিয়ার বহু শরীয়াহ কোর্টে দেনমোহর পরিশোধ করে বিয়ে করাই ধর্ষণের শাস্তি।
--
এগুলো সব মধ্যপ্রাচ্যে ও তাদের আদলে শরীয়াহ কোর্টসমূহ নিয়ে আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিং। আমার জানার ঘাটতি থাকতে পারে। মুসলিম পেনাল ল' নিয়ে পড়াশুনা করা এক বড় ভাই জানালেন, এগুলো একটাও ইসলামী আইনের বাইরে না।
কিন্তু কোন কোন দেশের কোর্ট দুইজন নারী স্বাক্ষীকে একজন পুরুষের সমকক্ষ ধরে নিয়ে রায় দিয়ে থাকেন সাম্প্রতিক সময়ে।
তবে, তাদের আগে শর্ত থাকবে- তারা উচ্চ বংশীয় ও ন্যায়পরায়ণ নারী।
--
তো
বাংলাদেশে যারা মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি টাইপ আইন কায়েম করে, সৌদি আরবের মতো 'কম ধর্ষণের র্যাংকিং' চান। ধর্ষণ সূচকে সর্বনিম্ন রেইপ হয়, এমন ভদ্র কান্ট্রি হইতে চান। কিংবা এর চাইতে ভালো শরীয়াহ আইন কায়েম করে, দেশে ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে চান। ঢাবির আইনের ছাত্র, ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত জিএস গোলাম রাব্বানীও দেখলাম, শরীয়াহ কোর্টের কথা বলছেন।
তারা আসলে ক্যামন কোর্টের কথা বলছেন? সেখানে স্বাক্ষ্য, শাস্তি, নারী বিচারক এগুলো ইসলামিক পেনাল ল আর হানাফি কোর্টের মধ্যেই হবে?
নাকি এর বাইরেও কিছু আমরা করতে পারি?
এনি আইডিয়া?
লিখেছেন-- Hasnat Kalam Suhan
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................