আর না, অনেক হয়েছে।

“আর না, অনেক হয়েছে”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

এবার লোক সভা ভোটে দাড়াতে রাজি হবার একমাত্র কারন পশ্চিমবঙ্গে যা চলছে, তার বিরুদ্ধে লড়াই করা, যুদ্ধ করা। আমার কাছে এটা ছিলো “অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ”।

 গততন্ত্রে যুদ্ধ করার পথ সাধারন মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের প্রতিনিধি হয়ে আইন সভায় তাদের জন্য কথা বলা। ( ক’জন সেই কাজ করেন জানি না)।
ভোটে হেরেছি। ১৩ লক্ষের কিছু কম ভোট কাস্টিং হয়েছিলো। আমাকে আশীর্বাদ করেছিলেন ৫৩৯০০০ মানুষ। কংগ্রেস ৬০০০ এর মতো, সিপিএম সমর্থিত ফরোয়ার্ড ব্লক পেয়েছে ১০০০০ এর মতো। 

যিনি জিতেছেন, তিনি কি করে জিতেছেন তা তিনি নিজেই ভালো করে জানেন, সাধারন মানুষ তা দেখেছে। 

আমি থাকি হাবড়াতে, হাবড়ার মানুষ, হাবড়ার ভুমিপুত্র। এখানকার , অর্থ্যাত হাবড়া বিধান সভার বিধায়ম প্রচুর ক্ষমতা সম্পন্ন রাজ্য মন্ত্রী। তার কেন্দ্রে মানুষ আমাকে ২০০০০ মতো বেশী ভোট দিয়েছেন। আর এক মন্ত্রীর কেন্দ্র বিধাননগর থেকেও আমি অনেক বেশী ভোট পেয়েছি। হেরেছি দেগঙ্গায়। জানতাম ওখানে থেকে ভোট বেশী পাবো না। আমি অনেকবার আমার দলীয় জেলা নেত্তৃকে বলেছিলাম আমাকে দেগঙ্গায় নিয়ে বৃথা সময় নষ্ট করিয়ো না। কিন্তু আমি তখন ওদের ভাষায়—“ বিয়ে বাড়ির বর, কোনো কথা বলা যাবে না”। সুকৌশলে আমাকে , ব্রিগেডে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় কিছু বলতে দেওয়া হয়নি (যদিও বাকি সবাই, যারা প্রার্থী ছিলেন, তারা ২০-৩৫ মিনিট ধরে বলেছিলেন)। এর কারন আমি আজো জানি না।

বিষ্ণুপুর বটতলায় অমিতজীর জনসভায় (আমার ভোট কেন্দ্রের মধ্যে) জেলার সভাপতি সঞ্চালক ছিলেন। সেখানে পঞ্চায়েত স্তরের কর্মীদের বলতে ডাকা হয়েছিলো, আমার ডাক পড়েনি, আমি মঞ্চের সামনের সারিতে বসে শুধু সব দেখলাম। 

হাবড়াতে, আমার নিজের বাসভুমিতে যোগী আদিত্যনাথ এলেন। সেখানে সঞ্চালক ছিলেন জেলার এক সহ সভাপতি ( যার মিছুই ছিলো না , গত বিধান্সভার পর দামী মোটর সাইকেল কিনেছেন, এবার লোকসভার পর চার চাকার গাড়ি কিনেছেন, আর আমি এখনো ১০ বছরের পুরানো গাড়ি চড়ে বেরাচ্ছি)। এই ভদ্রলোক ছিলেন আমার ভোট প্রচারের মুল দ্বায়িত্তে। তিনিও আমাকে এক মিনিটের জন্যও যোগীজীর সভায় বলতে দিলেন না। 

আমার প্রচার সুচী, মিছিল এমন ভাবে তৈরী হয়েছিলো যে আমাকে চারিদিকে মাঠ ময়দান, জন বসতি হীন অঞ্চল দিয়ে এপ্রিল মে মাসের রোদে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা অবধি ঘোরানো হলো। তাও আবার ম্যাটাডরের পিছনে চেপে। রাজ্যের বড়ো নেতারা কেউ আসেন নি। একবার খোজ খবর ও নেন নি।

