ইসলামের অতীত ছিল পৌত্তলিক

ইসলামের অতীত ছিল পৌত্তলিক ভিত্তি।হযরত মুহাম্মদের পরিবারও মূর্তিপূজায় অভ্যস্ত ছিলেন।
✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️

আমি তখন ছোট স্বাধীনতার পর অনেকটা সময় গ্রামের বাড়িতে ছিলাম।আমাদের গ্রামে মনমোহন দেবনাথের বাড়িতে খুব উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মনসা পূজার অনুষ্ঠান হতো।তিন দিনের অনুষ্ঠান শেষে প্রতিমা বিসর্জন করতে হতো প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে শীতলক্ষ্যা নদীতে।খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল।কারন আধা কিলোমিটার রাস্তা ছিল মেঠো পথ।ভারী প্রতিমা বয়ে নিয়ে আসতে খুব বেগ পেতে হতো।তাহলেও আনন্দের আতিশয্যে কারো তেমন মালুম হতো না।কিন্তু একবার মাঝ পথে আনন্দে ভাটা পড়ে যায়।প্রতিমা থমকে দাঁড়ায়।কি ব্যাপার প্রতিমা নিয়ে মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়া যাবেনা।সবাই কেমন বিমর্ষ হয়ে পড়ে।সবাই দাঁড়িয়ে পড়ে।শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় প্রতিমা মসজিদের পিছন দিক দিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

হিন্দু মুসলিম সংঘর্ষের এটি একটি কারন মসজিদের সামনে দিয়ে হিন্দুদের প্রতিমা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া যাবেনা।বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা কখনো এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়িয়েছে বলে কোন রেকর্ড নেই।এই ধরনের ঘটনা যে শুধু মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশে হয় এমন নয়।যেখানে মুসলিমরা সংখ্যালঘু সেখানেও এ ধরনের ঘটনা অহরহই ঘটে।আজকাল যে বাংলাদেশে সামান্য অজুহাতে হিন্দু মন্দির আক্রমণ ও মূর্তি ভাঙ্গা হয় তা মুসলিম আমলে লাগাতার হিন্দু মন্দির ও মূর্তি ধ্বংসের ঐতিহ্যেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
এই প্রবনতা দীর্ঘ দিনের।১৯২৭ সনে হাওড়ার রামকেষ্টপুরে,হুগলির রিষড়ায় পূজার সময় মসজিদের সামনে গান বাজনা বাদ্যযন্ত্র বাজানোকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিল।১৯৩৮ সনে টিটাগড়ে একই রকম  ঘটনার সাক্ষী ইতিহাস। অধুনা পঃবঙ্গে এই ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে।পঃবঙ্গের 
যে সমস্ত অঞ্চল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই।এখনো সেই সমস্ত এলাকার কোন মসজিদের সামনে দিয়ে হিন্দুরা কোন ধর্মীয় শোভাযাত্রা নিয়ে যেতে পারেনা।বীরভূমে হাইকোর্টের নির্দেশে প্রশাসনের তত্বাবধানে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান হওয়ার নজির রয়েছে।নদীয়ার জুড়াইনপুরে মসজিদের সামনে দিয়ে হিন্দুদের ধর্মীয় শোভাযাত্রার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামের পরে গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।এলাকায় এক মাসের উপর কার্ফু ছিল।কলকাতায় মহরমের তাজিয়া শোভাযাত্রার জন্য দুর্গাপূজার ভাসান স্থগিত করে দেয়া হয়েছিল।এমন হাজারো ঘটনার কথা বলা যাবে।

বাংলায় ওয়াহাবি প্রভাব বিস্তারের আগে গ্রামীণ মুসলিমরা প্রতিমা পূজা সম্পর্কে বিদ্বিষ্ট ছিল না।বরং অনেক বিশিষ্ট ও সম্মানিত মুসলিম বাড়িতে দুর্গা- কালি এবং আদি হিন্দু দেবদেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হত।শুধু তাই নয় রামমোহন থেকে ঠাকুর রামকৃষ্ণের সময়ে মুসলিম সমাজে হিন্দু 
প্রথার জাগরন হিন্দু জ্যোতিষী ও হিন্দু ব্রাহ্মণ পন্ডিতদের মুসলিম সমাজে সমাদর ছিল।শুধু বঙ্গে নয় দাক্ষিনাত্যের রথ যাত্রা ও দুর্গোৎসবে মুসলিমদের অংশ গ্রহণের তথ্য পাওয়া যায়।

মসজিদের সামনে দিয়ে দেবদেবীর মূর্তি নিয়ে না যাওয়ার পিছনের কারন হলো ইসলাম পৌত্তলিকতায় বিশ্বাস করে না দেবদেবীর আরাধনাকে মনে করে শিরক।হযরত মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের পর কাবায় স্থাপিত আরবের বিভিন্ন গোত্রের দেবতা অপদেবতা উপদেবতা আদিবাসীদের আঞ্চলিক দেবতা ও অন্যান্য দেবদেবী মিলিয়ে ৩৬০ মূর্তি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিল।সেই থেকেই পৌত্তলিক ধর্মীয় সব ধরনের আচার-অনুষ্ঠান ইসলামে বর্জনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

প্রাক ইসলামি আরবে ছিল পৌত্তলিক বহুত্ববাদী সংস্কতি।সেখানে রীতিমত কাব্যের লড়াই হতো ছবি আকা প্রতিযোগিতা হত।কাবা ছিল হুবাল নামে এক দেবতার প্রতি উৎসর্গিত।হুবালই ছিল কাবার এবং মক্কার প্রধান দেবতা।সেই সাথে তার তিন কন্যা তিন প্রধান দেবী লাত - উজ্জা -এবং মিনতের মূর্তি ছিল সেখানে।ইসলামের আজকের দিনে আল্লাহ বলতে যেমন একমাত্র ঈশ্বর বোঝায়,
ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে আরবে তা ছিলনা।বিসমিল্লাহ শুধু আরবরা বলত না - প্রাক ইসলামি খ্রিষ্টান,ইহুদী ও হানাফি নামে পরিচিত একেশ্বরবাদী আরবরাও বিসমিল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করতো।ইহুদী ধর্ম,খ্রিষ্টান ধর্ম,ও পৌত্তলিক বিভিন্ন প্রথার এক মিলিত রূপই মুহাম্মদের প্রবর্তিত ইসলাম।এমনকি আল্লাহ নামটিও তিনি নিয়েছেন পৌত্তলিক ধর্মগুলো থেকে।সেই ইসলামে মুসলমানদের মাঝে মূর্তি ভাঙ্গার প্রবনতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে সুশীল মুসলমানরা বলে ইসলাম শান্তির ধর্ম ও সম্প্রীতির ধর্ম।ইসলামে ধর্মীয় ঘৃণা ও বিদ্বেষের কোন স্থান নেই। সত্যি  কি  তাই!!! 

এগুলো আরবের পৌত্তলিক বিভিন্ন ধর্মের দেববেদীর মূর্তির প্রতিচ্ছবি।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted