একজন লন্ডন প্রবাসী মার্ক্সবাদী লিখেছেন, “ভারতের প্রখ্যাত মার্ক্সবাদী-ঘূর্ণিত-মানবতাবাদী বিপ্লবী দার্শনিক বাঙালী হিন্দু বংশোদ্ভূত মানবেন্দ্র নাথ রায় তাঁর Historical Role of Islam: An Essay on Islamic Culture রচনাতেও বলে গিয়েছেন বিশ্বের বৈপ্লবিক পরিবর্তনে ইসলামের ভূমিকা কী। তিনি আক্ষেপ করেছেন ইসলাম সম্পর্কে ভারতীয় হিন্দুদের অজ্ঞতা ও অনীহা লক্ষ করে।“
চিন্তা করেন, মার্ক্সবাদীদের আপনারা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কমরেড হিসেবে জানলেও ভারত স্পেনের ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদে উনারা ‘বৈপ্লবিক পরিবর্তন’ দেখেন এবং ভারতের হিন্দুদের ‘ইসলাম’ সম্পর্কে অনীহার জন্য হতাশা প্রকাশ করেন! তাহলে দুইশো বছরের ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বৈপ্লবিক পরিবর্তনকে কেন তারা অস্বীকার করেন? ইংরেজরা যদি এদেশে না আসত তাহলে মুসলমান নবাব বাদশাহর যুগ যদি আরো কয়েকশো বছর দীর্ঘ হতো তাহলে কি ‘বেগম রোকেয়া’ জন্ম নিতে পারতেন? তার আগেই পর্দাশীন নারী হিসেবে অন্তঃপুরে বাচ্চা জন্ম দিতে দিতেই তাঁকে মরে যেতে হতো। কোন কমরেডদের কি কখনো স্বীকার করতে দেখেছেন ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনে ইংরেজদের আগমনও ভারতের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য দরকার ছিলো। তারা সেটা বলবে না। কারণ তাদের পবিত্র কিতাবগুলিতে একমাত্র ‘কাফের’ হচ্ছে ইউরোপীয়ান সাম্রাজ্যবাদগুলো। সাতশো বছরের ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদকে কি অবলীলায় তারা সাফসুতর করে ফেলে!
ভারতে ‘মুসলিম বিদ্বেষ’ একটি অতি চর্চিত অতি কথিত ও বারবার বলে বলে একমাত্র সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। আপনি কখনোই বাংলাদেশ পাকিস্তান জুড়ে ‘হিন্দু বিদ্বেষ’ নিয়ে তাদের কথা বলতে দেখবেন না। মধ্যপাচ্য জুড়ে অমুসলিম বিদ্বেষ, অমুসলিমদের বিশেষ বিশেষ স্থানে প্রবেশ নিষেধ নিয়ে কথা বলতে শুনবেন না। বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর হামলাগুলো তাদের কাছে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও এসব ঘটলে বিজেপির লাভ হয় অতএব হনুমানের পায়ের কাছে কুরআন রাখা ইকবাল হচ্ছে আসলে ছদ্মবেশী বিজেপি এজেন্ট!
বিশ্বে ‘মুসলিম শাসনে জ্ঞান বিজ্ঞানের বিশেষ অবদান’ এটিও মার্ক্সবাদীদের অতিপ্রিয় প্রচারণার অনুসঙ্গ। দিনভর হিন্দুত্ববাদের নিপাত চেয়ে রাতের বেলায় ‘মুসলিম শাসনে’ হীরা পান্না দেখতে পাওয়াও মার্ক্সবাদীদের কমন লক্ষণ। অথচ ইবনে সিনা, আল বেরুণীদের মত বিজ্ঞানীদের দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিলো ইসলামিক শক্তির বিরোধীতার কারণে। ইমাম গাজ্জালি এইসব জ্ঞানীদের কাফের মুরতাদ মনে করতেন। ইবনে সিনা বলেছিলেন, পৃথিবীতে যে পরিমাণ ধূলি তা যদি না থাকত তাহলে মানুষ হাজার বছর পর্যন্ত বাঁচত। তার এই কথায় ব্লসফেমি হয়ে গিয়েছিলো কেননা মানুষ কতদিন বাঁচবে সেটা কেবলমাত্র আল্লাই ঠিক করে দেন। ইবনে সিনা তার বৈজ্ঞানিক মতবাদের জন্য সারা জীবন পালিয়ে বেরিয়েছিলে ইসলামিক খিলাফতের রোষ থেকে বাঁচতে। ইবনে সিনা জিন বলতে আগুনে তৈরি কোন প্রজাতীকে স্বীকার করেননি যা ছিলো কুরআন অবমাননা। আজকে সেই সিনাকে ‘মুসলিম ও ইসলামী শাসনের অবদান’ হিসেবে দেখাতে তাদের লজ্জ্বা হয় না!
যখন একজন কেউ নবী শিশু বিয়ে করেছিলেন বলায় তাকে রেপ হত্যার থ্রেট খেতে হয়ে সমষ্ঠিগতভাবে, আরকেজনের পরিবার হত্যার থ্রেট খেয়ে দিলি ছেড়ে পালিয়ে যায়, ভারতের বড় বড় শহরগুলি অচল হয়ে পড়ে নবীপ্রেমিদের অবরোধ ভাংচুর সন্ত্রাসের কারণে, তখন যদি তৃতীয় পক্ষ কানের সামনে মুসলিম শাসনে ভারতে শিল্প স্থাপত্য খাদ্য পোশাকের গুণাগুণ গাইতে থাকে বিষয়টা কি আর স্বাভাবিক থাকে? যখন হিন্দুত্ববাদের জবাবে উগ্র মুসলিমবাদ জেগে উঠে তখন কেবলমাত্র হিন্দুত্ববাদকে ভয়ংকর দেখানোটা কি কোন কিছু আড়াল করতে চাওয়া নয়? যে কোন ইসলামিক জিহাদী কার্যক্রম, উগ্র আস্ফলন, হামলা তান্ডব শুরু হলে যখন ইসলামিক শক্তিগুলি মানুষের কাছে উগ্র মতবাদ বলে প্রতিয়মাণ হয়ে উঠে তখন গর্ত থেকে বামাতীরা বের হয়ে ইসলামিক শক্তিকে মানুষের কাছে দোষহীন, বিদ্বেষের শিকার ও বিশ্বে জ্ঞান বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য একক ক্রেডিট দিতে থাকে। এবারো তার বেতিক্রম নেই।
একটা সহজ প্রশ্নের জবাব মার্ক্সবাদীরা দিবেন কি? ‘মুসলিম শাসন’ ‘ইসলামী বিশ্ব’ এই পরিচয়গুলিতে যদি গদগদ হতে পারেন তাহলে একই অবস্থানের ‘হিন্দুত্ববাদে’ আপত্তি কিসের?
আমি মুসলিমবাদের মত করে হিন্দুত্ববাদের ঘোর বিরোধী। মানুষ হবে ধর্ম জাতিকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদ বিরোধী। কমিউনিস্টরা ইংরেজদের দুইশো বছরের সাম্রাজ্যবাদকে চিবিয়ে চিবিয়ে বর্ণনা করলেও সাতশো বছরের মুসলিম সাম্রাজ্যবাদকে পুটুর মধ্যে ঢুকিয়ে রাখেন কেন? ভারতকে সেক্যুলার হতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু বাংলাদেশ পাকিস্তানের মুসলিমবাদে আপনাদের আপত্তি নেই কেন?
#সুষুপ্তপাঠক
13 June 2022
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................