সঙ্ঘ বলতে কি বোঝায়? এর অর্থ অনেকভাবে করা যায়। যেমন, নিজের সমাজ, গন,সমুহ,সম্প্রদায়,দল, সমবায় ইত্যাদি।
রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় শব্দ অতি প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত। ঋষি বাক ছিলেন এক ঋষি কন্যা। ঋক বেদে আছে, এই বাক দেবী বা বাক ঋষি ই প্রথম বলেছিলেন “অহং রাষ্ট্রী”। নিজের রাষ্ট্রের সাধনা এক প্রকার ধর্ম সাধনা। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নিরুপন এবং তার মাধ্যমে সমাজ এবং সংষ্কৃতির সেবা, উন্নয়ন এক ধরনের আধ্যাত্ম সাধনা। নিজের রাষ্ট্র, তথা নিজের সমাজ, সেবার মাধ্যমে সেই সমাজের ব্যাষ্টিগত উন্নয়ন ই জাতিগত উন্নয়ন। বিবেকানন্দ তার জীবন দর্শনে সেই ‘জাতীয়তাবাদ’ এর কথাই বলে গিয়েছিলেন। শ্রী গীতাতেও ভগবান শ্রী কৃষ্ণ সেই নিজ রাষ্ট্র, নিজ জাতি এবং সেই জাতির সমষ্টিগত কল্যানের কথাই বলে গেছেন। নিজের উন্নতি নিজ সমাজ এবং নিজ রাষ্ট্রের কল্যানের মধ্য দিয়েই সম্ভব এবং সম্পুর্ন হবে। রাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে সমাজ হয় না, সমাজ বাদ দিয়ে রাষ্ট্র হয় না। এর কোনোটাকে বাদ দিয়ে ‘মানুষের সার্বিক উন্নতি’ হয় না।
বালগঙ্গাধর তিলককে বিবেকানন্দ তাই বলেছিলেন রাষ্ট্রীয় কর্ম করতে, আর তিনি নিজেকে আধ্যত্মিক কর্মে ব্যাপৃত রেখেছিলেন। বিবেকানন্দের আদেশ, শ্রী গীতার বানী তাই ছিলো তিলক, ঋষি অরবিন্দ, বীর সাভারকর, নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের ‘জীবনাদর্শ’।
উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে , গান্ধীর আবির্ভাবের আগে, তাই এই সব মনীষীগন নিজ রাষ্ট্রকে “মাতৃজ্ঞানে’ পুজো করতে শুরু করেছিলেন। এদের অনুপ্রেরনায় লক্ষ লক্ষ ভারতীয় ‘স্বদেশী মন্ত্রে’ দীক্ষিত হয়ে ‘জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য’ করে মরন পন করেছিলেন।
একটি রাষ্ট্র এবং সেই রাষ্ট্রের সমাজ, সামাজিক ব্যাবস্থা, সামাজিক কল্যান একই সংগেই চলবে , কিন্তু আলাদা ভাবে, এই চিন্তা প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের। প্রাচীন ভারতীয় দর্শন এই দুই চিন্তাকে এক স্রোতে মিলিয়ে চলার চিন্তা। আর সেই মিলনের সুত্র ‘এক এবং অভিন্ন আধ্যাত্মিক ভাবনা এবং জীবনাদর্শ। এই ভাবনা পাশ্চাত্যে কোনোদিন ছিলো না। পশ্চিমী রাষ্ট্র চিন্তার জনক প্লেটো, সক্রেটিস এর চিন্তায় তাই রাষ্ট্র এবং সমাজ আলাদা ভাবে অনুভুত হয়নি। প্লেটোর বিখ্যাত “ দি রিপাবলিক” সেই কথাই বলে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেববক সঙ্ঘ তাই বলে “আধ্যাত্মিক সুত্র দিয়ে গঠিত রাষ্ট্র চালাবে তার সমাজ, তৈরী করবে পরিশীলিত সংষ্কৃতি এবং তার মাধ্যমেই আসবে মানব কল্যান।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................