তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ওসমানের পিতা এরতুগ্রুল কেন ভারতের কাশ্মিরের মুসলমানদের কাছে হিরো?

তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ওসমানের পিতা এরতুগ্রুল কেন ভারতের কাশ্মিরের মুসলমানদের কাছে হিরো? কারণ মুসলিম জাতীয়তাবাদ ছড়িয়ে দিতে তুরস্কের এরদোয়ানের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘এরতুগ্রুল’ টিভি সিরিজ নির্মাণ হয়েছে যা ভারতীয় মুসলমানরা ভারতে ধর্মীয় পরিচয়ে আত্মপরিচয় নির্মাণ করতে চাইছে। এই সিরিজ মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেকগুলো মুসলিম দেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কারণ এই ড্রামা সিরিজ ঐসব দেশে তুর্কি প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে দাবী করেছে। ইসলামী খিলাফতের শেষ হয় এই তুরস্ক থেকে। তারাই ইসলাম কায়েমের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও নিবিড় এমনটা বিগত বছরগুলোতে এরদোয়ান বিশ্ব মুসলমানদের কাছে বুঝাতে চাইছেন। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের একক ইসলামের ডিলারশীপ হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে তুর্কি বিরোধীতা মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে। কিন্তু ভারতের কাশ্মিরে এখন নবজাতকদের নাম রাখা হচ্ছে এরতুগ্রুল! কেন? কারণ ভারতে মুসলমানরা ‘দারুল ইসলাম’ কায়েম করবে।

এ জন্য মনে হয় দেশভাগ যখন হয়েছিলোই তাহলে হিন্দু মুসলমান একটা একটা করে গুণে দুই দেশে কেন রাখা হলো না? পাকিস্তানে শুধুই মুসলমান আর ভারতে কেবলই হিন্দু বৌদ্ধ শিখ খ্রিস্টান জৈন ইহুদী পারসিক…। তাহলে কি হত? এরদোয়ানের মুসলিম জাতীয়তাবাদ কি এখানে বিক্রি হত? এরতুগ্রুল টিভি সিরিজ কি মার্কেট পেতো? তখন তো মুসলমানরা শিয়া সুন্নীই শুধু নয়, যার যার নৃতাত্ত্বিক জাতি পরিচয়ে মারামারি কাটাকাটি করতে থাকত। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানকে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদে এক রাখতে পারেনি কারণ উভয়েই মুসলমান। তারা জাতিগত স্বার্থে আলাদা হয়ে গেছে। মধ্যপাচ্যে এরদোয়ান ইসলামের বটিকা বিক্রি করতে পারে না কেন? কারণ ওখানে তুর্কি ও আরব শেখদের মুসলমান পরিচয়টি গৌণ আঞ্চলিক রাজনীতি ও স্বার্থের কারণে।

ফেইসবুকে ভারতের একজন কবির নাম দেখেছিলাম তৈমুর। সাইফ আলী খান তার ছেলের নাম তৈমুর রাখায় যখন চারদিকে সমালোচনা তখন সেই ভদ্রলোক ভারতের মুসলমানদের নাম তৈমুর রাখার কারণ বলেছিলেন। এই নাম নাকি তাদের প্রতিদিন পরাজিত নির্যাতিত হওয়ার বিপরীতে সাহস আর শক্তি যোগায়…। অর্থ্যাৎ যে তৈমুর লং ভারতে কাফেরদের কচুকাটা করে পিড়ামিড় তৈরি করেছিলেন বলে ইতিহাস আছে, যে চরম লুন্ঠন, ধর্ষণ আর বিধর্মী ঘৃণা নিয়ে তৈমুর লং ভারত আক্রমন করেছিলেন সেই রকম ঘৃণা দিয়ে প্রতিবাদ? তার মানে কাশ্মিরের নবজাতকদের নাম এরতুগ্রুল রাখা হচ্ছে এরতুগ্রুল বা তার ছেলে ওসমানের মত ওসমানিয়া খিলাফতের স্বপ্ন দেখে?

বিবিসি কাছে কাশ্মিরের দুজন মুসলিম গবেষকের একজন ইকরামুল হক এই টিভি সিরিজের প্রতি মুসলমানদের ব্যাপাক আগ্রহ আর নবজাতকের নাম রাখার বিষয়ে বলেছেন, ‘আজকের ভারতবর্ষে মুসলিমরা যে আত্মপরিচয়ের সঙ্কট বা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছেন, সেই শূন্যতার জায়গা থেকেই হয়তো তারা ভিনদেশি এই ঐতিহাসিক উপাখ্যানের সঙ্গে নিজেদের অনেকটা 'রিলেট' করতে পারছেন - আর সে কারণেই এরতুগ্রুল এদেশেও এতটা জনপ্রিয় হয়েছে’।

একদমই ডাঁহা মিথ্যা কথা। এইসব শিক্ষিত মুসলিমগুলিও সব ছুপা মুসলিম জাতীয়তাবাদী।  ভারতে মুসলমানরা কবে থেকে আত্মপরিচয়হীনতায় ভুগেছে? অসহযোগ আন্দোলনের সময় মুসলিম জাহানের শেষ খিলাফত এই ওসমানিয়া খিলাফত রক্ষার্থে ভারতীয় মুসলমানরা ‘খিলাফত আন্দোলন’ করেছিলো না? তারা তুস্কের শাসককে নিজেদের শাসক বলেছিলো। তারা গান্ধির স্বাদেশী আন্দোলনে যোগ দেয়া প্রস্তাবে শর্ত দিয়েছিলো যদি কংগ্রেস তুরস্কের খিলাফতের দাবীর সঙ্গে একমত হয় তবেই তারা এই আন্দোলনে যোগ দিবে! তারা পরিস্কার করেই বলেছিলো ভারতের মুসলমানরা বিশ্বের অন্যান্য মুসলিমদের সঙ্গে এক অভিন্ন জাতি সম্পর্কে জড়িয়ে আছে। তারা ইসলামের হুকুমত বা খিলাফতের একজন খলিফার অনুগত…।

এই রকম ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে "মুসলিম উম্মাহ" বলা হচ্ছে আহ্লাদে গদগদ হয়ে। "মুসলিম বিশ্ব" বলে পৃথিবীকে ধর্মীয় বর্ণবাদে বিভক্ত করে ফেলছে। তবু এটাকে কখনোই জায়নবাদের মত কট্টর ইহুদী জাতীয়তাবাদের মত করে দেখা হয়নি। হিন্দুত্ববাদের মত করে দেখা হয় না। অবশ্যই মুসলিমদের এই মুসলিম জাতীয়তাবাদকে হিন্দুদের ‘হিন্দুত্ববাদের’ মতই সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট শক্তি হিসেবে দেখতে হবে। জায়নবাদের মত করে দেখতে হবে।  ভারতের সেক্যুলার প্রগতিশীলরা হিন্দুত্ববাদের বিরোধীতা করবেন কিন্তু চোখের সামনে মুসলিম যুবকদের মুসলিম জাতীয়তাবাদের চর্চা দেখেও চোখ বুঝে থাকবেন তা তো হবে না! ‘মুসলিম জাতীয়তাবাদকে’ খোলাখুলি ঘৃণ্য ফেসিস্ট বলে ঘোষণা করুন…।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted