খেলাপত রাষ্ট্র।

আমার বাল্যের বন্ধু ফোন করে ভারত এসব কি করছে বলে নিজের ক্ষোভ ঝাড়ল। সে তার নিজের ও কমিউনিটির কথা ভেবে শংকিত। বন্ধু বলল, এই যে বিজেপি এসব শুরু করল এতে তো বাংলাদেশে আমরা হিন্দুরা বিপদে পরব। ভারতের মুসলমানদের কিছুই হবে না।

 ওরা কেউ দেশও ছাড়বে না। ভারতের বহু জায়গা আছে যেখানে মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। খ্রিস্টান বৌদ্ধরা এমন অনেক জায়গা আছে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভারতের সব জায়গায় হিন্দুরা সংখ্যাগুরু না। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন মিল নাই। আমরা তো এদেশে টিকতে পারবো না! আমাদের দেশ ছাড়তে হবে না হয় মরতে হবে! ভারতের এই উত্তেজনায় একটা উশকানিতে মুহূর্তে মধ্যে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে। প্রতিবেশী মুসলমানদের সঙ্গে ভাই ভাই হয়ে থাকি। তারা মানুষ ভালো। কিন্তু যখন হামলা হয় তখন কোন কিছু কারোর নিয়ন্ত্রণে থাকে না। মসজিদের মাইকে একটা ঘোষণা আসবে আর কোত্থেকে যে এত লোক আসবে। আগুন দিবে। লাঠি রড হাতে উন্মত্ত মানুষ যারা দেখেনি তারা কল্পনা করতে পারবে না সেটা কি জিনিস…।

বন্ধু অতি সাধারণ একজন মানুষ। সে জানে না বাংলাদেশের খিলাফত রাষ্ট্রের জন্য অনলাইন সম্মেলন হযেছে এবং খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধান প্রণোয়ন করেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের এই পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকার অলিগলি। চলন্ত বাসে লিফলেট বিলি হয়েছে। দেশের এত সিকিউরিটির কথা শুনি, সরকারের জিরো টলারেন্সের কথা শুনি, তাদের চোখের সামনে এগুলো কারা করে গেলো? শত শত পোস্টার ঢাকা শহরে লাগানোর সময় সরকার প্রশাসন কোথায় ছিলো? এই যে পোস্টারটি এটা তো কোন একটা প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে, কি করে একটা জঙ্গি সংগঠনের পোস্টার ছাপানো সম্ভব হলো?

আমরা গায়ের জোরে বলতে পারি এদেশের কোনদিন উগ্রবাদের ঠাই হবে না। আমাদের নাকি হাজা্র বছরের উদার জাতি সত্বার উদাহরণ আছে। যদিও ঢাকা নোয়াখালীতে দু দুটো ভয়ংকর জেনসাইডের ইতিহাস আছে আমাদের। আমরাই ধর্মের ভিত্তিতে দেশ করেছিলাম। বাঙালিরা পার্সিদের চেয়ে কি বেশি ঐতিহ্যময় জাতি নাকি? পার্সিরা ইসলামিক শাসনে আসেনি? ইসলাম তাদের দেশে কায়েম হয়নি? আফগানিস্থানের মত বৌদ্ধ অঞ্চল কি ইসলামের ছায়াতলে আসেনি? বন্ধু বিজেপির জন্য নিজেদের বিপদের কথা বলছিলো। কিন্তু তার বংশধররা এই কথিত খিলাফতে কি করে বাস করবে তা ভেবে রেখেছে? যে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জঙ্গিরা এতখানি সাহস দেখাতে পারে সেদেশের ভবিষ্যত ভালো মনে হয় না। নিরাপত্তা রক্ষিদের মধ্যে কি পরিমাণ খিলাফতবাদী আছে তাও আমরা জানি না। তারাও তো মুসলমানই! একজন র্যা ব সদস্য হিযবুত তাহরীর সদস্য হিসেবে বরখাস্ত হওয়ার খবর আমরা জানি। সেনাবাহিনীর মেজর জিয়ার কথা জানি। আমাদের সবচেয়ে বড় ভয় এই সেক্টরগুলো কতখানি র্যা ডিকেল হয়ে উঠেছে। ভারতে মোদি অমিত শাহকে ভোটে পরাজিত করতে পারলে হিন্দুত্ববাদের রাজশক্তি মুখথুবড়ে পড়বে। এত বিশাল দেশ, এত বৈচিত্র, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান শিখদের সহিষ্ণুতার মানসিকতা ভারতকে ঠিকই তার ঐতিহ্যে ফিরি আনবে। কিন্তু বাংলাদেশ পাকিস্তান দেশ দুটির জন্মই হয়েছে মুসলিমদের বেস করে। এর প্যাটার্নটাই ছিলো অমুসলিমদের এখানে দুর্বল হয়ে টিকে থাকতে হবে। মুসলিম লীগের হাত ধরে বাংলাদেশের মডারেট মুসলিমদের শাসনের সময়ই যদি পরিস্থিতি এত খারাপ থাকে তাহলে কথিত খিলাফতে এদেশে কারা অবশিষ্ঠ থাকবে? যশোর রোড ধরে তখন কেবলই মুসলমানদের দীর্ঘ লাইন। কারণ সঙ্গী হবার মত কোন অমুসলিম দেশী ভাই তখনো অবশিষ্ঠ নেই। তারা হয়ত আরো এক দশক আগেই শেষ পরিবারটি হিসেবে বর্ডার ক্রাস করেছে!