দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গিবাদ যে চীনের অর্থায়ানে পরিচালিত হয়

দক্ষিণ এশিয়ায় ইস লামিক জঙ্গিবাদ যে চীনের অর্থায়ানে পরিচালিত হয় সেটা তালেবানদের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তে একাডেমিকভাবে রেকর্ড হয়ে থাকল। আফগানিস্থানের তালেবানরা জানিয়েছে তারা চীনের উইঘুর মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিবে না। কারণ চীন হচ্ছে তাদের বন্ধু।

বাংলার তালেবানদের বাইতুল মোকাররম থেকে উইঘুর মুস লিমদের জন্য মিছিল বের করাটা এভাবে আফগান তালেবানরা পা দিয়ে দলিত করে ফেলল কেন? কারণ আফগানিস্থানের একের পর এক স্থান তালেবানদের দখল করে নেয়ার সময়ই চীন আফগানিস্থান পুনর্গঠনে বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে। বুঝাই যাচ্ছে মার্কিন হস্তক্ষেপের পর তালেবানদের টিকে থাকতে এতগুলি বছর অর্থ কারা দিয়েছে। কাজেই আফগান তালেবানরা তাদের আব্বাহুজুরের ঘরের জি হাদীদের যে পুছবে না বলাই বাহুল্য।

ড্রাগ ডিলারের নিজের ছেলে ড্রাগ আসক্ত হয়ে যাওয়ার মত চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুস লিমরা আল কায়দা সমর্থিত ‘তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট’ নামের সশস্ত্র জি হাদে আক্রান্ত। চীন নিজে ভারত পাকিস্তানের ছোট বড় ইস লামিক জঙ্গিদের টাকা পয়সা দিয়ে পেলেপুষে বড় করলেও নিজের দেশের ইস লামিক জঙ্গিদের টিটমেন্ট করেছে নজিরবিহীন। মস জিদকে বাথরুম করেছে, সংশোধন সেন্টার বানিয়ে মুস লিমদের ইস লাম থেকে দূরে রাখছে, দাড়ি রাখা ও রোজা রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। এসব ব্যবস্থা দেখেও পাকিস্তান তুরস্ক সৌদি আরব চীন সম্পর্কে বলেছে তারা যা করছে নিজের নিরাপত্তার জন্য করছে। আফগানিস্থানের তালেবানদের বিজয়ে বঙ্গের উল্লসিত মুমিনের দল এবার দেখল তাদের পেয়ারা মুজাহিদরাও ইউঘুরদের পশ্চাদেশ দেখাচ্ছে।

মজটা হচ্ছে আমেরিকাকে জি হাদীদের সৃষ্টিকারী বলে বলে সকলে যতখানি চিত্কার চেঁচামেচি করে চীন যে দক্ষিণ এশিয়ার ইস লামিক জি হাদীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সেটি চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে যায়। কমিউনিস্ট চীন যে ভারতে ‘গজওয়াতুল হিন্দ’ ঘটানোর জন্য ডজনখানেক জঙ্গি গ্রুপকে অস্ত্র অর্থ দিয়ে থাকে, পাকিস্তানকে কাশ্মির বিষয়ে উশকানি দিয়ে ভারত কেন্দ্রিক ইস লামিক জঙ্গিবাদকে তারা সতত ব্যস্ত রাখে এটা দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে বিশ্লেষণকারী পন্ডিতরা চেপে যান কেন?

এদিকে তালেবানী শাসনে আফগান নারীরা আবার গৃহবন্দি জীবনে চলে যাবার শংকায় কয়েকটি জেলায় নারীরা অস্ত্রসহ মিছিল করে তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এই অসম যুদ্ধ আদৌ ঘটবে কিনা সেটি আলাপ নয়। আলাপ হচ্ছে আফগান নারীদের তালেবান ইস লামী শাসনে যে অন্ধকাচ্ছন্ন যুগে নিয়ে যাবে তা নিয়ে কারোর কোন মাথা ব্যথা নেই! আপনি কি এ বিষয়ে অরুন্ধতী রায়ের কোন উদ্বেগ শুনেছেন? বাংলাদেশী কোন বিশ্লেষকের লেখায় দু:খবোধ দেখেছেন? উল্টো তাদের কেউ কেউ বলছে আফগানরা তাদের দেশে কি ধরণের শাসন হবে সেটার সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখে? তারা বলতে চাচ্ছে আফগানরা তালেবানদের চায় এতে আমাদের সমস্যা কোথায়? যদি তাই সত্য হয় তাহলে ভারতে নরেন্দ্র মোদির মত হিন্দুত্ববাদীকে দুইবার নির্বাচিত করে ভারতীয়রা কি দোষ করল? ভারতকে সেক্যুলার থাকতেই হবে না হলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য জায়গায় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা দেখা দিবে। এরকম বলা বিশ্লেষকরা এখন কেন বলছেন না, আফগানিস্থানে তালেবানরা ক্ষমতা নিলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে অমুস লিম জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হয়ে উঠবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে? আমরা ভালো করে জানি যে তারা এগুলো বলবে না। তালেবানদের বিজয়ে তাদের কারো কারোর চাপা হাসি আড়াল করা যাচ্ছে না। মিশেল ফুকো ইরানের ইস লামিক বিপ্লবীদের বুকে টেনে নিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো ইরানকে শরীয়া শাসনে নিয়ে গিয়ে, নারীদের সপ্তম শতাব্দীর চিন্তায় অন্তপুরে আটকে রেখে খোমিনির যে নতুন ইরানের যাত্রা তাকে তিনি সমর্থন করছেন কেন? ফুকো সাহেবের জবাব ছিলো, ‘ইরানের এই বিপ্লবকে ‘ইসলামিক’ বা ‘মৌলবাদী’ তকমায় না ফেলে এটাকে সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে ইরানের মহান এক বিপ্লব হিসেবে দেখা উচিত’।

আমি জানি কারওয়ান বাজারের অনেক উপ-সম্পাদকই তালেবানদের বিজয়কে এক মহান বিপ্লব হিসেবেই দেখে। সলিমুল্লাহ কলিমুল্লাহরা যে লুঙ্গি ডান্স দিচ্ছে আড়ালে সেটাও টের পাওয়া যায়। চীনের স্বার্থ যেদিন যেদিকে ঘুরে যাবে সেদিন সলিমুল্লা কলিমুল্লারা মাথায় বাক্স বগলে ছাতা নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে বের হবে। কারণ ইস লাম নামের গাছটায় চীন জল সিঞ্চন করছে নিজের সাম্রাজ্যবাদকে শক্তিশালী করতে। ভারতকে টাইট করতে। দক্ষিণ এশিয়ায় একক সুপার পাওয়ার হতে। প্রয়োজন পড়লে চীন দুনিয়া থেকে ইস লামকে শেখড়সহ উপড়ে ফেলবে। বাকী পৃথিবীর ‘মুস লিম উম্মাহরা’ তখন যার যার নগদ নারায়ণ রক্ষার্থে পশ্চাদেশ দেখিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।

#সুষুপ্তপাঠক
#susuptopathok

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted