ক্ষমা...................................................!!!!!
‘ক্ষমা’ মাত্র দুটি অক্ষরের শব্দ । কিন্তু এর গভীরতা, বিস্তার, ও বিরাটত্বের যেনো কোনো সীমা নেই । গভীরতার নিরিখে মনে হয় যেনো এক বিশাল সাগর, বিস্তারে মনে হয় যেনো সীমাহীন আকাশ এবং বিরাটত্বের বিচারে একমাত্র তুলনীয় হতে পারে যেনো হিমালয় । ‘ক্ষমা’ নিয়ে কাব্য বা সাহিত্য রচনার বাসনা বা ধৃষ্টতা কোনোটাই আমার নেই । নেই, কারণ সে সাধ্য আমার নেই । ‘ক্ষমা’ সম্পর্কে এটুকুই শুধু বলতে চাই এটা মানবের এমন একটা মহা বা মহৎ গুণ যার তুলনা হয় না এবং যার সঙ্গে কিছুরই তুলনা করা চলে না, তুলনা টানা যায় না । ‘ক্ষমা’কে বোধ করি শুধু ক্ষমা শব্দ দিয়ে বিশেষ কিছুই বোঝা যায় না । আসলে এটা ঠিক সাধারণভাবে বোঝার বিষয় যতটা তার চেয়ে অনেক বেশী উপলব্ধির বিষয় ।
যথার্থভাবে ‘ক্ষমা’কে উপলব্ধি করতে হলে মানবের অন্যান্য গুণবাচক বা দোষবাচক শব্দগুলিকে ওর আশে-পাশে কিংবা অগ্রে-পশ্চাতে স্থাপন করা আবশ্যক । সততা, সহনশীলতা, ভালোবাসা, ক্ষোভ, ক্রোধ, ঘৃণা, প্রতারণা প্রভৃতি দোষগুণগুলির মাঝে ‘ক্ষমা’কে স্থাপন করলে এই শব্দটি সম্পর্কে অনেকটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হতে পারে । তবুও তাতেই যে ‘ক্ষমা’ সম্পর্কে সম্যক ও সম্পূর্ণ ধারণা বা উপলব্ধি পাওয়া যাবেই এমনটাও বোধ করি খুব জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয় । ‘ক্ষমা’র সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও সম্পৃক্ততা রয়েছে আরো কয়েকটি মানবিক গুণের, যেমন মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, নিঃস্বার্থপরতা, উদারতা, দয়া, মায়া, মমতা, স্বার্থত্যাগ, আত্মত্যাগ প্রভৃতি ।
যে কোনো ‘ভালো’ গুণই অর্জন করতে হয়, অর্থ ও ধন-সম্পত্তির মতে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায় না । আর ‘ক্ষমা’ এমন একটি মহৎ গুণ যা সহজে, স্বচ্ছন্দে ও অনায়াসে অর্জন করা একেবারেই অসম্ভব । এটাকে অর্জন করতে হলে একই সঙ্গে অনেকগুলি শুভ গুণ অর্জন ও অনেকগুলি দোষ-ত্রুটি বর্জন করা অপরিহার্য । ক্ষুদ্র হোক কিংবা ক্ষদ্রাতিক্ষুদ্রই হোক, কোনোরূপ স্বার্থসিদ্ধির বাসনা যার মধ্যে আছে তার দ্বার ক্ষমার নাগাল পাওয়া প্রায় অসম্ভব ।
অসহিষ্ণুতা, পরশ্রীকাতরতা, বিদ্বেষ, লোভ-লালসার সঙ্গে আর যারই সহাবস্থান সম্ভব হোক না কেনো, ক্ষমার সঙ্গে কোনো মতেই সম্ভব নয় । ক্ষমা শুধু শ্বাসকার্য সম্পাদন করতে পারে প্রেম, ভালোবাসা, উদারতা, সহিষ্ণুতা ও ত্যাগের পরিবেশে । ‘ক্ষমা’র তো চরম আড়ি হিংসার সঙ্গে । হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ ও ঘৃণার পরিবেশ তো ‘ক্ষমা’র জন্যে সাক্ষাৎ মৃত্যুপুরী ।
‘ক্ষমা’ নিয়ে সকলেই এতো টানাটানি করে এবং এর ওপর ‘স্বত্ব’ আরোপ করে যে মনে হয় যেনো এই সময়ের মানব সমাজটা যেনো শুধুই ক্ষমাময়, আর সর্বত্রই যেনো ক্ষমার ছড়াছড়ি, হিংসা-বিদ্বেষ-ঘৃণা-ক্রোধ-লোভ-লালসা যেনো মানব সংসার থেকে চির বিদায় নিয়ে বনবাসে চলে গেছে । কিন্তু বাস্তবটা ঠিক এর বিপরীত । সেজন্যেই ‘ক্ষমা’ সম্পর্কে একটু দীর্ঘ ভুমিকার অবতারণা করতে হলো । যাঁদের অন্তরে অনুবীক্ষণ যন্ত্র সহযোগেও ক্ষমার সন্ধান পাওয়া দুষ্কর তাঁরাও অবলীলায় মানুষকে ক্ষমা করার উপদেশ প্রদান করে থাকেন । যাঁরা প্রতি পদক্ষেপে বিদ্বেষ ও ঘৃণার বীজ বপন করেন তাঁরাও দাবী করেন, ‘ক্ষমা আমাদের পরম ধর্ম’ ।
যাঁরা উচ্চিকিত কণ্ঠে হত্যাকারীকে ‘আমাদের সম্পদ’, ‘আমাদের গর্ব’ বলে তাদের মাথায় ‘বীর যোদ্ধা’র শিরোপা প্রদান করে তাঁরাও নির্দ্বিধায় নীতিবাক্য শোনান – ‘হত্যা করা মহাপাপ’, ‘ক্ষমা পরম ধর্ম’ ইত্যাদি । এভাবেই অবিরাম বেপরোয়াভাবে ‘ক্ষমা’ শব্দটি মানুষের মুখে মুখে ঘোরে । ফলে ‘ক্ষমা’ শব্দটি এখন অতি ব্যবহারে এবং অবশ্যই অপব্যবহারে বড়ো বিবর্ণ ও ক্লীশে । ফলে ‘ক্ষমা’র মহত্ত্ব পুনরুদ্ধারের জন্যে নিবন্ধের প্রারম্ভে ‘ক্ষমা’ নিয়ে একটু বিশদে আলোচনায় যেতে হলো ।
আমরা প্রায়শঃই লক্ষ্য করি যে যাঁদের মুখে ‘ক্ষমা’ কথাটি একেবারেই অশোভনীয় মনে হয় তাঁরা এমন ভাণ করে যেনো ‘ক্ষমা’র উপর একমাত্র তাঁদেরই অধিকার রয়েছে ।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................