আরেকটা 'গ্রেট একশন ডে' কতদূর ফ্রেন্ডস ?
-------------------------------------------------
১৭-১০-২০০৭ রাত ৯ টা । 'তারা' টিভিতে রিজওয়ান-প্রিয়াঙ্কা নিয়ে এক আলোচনা সভা উপস্থিত করা হচ্ছে । আলোচনাতে এক প্রাক্তন সি.বি.আই. অধিকর্তা
বললেন: " পশ্চিমবঙ্গ অসাম্প্রদায়িকতার পীঠস্থান । এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতা সহ্য করা হবে না । যারা সাম্প্রদায়িক, তারা এ রাজ্য হতে চলে যাক । " মুখের ভাষায় খানিকটা পূর্ববঙ্গের টান যেন মনে হলো । মনে মনে ভাবলাম প্রশ্ন করলে কেমন হয়: 'ওপার বাংলায় থাকলেই তো পারতেন, এপার বাংলায় এলেন কেন ? খ্যাঁদা খেয়ে ?' উপায় ছিলোনা প্রশ্ন করার, কেননা আমি তখন টিভির পর্দার সামনে নিছক একজন দর্শক । এপার বাংলা, অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ কেমন অসাম্প্রদায়িকতার পীঠস্থান তার উত্তর একজন প্রাক্তন (আই.পি.এস.), পুলিশের ডি.জি. শ্রী গোলক বিহারী মজুমদারের লেখা প্রবন্ধ 'ছেচল্লিশের আতঙ্কের দিনগুলি ভুলেনি' থেকে তার কথাতেই তুলে ধরি :
" রাত ১১/১২ টা (১৯৪৬) নাগাদ পাড়ায় ওরা আবার আক্রমণ করল । দেখলাম একদল লোক তাদের হাতে ছোড়া তরোয়াল ইত্যাদি নানান অস্ত্রশস্ত্র । তারা চিৎকার করে বলছে : 'আজ তো এক এক হিন্দুকো কোরবানী করেগা ।' মা-বাবা-দিদি-আমি-ভাগ্নে সবাই সন্তস্ত্র ; যে কোনো মুহূর্তে আমরা আক্রান্ত হতে পারি । সবচেয়ে বেশি ভয় দিদিকে নিয়ে, দিদি দেখতে খুব সুন্দরী । ভাবলাম, দিদিই হবে ওদের প্রথম টার্গেট । হিন্দু মেয়েদের উপর ওদের বরাবর লোভ । এদিকে পরিস্থিতি একটু শান্ত হলেও আতংক যায়নি । ইউনিভার্সিটি খোলা ছিল । রাজাবাজারের উপর দিয়ে আমাকে যেতে হতো । একদিন দেখলাম, গরু কেঁটে যেমন ঝুলিয়ে রাখে তেমনি ভাবে হাত-পা কাঁটা হিন্দু মেয়েদের চুল বেঁধে সব ঝুলিয়ে রেখেছে। বীভৎস আর নৃশংস সে দৃশ্য । সেই প্রথম আমি মেয়েদের খোলা উলঙ্গ দেখলাম ।" লেখকের এক ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ দত্ত । লেখক গোলক বিহারী মজুমদারকে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল : ' কিভাবে এবং কিসের সাথে উলঙ্গ হিন্দু মেয়েদের দেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল ?' উত্তর : ' গরুর মাংসের দোকানে যেভাবে লোহার হুকের মধ্যে মাংস ঝুলিয়ে রাখে সেভাবে মাংসের পরিবর্তে মেয়েদের মাথার চামড়ার ভেতরে হুক ঢুকিয়ে উলঙ্গ মহিলাদের মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল ।'
আজকের পশ্চিমবঙ্গের তথাকথিত সেকুলাঙ্গার বুদ্ধিজীবি যারা পশ্চিমবঙ্গ অসাম্প্রদায়িকতার পীঠস্থান বলে ঢাক পেটান তাদের জন্য দেবকুমার বসুর লেখা '১৯৪৬-এর দাঙ্গার কয়েকটা দিন' নামক প্রবন্ধ থেকে তারই কথায় ইতিহাসের উদাহরণ দি :
" রাজা বাজারের সামনে ভিক্টরিয়া কলেজ ও ইস্কুল । মেয়েদের কলেজ এবং হোস্টেল একদম ফাঁকা । সকলে পালিয়েছে । কেবলমাত্র রাস্তার দোতলার জানালায় চারটি মেয়েকে খুন করে রাস্তার দিকে ঝুলিয়ে রেখেছে কে বা কারা । এই নৃশংসতা, এই বীভৎসতা যাঁরা দেখেছেন, তারাই অনুভব করতে পারেন যে, আমাদের মত যুবকেরা কেন উত্তেজিত হবে, ক্ষিপ্ত হবে । কেউ এই হোস্টেলের দিকে তাকালে দেখবেন রাস্তার দিকের জানালাগুলি ইঁট গেঁথে বন্ধ করা আছে । আজ ষাট বছর পরেও বন্ধ আছে । কেন কাদের ভয়ে ?"
২০২০ এলো এবার স্বাধীন ভারতে নতুন আবদার-প্রতি জেলাতে শরিয়তি আদালত চাই । গলা মেলাচ্ছে অনেক সেকুলাঙ্গার, পতিত, ইসলামিস্ট রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যক্তিত্ব । আমরা কি আরেকটা ১৯৪৬ এর 'গ্রেট একশন ডে' দেখতে চলেছি ?
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................