যতদিন ইসলাম ধর্ম অবিকৃত থেকেছে, ধর্মকে ব্যবসার উপযুক্ত পুঁজি করা হয়নি ততদিন নবী-রাসুলদের কোন অনুসারী দ্বীন প্রচারের বিনিময়ে উপঢৌকন বা হাদিয়া গ্রহণ করেন নি। কোনো যুক্তিতেই আল্লাহ পাক ও তাঁর নবী-রাসুলগণ দ্বীন প্রচারের জন্য বিনিময় নেবার কোন সুযোগ দেন নি। পবিত্র কোর’আনে রাসুলাল্লাহকে (সা.) সত্য প্রচারের বিনিময়ে কোনো মজুরি, সম্পদ, বিনিময় বা উপহার গ্রহণ না করার জন্য অন্তত ছয়টি আয়াতে স্পষ্ট নির্দেশ প্রদান করেছেন আল্লাহ। তিনি বলেছেন,
"তুমি তাদের নিকট কোনো মজুরি দাবি কোরো না। এই বাণী তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ মাত্র।
-- (সুরা ইউসুফ ১০৪)
"বল! আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো পারিশ্রমিক চাই না। এবং যারা মিথ্যা দাবি করে আমি তাদের দলভুক্ত নই।" -- (সুরা সা’দ ৮৬)
"বল! আমি এর (দ্বীনের) বিনিময়ে তোমাদের কাছ থেকে প্রেম-ভালোবাসা ও আত্মীয়তাজনিত সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার ব্যতীত অন্য কোনো মজুরি চাই না।"
-- (সুরা শুরা – ২৩)
"তবে কি তুমি তাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাচ্ছ যা ওরা একটি দুর্বহ বোঝা মনে করে।" -- (সুরা তুর: ৪০)
"তাদেরকেই (নবীদেরকেই) আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর; বল! এর জন্য আমি তোমাদের কাছে কোনো মজুরি চাই না। এটা তো বিশ্ব জগতের জন্য উপদেশ।"
-- (সুরা আনআম – ৯০)
"(হে মোহাম্মদ!) তুমি কি তাদের নিকট কোনো মজুরি চাও? তোমার প্রতিপালকের প্রতিদানই তো শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রেযেকদাতা।" -- (সুরা মুমিনুন: ৭২)
প্রত্যেক নবী-রাসুল তাদের জাতির উদ্দেশ্যে একটি সাধারণ ঘোষণা দিয়েছেন।
নূহ (আ.) এর ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! এর পরিবর্তে আমি তোমাদের নিকট ধন সম্পদ চাই না। আমার পারিশ্রমিক আল্লাহর নিকট। (সুরা হুদ-২৯)
হুদ (আ.) এর ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর পরিবর্তে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাই না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি তবুও বুদ্ধি (আক্ল) খাটাবে না। (সুরা হুদ-৫১)
নূহ (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো কেবল বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে। (সুরা শু’আরা ১০৯)
সালেহ (আ.) এর ঘোষণা: আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোনো পারিশ্রমিক চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। (সুরা শু’আরা-১৪৫)
লুত (আ.) এর ঘোষণা: এর জন্য আমি কোনো মজুরি চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। (সুরা শু’আরা-১৬৪)
নূহ (আ.) এর ঘোষণা: যদি তোমরা আমার কথা না শোনো তাহলে জেনে রাখ, আমি তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাই নি। আমার প্রতিদান কেবল আল্লাহর নিকট এবং আমাকে মুসলিম (সত্যের প্রতি সমর্পিত) হওয়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে। (সুরা ইউনুস ৭২)
হুদ (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাচ্ছি না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট যিনি এই বিশ্বজাহানের স্রষ্টা। (সুরা শু’আরা ১২৭)
শোয়েব (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো মূল্য চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। (সুরা শু’আরা-১৮০)
উবায়দা বিন সামেত (রা.) ছিলেন আসহাবে সুফফার অন্তর্ভুক্ত এক সাহাবী। তাঁকে রসুলাল্লাহ কোন এক গোত্রের লোকদেরকে কোর’আন শিক্ষা দিতে প্রেরণ করেছিলেন। সেই গোত্রের একজন ব্যক্তি উবায়দাকে (রা.) আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করার উদ্দেশ্যে একটি ধনুক ও তীর উপহার দিয়েছিলেন। উবায়দা (রা.) রসুলাল্লাহর দরবারে ফিরে এসে যখন সেই তীর ও ধনুক তাঁকে দেখালেন তখন রসুলাল্লাহ বললেন, “যদি তুমি আগুনের তীর গলায় জড়িত হওয়া পছন্দ করো তাহলে তুমি এটা গ্রহণ করো।” (আবু দাউদ)
নোটঃ আজাহারী, মাজাহারী, গাজাখুরি'রা তবে কেমন দ্বীন প্রচারক; যারা হেলিকপ্টার, রকেট ছাড়া ওয়াজ মাহফিলে যায় না? তারা কেমন আল্লাহ-নবীর প্রেমিক যারা টাকার পরিমাণ কম হলে ওয়াজে আসে না!!
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................