ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসীর বিখ্যাত 'স্বর্ণ মন্দির' নামে খ্যাত কাশি বিশ্বনাথ মন্দিরের ১৫.৫ মিটার উঁচু চূড়াটি আগাগোড়া সোনায় মোড়া । ১৮৩৫ সালে পাঞ্জাবের শিখ সম্রাট রঞ্জিত সিংহ মন্দিরের চূড়াটি ১,০০০ কিলোগ্রাম সোনা দিয়ে মুড়ে দেন ।
প্রধান মন্দিরের মধ্যে একটি ৬০ সেন্টিমিটার উঁচু ও ৯০ সেন্টিমিটার পরিধির শিবলিঙ্গ রুপোর বেদীর উপর স্থাপিত । ছোট মন্দিরগুলোর নাম কাল ভৈরব, দণ্ডপাণি, অবিমুক্তেশ্বর, বিষ্ণু, বিনায়ক, শনিশ্বর, বিরূপাক্ষ ও গৌরী । কাশির বিশ্বনাথ মন্দিরের বিশেষত্ব হল, এখানকার একেকটি মন্দির একেক রকম শৈল্পিক ধাঁচায় তৈরী ।
মন্দিরের মধ্যে জ্ঞানবাপী নামে একটি ছোট কুয়ো আছে । মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব যখন এই মন্দির আক্রমণ করেন তখন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত স্বয়ং জ্যোতির্লিঙ্গটি রক্ষা করার উদ্দেশ্যে সেটি নিয়ে এই কুয়োয় ঝাঁপ দিয়েছিলেন ।
অতীতে বহুবার মুসলমানরা এই মন্দিরটি ধ্বংস করে ও পরে হিন্দুদের দ্বারা পুনর্নির্মিত হয় । আদি মন্দিরটি এই মসজিদের জায়গাটিতেই অবস্থিত ছিল । বর্তমান মন্দিরটি ১৭৮০ সালে ইন্দোরের মহারানি অহল্যা বাই হোলকর তৈরী করে দেন ।
স্কন্দ পুরাণের কাশীখণ্ডে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায় । একাদশ শতাব্দীতে হরিচন্দ্র এই মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন ।
১১৯৪ সালে মুহম্মদ ঘোরি বারাণসীর অন্যান্য মন্দিরগুলোর সঙ্গে এই মন্দিরটিও ধ্বংস করে দেন । এরপরেই আবার মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয় ।
এরপর কুতুবুদ্দিন আইবক মন্দিরটি ধ্বংস করেন । তার মৃত্যুর পর মন্দিরটি আবার নির্মিত হয় ।
১৩৫১ সালে ফিরোজ শাহ তুঘলক মন্দিরটি আবার ধ্বংস করেন । ১৫৮৫ সালে আকবরের রাজস্বমন্ত্রী টোডরমল আবার মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন ।
এরপর ১৬৬৮-৬৯ সালে আওরঙ্গজেব পুনরায় মন্দিরটি ধ্বংস করে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরী করান । এই মসজিদটি আজও মন্দিরের পাশে অবস্থিত । মসজিদের পিছনে পুরনো মন্দিরের কিছু ধ্বংসাবশেষ আজও দেখা যায় ।
এই বছরের ৮ ই এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) মন্দির ও মসজিদ সংলগ্ন জমিতে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে(ASI) খোঁড়াখুড়ির অনুমতি দেয় বারাণসীর একটি আদালত । এর জন্য পাঁচ সদস্যের একটি এ.এস.আই. প্রতিনিধি দল গঠন করে শীঘ্রই ঐ এলাকা ঘুরে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয় । বহু বছর ধরে দাবী করা হচ্ছে, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ভেঙেই তৈরী হয়েছিল জ্ঞানবাপী মসজিদ । অর্থাৎ, বাবরি মসজিদের মতই মন্দিরের ভাঙা অংশ কাজে লাগানো হয়েছিল মসজিদ তৈরী করতে । বিতর্কটি অবশ্য বেশ পুরনো । তবে তা ফের মাথাচাড়া দিয়েছে গত বছর ডিসেম্বর মাসে বিজয় শঙ্কর রাস্তোগি নামের একজন আইনজীবী বারানসীর এক আদালতে আবেদন করার পর থেকে । এই আবেদনের মূল বিষয় ছিল, জ্ঞানবাপী মসজিদের গোটা চত্বর খুঁড়ে দেখুক এ.এস.আই এবং একই সঙ্গে আবেদনে এই দাবী করা হয় যে, ২০১৯ বছর আগে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির তৈরী করেন মহারাজা বিক্রমাদিত্য । কিন্তু ১৬৬৪ সালে ঐ মন্দির ধ্বংস করেন মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব । শুধু তাই নয়, মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে তৈরী করা হয় মসজিদটি । তাই কাশী বিশ্বনাথ মন্দির চত্বরে থাকা ঐ মসজিদ সরিয়ে দেওয়া হোক এবং ঐ জায়গা মন্দির কমিটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক ।
উল্লেখ্য, এই নিয়ে আগেও আদালতে আবেদন করা হয়েছে । ১৯৯১ সালেও অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার পক্ষ থেকে এরকম একটি আবেদন করা হয় আদালতে । ঐ আবেদনে বলা হয়, জ্ঞানবাপী মসজিদে পুজো করার অনুমতি দিতে হবে । কারণ, ঐ মসজিদ তৈরী হয়েছিল মন্দিরের ভাঙা অংশ দিয়ে ।
তবে কাশি বিশ্বনাথ করিডোড় তৈরী করতে গিয়ে প্রশাসনিক উদ্যোগে মূল মন্দির পরিসর থেকে গঙ্গাঘাট অবধি একটি বিরাট এলাকা পূনর্নিমান করতে গিয়ে আবিষ্কৃত হয়, প্রায় কয়েকশ মন্দিরের মূল কাঠামো ঢেকে দিয়ে তার উপর নতুন করে ইসলামী স্থাপত্যে বাড়ি বানানো হয়েছে ; যার অনেকাংশেই বর্তমানে পুনরুদ্ধার হয়েছে । তবে ইসলামী আগ্রাসনের নিদর্শন জ্ঞানবাপি মসজিদ কবে পুনরায় অতীতের মন্দিরের আদলে ফিরে যায় সেটাই এখন মূল প্রত্যাশা ।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................