আমি হাবড়াতে, পাশের অশোকনগরে মাত্র একটি পথ সভাতে আমার বক্তব্য রাখতে পেরেছিলাম। এরা কেনো এটা করেছিলেন, আমাকে হারিয়ে এদের কি লাভ হয়েছে জানি না।

সেই একই খেলা আবার শুরু হয়েছে। এবার লক্ষ্য হাবড়া বিধান সভা। ২০১৬ সালে আমাকে দাড়াতে দেওয়া হয় নি। এবারেও আমাকে সিট দেওয়া হবে কিনা জানি না। কানাঘুষোয় শুনছি, অনেক দাবীদার ঊঠে পড়ে লেগেছেন, সব কিছু নিয়ে।।

সব অপমান সহ্য করেছি। তবে আর নয়।

দলে আমার কোনো দ্বায়িত্ব নেই,কোনোদিন ছিলো না। কেউ দেয়নি। পদ দাও বলে হাত কচলাতে পারি না , প্রতিদিন দাদাদের চেম্বারে যাবার সময় পাই না, আমার সাধারন মানুষের মধ্যে অনেক কাজ থাকে। নেতাদের ভজনা করার সময় পাই না। আমার দোষ এটাই। 

হাবড়াতে আমি এবার দাড়াবোই। দলীয় নেতারা ডাকলে যাচ্ছি (মাত্র একটি মন্ডল থেকে ডাক আসে)। আগামী মাস থেকে আমি নিজে , কেউ না ডাকলেও রাস্তায় বেরুবো। হাবড়ার বহু ছেলে পুলে , মানুষজন আমাকে ভালোবাসে। তাদের নিয়ে মিটিং মিছিল করবো। দেখি কে কি করে ঠেকায়। দলীয় গঠন তন্ত্র এবং তাকে মান্যতা দেওয়া আমি বুঝি এবং সেটা পালন ও করি। কিন্তু কেউ যদি নাই ডাকে , নাই বলে তাহলে কি করবো????

ভোটে দাড়াতে কি লাগে? ভারতীয় নাগরিকত্ব= আমার আছে, বয়ষ বোধ হয় ২১ কি ২৫ হতে হয়= অনেকদিন পার হয়ে গেছে, শারীরিক সক্ষমতা= অনেক ভুড়ি ওয়ালা নেতারাও আমার সঙ্গে হেটে পারবেন না, কয়েক লক্ষ টাকা লাগে= এই বারেই ৮ লক্ষ টাকা ধার করেছি, শোধ ও দিয়েছি। বিধান্সভার ভোট এখনো বেশ দেরী, টাকার জোগাড় হয়ে যাবে। নমিনেশান পেপার দিতে কয়েক হাজার টাকা লাগে সেটাও দেবো। লোকের বাড়ি বাড়ি যাবো।

১৯৭২ সাল থেকে অর্থ, প্রচার অনেক কিছু দিয়েছি, করেছি। কিন্তু আজো ব্রাত্য। রোজ রোজ নেতাদের কাছে গিয়ে ধর্না দেওয়ার সময় আমার নেই।

অনেক হয়েছে আর নয়।   আমার প্রিয় হাবড়াকে আমি অন্য কারো হাতে তুলে দেবনা। এখানকার মানুষ, ধুলো মাটিকে আমি ভালোবাসি। হাবড়া আমার দ্বিতীয় ভালোবাসা। প্রথম ভালোবাসা সব সময় আমার পাশে থাকেন, মিটিং মিছিলেও থাকেন। 

যদি বলেন, এমন ভাবে সোসাল মিডিয়াতে লেখা উচিত নয়। প্রশ্ন- নিজের দলের প্রার্থীকে হারানোর জন্য সব করা তাহলে উচিত তাই না?????? তাকে ব্রাত্য করে রাখা উচিত তাই না????? 

জানি একা। মরবো (হারবো) তবু বীর অভিমন্যুর মতো মরবো। হার বা মরনে আমার ভয় নেই।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted