ভূরিশ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য, রানী ভবশঙ্করী নিজেই এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন।

পাঠান সেনাপতি ওসমান খানের নেতৃত্বে পাঠান সেনাবাহিনী এবং বিশ্বাসঘাতক চতুর্ভুজ চক্রবর্তীর সঙ্গে থাকা সেনাবাহিনী একসঙ্গে বাশুড়িতে আক্রমণ করেন।
কিন্তু রানী ভবশঙ্করীর সেনাবাহিনী পূর্বেই প্রস্তুত ছিল।ফলে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় দুই বাহিনীর মধ্যে। রানী ভবশঙ্করী নিজেই এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। রানী ভবশঙ্করীর সৈন্যরা যাদেরকে তিনি নিজে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, ক্ষিপ্রতার সাথে পাঠান সৈন্যদেরকে কচুকাটা করেন। সমসাময়িক পাওয়া সূত্র অনুযায়ী, রানী ভবশঙ্করী নিজে হাতির পিঠে চেপে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। এই যুদ্ধে বাগদি ও চন্ডাল সেনারা অসীম বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। কয়েক ঘন্টার যুদ্ধে পাঠান সেনাবাহিনী পরাজিত হয় এবং পাঠান সেনাপতি ওসমান খান পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। পরে তিনি ফকিরের ছদ্মবেশে উড়িষ্যা পালিয়ে যান। এই যুদ্ধের পরে রানী ভবশঙ্করীর রাজ্যাভিষেক সম্পন্ন হয়।

রানী ভবশঙ্করীর বীরত্বের কথা, পাঠান সেনাদের কচুকাটা করার কথা মুঘল সম্রাট আকবরের কানে পৌঁছায়। এই খবর আকবরের কাছে পৌঁছনাের পর আকবর ভুরিশ্রেষ্ঠ রাজ্যের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তুলতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এর পিছনেও কারণ ছিল। সেই সময় অবিভক্ত বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা- যাকে সুবে বাংলা বলা হতাে, তার সুবেদার ছিলেন মান সিংহ। কিন্তু সেই সময়ে অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন অংশে পাঠানদের অত্যাচার ছিল খুব। পাঠানরা মুঘল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্রে হামলা ও লুটপাট চালাতাে। এ নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলেন আকবর- কারণ বাংলা ছিল সােনার ডিম দেওয়া হাঁস। কারণ বাংলা সেসময় ছিল সােনার বাংলা। বাংলা থেকে বিশাল অংকের রাজস্ব আসতাে মুঘল কোষাগারে। কিন্তু রানী ভবশঙ্করী তাঁর অসাধারণ রণকৌশল ও বীরত্বে সেই পাঠান সৈন্যদের পরাজিত করেছিলেন। ফলেআজও হাওড়া জেলার উদনারায়নপুরে রানী ভবশঙ্করী প্রতিষ্ঠিত রায়বাঘিনী মন্দির রয়েছে। আজও গড় ভবানীপুর রয়েছে। শুধু আমরা ভুলে গিয়েছি আমাদের গৌরবময় লড়াইয়ের অতীত কথা। মনে রাখতে হবে অতীত ছাড়া ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে না।

(সমাপ্ত)


0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted