আমাকে বলতে দাও :
----------------------------
দেশভাগ হয়েছে আজ বহুদিন, কিন্ত অখন্ড ভারত ভাগের এত বছর পরেও দেশভাগ নিয়ে রাজনীতির খেলা শেষ হয়নি। খণ্ডিত ভারতে এখনো অনায়াসে চলে দেশভাগ নিয়ে রাজনীতির নোংরা খেলা। এই খেলায় এখন শীর্ষে খণ্ডিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। খেলার রিং মাস্টারনী হলো এই বাংলার সকলের 'পিসিমনি'।
কেন এসব লিখছি বুঝতে পারছেন না নিশ্চই ? এই তো আপনাদের সমস্যা ! মাথায় হ্যামারের বারি মেরে সবকিছু খোলসা করে দিতে হয়। আচ্ছা, তাই নাহয় করে দি। যারা ভারতের তথা এই পশ্চিমবাংলার রাজনীতি নিয়ে অল্পস্বল্প ওয়াকিবহাল, তারা নিশ্চই খেয়াল করে থাকবেন, ইদানিং প্রিন্ট মিডিয়া থেকে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জুড়ে বেশ ঘন ঘন জায়গা করে নিচ্ছে 'মতুয়া' । মতুয়া কি, গায়ে মাখে না মাথায় দেয় ? না, না এসব কিছুই নয়। মতুয়া হলো অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গ তথা অধুনা স্বাধীন বাংলাদেশের তফসিলি সমাজের এক বৃহদাংশের ধর্মীয় সংঘ। দেশভাগের সময়ে এরা এই বাংলায় চলে আসে। অবিভক্ত ভারতে এদের নেতা ছিলেন প্রমথরঞ্জন ঠাকুর যার স্ত্রী বড়মা নামে খ্যাত এবং বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁর কাছে ঠাকুর নগরের বাসিন্দা। তার বড়মার অনুসারীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। যেখানেই সংখ্যা, সেখানেই আমাদের সকলের পিসিমনি। ইদানিং পিসিমনির তাই বড়মার বৃত্তের সকলের ভোটটা শিউর করতেই হবে, অতঃএব পিসিমনি বড়মার কাছে ছুটে গেছেন, তার কৌশল জেনেছেন, দুঃখ-দুর্দশার কথা জেনেছেন এবং অবশ্যই জাদুকাঠির ছোঁয়ায় সব সলভ করে দেবেন আশ্বাস দিয়েছেন বড়মাকে। দেশভাগের পটভূমিকায় এই বড়মাদের দুর্দশার কথা আপনারা জানেন ? আমাদের পিসিমনির সেই ইতিহাস পড়া আছে ? কোন অছিলায় দেশভাগের বলি এই জনগোষ্ঠীর সাথে রাজনৈতিক গেম খেলার সাহস করেন পিসিমনির মত রাজনীতিবীদরা ? নাকি সংখ্যাটাই ভোটের দৌড়ে শেষ কথা ? জানতে ইচ্ছে হয়না আপনাদের ? বলি শুনুন :
দেশভাগ, বাংলাভাগ এসবের পটভূমিকায় যােগেন্দ্রনাথ মন্ডলকে মনে পরছে ? বাংলার তফশিলী জাতিদের প্রধান নেতা, যিনি তফশিলী জাতি ও মুসলমান ঐক্যে প্রচার করে বেড়াত ? জিন্নাহ তথা উপমহাদেশের বিচ্ছিন্নতাকামী মুসলমানের পায়ে তেল মেখে দেশভাগের সাথে সাথে পাকিস্তানের মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নিয়েছিল এই যোগেন্দ্রনাথ। কিন্তু ইতিহাসের কি করুন পরিহাস ! অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গে ১৯৫০ এর একতরফা সংখ্যালঘু নিধনযজ্ঞে রেহাই পেলোনা তফশিলীরা ! মন্ত্রীমশাইকে তিন বছরের মধ্যেই কল্পিত স্বর্গরাজ্য ছেড়ে ‘ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুস্থানে পালিয়ে আসতে হলো প্রাণ বাঁচাতে আর রেখে এলো তার প্রচারে একসময় সায় দেওয়া এক বিরাট জনগোষ্ঠীকে, চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে, বাঙালি মুসলমানের সেদিনের বধ্যভূমি পূর্ববঙ্গে। তফসিলী এবং মুসলমান, হিন্দুদের কাছে চরম হেনস্থা হয়েছে এরকম বার্তা প্রচারক মন্ত্রীমশাই যোগেন মণ্ডলকে ১৯৫০ এর মুসলমানের নারকীয়তা, তার পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ পত্রে লিখতে বাধ্য করেছিল : 'সুদীর্ঘ ও উদ্বেগময় সংগ্রামের পর শেষ পর্যন্ত আমাকে একথাই বলতে হচ্ছে যে পাকিস্তান আর হিন্দুদের বাসযােগ্য নয়। তাদের ভবিষ্যতে প্রাণনাশ ও ধর্মান্তরণের কালো ছায়া ঘনিয়ে আসছে। অধিকাংশ উচ্চবর্ণের হিন্দু ও রাজনৈতিক সচেতন তপশিলী জাতির লােকেরা পূর্ববঙ্গ ছেড়ে চলে গেছে। যে সমস্ত হিন্দুরা এই অভিশপ্ত দেশে অর্থাৎ পাকিস্তানে থেকে যাবে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ধীরে ধীরে এবং সুপরিকল্পিত ভাবে তাদের মুসলমানে পরিণত করা হবে বা নিশ্চিহ্ন করা হবে।' বড়মার প্রয়াত স্বামী, মতুয়াদের নেতা প্রমথরঞ্জন ঠাকুরও অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গে যোগেন মন্ডলের ধারণার ভুল ধরতে পেরেছিলেন এবং সেটা তিনি বুঝেছিলেন আর তাই দেশ ছাড়ার আগে, নড়াইলের জমিদারবাড়ীর প্রাঙ্গণে তার শেষ সভায় বলেছিলেন : “কিছুদিনের মধ্যে দেশভাগ হয়ে যাবে। দেশভাগের ফলে আমাদের জন্মভূমি যদি পাকিস্তানের মধ্যে পড়ে, আমরা যেন সকলে এক থাকি। ফেডারেশন ও লীগের কথায় না ভুলি। ভারতভূমিতে আমরা যেন সকলে এক সাথে চলে যেতে পারি।"
বড়মার অনুসারীদের বলি : অতীতকে লুকিয়ে রেখে বা অস্বীকার করে সমাজের পূর্ণ অধিকার হাসিল করা যায়না, পিসিমনির মত যে সকল রাজনীতিবিদরা আপনাদের এইটা বোঝাচ্ছে তারা ভন্ড। উচ্চবর্ণের বিরুদ্ধে লড়াই জারী রাখুন, কিন্তু বাংলাদেশের তফসিলী সমাজের উপর কি নির্মম অত্যাচারের ফলে আপনারা এই দেশে আসতে বাধ্য হয়েছেন, সেটা তুলে ধরুন।
রক্তাক্ত দেশভাগের এত বছর পরেও, যে সকল রাজনীতিবিদ তা নিয়ে গেম খেলে চলেছে, তাদের চাবকে পিঠের ছাল তুলে ফেলা উচিৎ.......
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................