পূর্ণ জিহাদী অনুভূতি সম্পন্ন কুশিক্ষা ব্যবস্থা মাদ্রাসা বানাবেন, আর আংশিক অনুভূতিওয়ালা শিক্ষা ব্যবস্থা স্কুলও চালু রাখবেন তাহলেতো পূর্ণ অনুভূতি আংশিক অনুভূতিকে গ্রাস করবেই😡-ফলাফল স্কুলপাঠ্য থেকে স্বনামধন্য হিন্দু লেখকদের লেখা অপসারণ 😡😡
©Mufti Masud
ছোটকালে আমি স্কুলের বই পড়তাম আমার আগ্রহের কারণে। মাদ্রাসার মধ্যে স্কুলের বই রাখলে নির্ঘাত মার খেতে হবে, তা আমি জানতাম। মাদ্রাসা থেকে ছুটি পেতাম সপ্তাহে একদিন - কেবল শুক্রবার। ছুটি পেলেই বাসায় ফিরে আমার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তাদের স্কুলের বই নিয়ে তা গোগ্রাসে গিলতাম। যদিও বাংলা কবিতা, বাংলা গল্প, বাংলা গান আমার ভালো লাগত, তবুও বাংলা কবিতা ও গল্প পড়ে আক্ষেপ করতাম - কেন যে কাফেরদের বানানো বই পড়ছি! আমাকে যে কেন বারবার শয়তানে ধরে!
আমি যখন অনেক ছোট সে সময়ে কোন এক বাংলা বইয়ে অতীশ দীপঙ্কর সম্পর্কে একটি লেখা ছিল। অতীশ দীপঙ্করের মানবিক মূল্যবোধের কথা লেখা ছিল। আমি জানিনা, এখনো অতীশ দীপঙ্করকে নিয়ে সে লেখাটি আছে কিনা। মনে হয় নেই, কারণ ইতিপূর্বেই আমাদের দেশের সরকারের অনুভূতির পারদ সপ্তমে চড়েছে।
আজ বাংলা ট্রিবিউনের খবর মারফত জানতে পারলাম, বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক থেকে অমুসলিম লেখকদের লেখা সমূহ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাদ দেয়া হয়েছে, এবং তার জায়গায় যতসব ফালতু ইসলামী আবেগে ভরপুর কবিতা আর গল্প ঢোকানো হয়েছে।
এমন খবর পড়ে আপনারা অবাক হলেও আমি অবাক নই। মাদ্রাসা, যেখানে বাংলা ভাষা, বাংলা কবিতা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাঠদান করা হয় সেটি তো আর হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। আমার শৈশবে ও কিশোর বয়সে আমার যারা ক্লাসমেট ছিল তারাই তো আজ হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী। তারাও নিশ্চয়ই তখন বাংলা কবিতা ও গল্প পড়তে এবং বাংলা গান শুনতে ভালোবাসতো? এই যে অসাম্প্রদায়িকতার মুখোশের আড়ালে চরম সাম্প্রদায়িক সরকার বাহাদুর হেফাজতের দাবি মেনে নিয়ে স্কুলের শিক্ষা কারিকুলাম মাদ্রাসার আদলে সাজাচ্ছে, এটি কি পূর্বপরিকল্পনার অংশ না? আপনি পূর্ণ জিহাদী অনুভূতি সম্পন্ন কুশিক্ষা ব্যবস্থা মাদ্রাসা বানাবেন, আর আংশিক অনুভূতিওয়ালা শিক্ষা ব্যবস্থা স্কুলও চালু রাখবেন তা কি করে হয়? পূর্ণ অনুভূতি কি আংশিক অনুভূতিকে গ্রাস করবে না?
যদি মাদ্রাসা থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য আমি নিজের জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত না নিতাম তাহলে তো আমি আজও মসজিদের মেম্বারের উপর বসে হিংসায় ভরা ভাষণ দিতাম। আপনারা ভাবছেন, কেন ‘হিংসায় ভরা‘ বললাম? এটা এজন্যই বললাম, কারণ হিংসা ছাড়া ইসলামের কোন আলোচনাই অস্তিত্ব পেতে পারে না। আপনারা যাদের মডারেট মুসলিম দেখছেন তাঁরা আসলে তেঁতুল শফীর চেয়েও ভয়ানক। তারাই তেঁতুল শফীদের জন্য মাদ্রাসার কারাগার বানায়, আর নিজেরা মডারেট মুসলিম সাজে এজন্য যে, তারা আগা এবং তলা দুই জায়গা থেকেই খেতে চায়। অধিক মডারেট ভাব ধরে যে মুসলিমরা তারাই জঙ্গিবাদের উত্থানে অধিক সহায়তাকারী। অথবা এভাবেও বলা যায়, তারাই টপ ক্লাস জিহাদী।
আমি হেফাজতে ইসলামকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তাদের শৈশব যেভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারেনি এ সমাজ, তাদেরকে ধর্ষণ থেকে বাঁচাতে পারেনি যে সমাজ, বাংলা কবিতা ও গল্প পড়লে তাদেরকে শৈশবে হুজুরদের দ্বারা নির্যাতন করাতো যে সমাজ সে সমাজের কি রাইট আছে বাংলা কবিতা ও গল্প পড়ার? আমি হেফাজতী জঙ্গিদের বলছি, আপনারা বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তুলুন -
‘‘আমাদের বাংলা কবিতা পড়তে দাওনি কেন? তাই বাংলা কবিতা পড়া চলবে না।‘‘
‘‘আমাদেরকে গান শোনার কারণে পিটিয়েছ কেন? তাই তোমাদেরও গান শোনা চলবে না।‘‘
‘‘আমাদেরকে মসজিদ-মাদ্রাসার কারাগারে বন্দি করেছ কেন? তাই তোমাদেরও মুক্ত থাকা চলবে না।‘‘
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................