আমরা এখন চেয়ে চেয়ে দেখবো শুধু।

রিতা দেওয়ানের গানের ভিডিও আমি দেখিনি। শত শত বছর ধরে এই পালা গান হয়ে আসছে হাজার হাজার মানুষের সামনে। এসব পালা গানে দুজন বয়াতী একটি বিষয় নিয়ে বাহাস করে। যেমন নারী পুরুষ নিয়ে দুজন যুক্তি দিতে থাকে সমাজে কার ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাহাস শেষ হয় দুজনই স্বীকার করে নেয়ার মাধ্যমে যে নারী পুরুষ উভয়কে ছাড়াই সমাজ চলবে না। একটা পালা পান দেখেছিলাম ইউটিউবে নবীর মিরাজ যাওয়া নিয়ে। সেখানে একজন বয়াতী বলছে নবীর রুহানি ভ্রমণ ঈমানের ভিত্তি। এটা যদি না মানি তাহলে নবীকে মিথ্যুক বাটপার বলতে পারেন...ইত্যাদি। এই কথাগুলো আজকে যে কেউ কোন বয়াতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারে যে অমুক বয়াতী নবীকে বাটপার মিথ্যুক বলছে। রিতা দেওয়ানের বিরুদ্ধে আল্লাহকে কটুক্তির অভিযোগ যে এই পর্যায়ে জোচ্চুরি সেটা নিশ্চিত। কারণ বয়াতীরা কেউ নবী আল্লা ইসলাম বিরোধিতা করে কষ্মিনকালেও গান করবে না। তাদের শ্রোতারা সবাই মারফতি লাইনের ভক্ত মুসলমান।

এই বয়াতীদের একটা দর্শন হচ্ছে এরা ইসলামকে স্রেফ আধ্যাত্মিক ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। জিহাদ করে ইসলাম কায়েম, আল্লার আইন, খিলাফত, শরীয়া শাসন এগুলোকে মোল্লাদের মনগড়া মনে করে। সবচেয়ে বড় জিনিস এরা সব ধর্ম সম্প্রদায় একই ঈশ্বরের নানা পথে তার অন্বেষণ বলে বিশ্বাস করে। লালনের বড় একটা প্রভাব তাদের মধ্যে আছে। যে কারণ এদের মধ্যে নারী বয়াতীরা পুরুষের সঙ্গে বাহাসে নামে। নারীর আসরে এসে তর্ক করার রেওয়াজ তাদের নারীর ক্ষমতায়ে বিশ্বাসের একটা নিদর্শন। শ্রোতাদেরও এটায় প্রভাবিত করে। যে কারণ মোল্লারা যারা ইসলামের তাত্ত্বিক স্টাডি করে,  ইসলামিক জিহাদ,  নারীকে পুরুষের দাসীবাদী মনে করার ইসলামের সোর্স চর্চা করে তারা বয়াতীদের হুমকি মনে করে। কারণ তারা গ্রামবাংলার মানুষের একদম কাছাকাছি আছে। তাই কওমী জঙ্গিদের আইটি সেল বেছে বেছে বয়াতীদের টার্গেট করে আইটিসি আইনে ফাঁসাচ্ছে। পাকিস্তানে সুফিবাদী বাউলদের ঠিক এভাবে এ্যাটাক করা শুরু হয়েছিল ব্লাসফেমি পাশের পর। আমাদের এখানে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শরীয়ত বয়াতীর বিরুদ্ধে কথা বলার পর এখন রিতা বয়াতী ফাঁসছে। সংসদে তখন শরীয়ত বয়াতীর পক্ষে শক্ত অবস্থান নিলে আজ রিতা দেওয়ানের বিরুদ্ধে কেউ লাগতে আসত না। এরপর একে একে বাকীদের পালা আসবে। আইসিটি আইন করাই হয়েছে ব্লাসফেমির প্রক্সি হিসেবে। এদেশে গ্রামীণ শত শত বছরের লোকজ গান সংস্কৃতি এভাবেই রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিহ্ন করা হবে। এটা করা গেলে গ্রামগুলো শরীয়া শাসনের পক্ষে দাঁড় করানো যাবে। গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও করার মাস্টার প্লাণের অংশ এটা।

আমরা এখন চেয়ে চেয়ে দেখবো শুধু। শুরু হয়েছিল নাস্তিকদের দিয়ে। শেষ হবে মডারেটদের দিয়ে। এখনো শিল্পী সমাজ সব দেখেও ভোটের প্রচারণায় ক্ষ্যাপ খাটছে। লেখকরা বাংলা একাডেমীর মেডেল ঝুলিয়ে হাঁটে! দেশে যারা ফোক ফেস্টিভ্যাল করে তারা কোথায়? বয়াতী হাত জোর করে ক্ষমা চাইছে ইসলামপন্থীদের কাছে। রিতা বয়াতীর দুটি ভীত মেয়ের ছবি দেখে যারা আরো বেশি করে নিজেদের সুরক্ষিত করতে আরো বেশি করে সতর্ক হচ্ছে,  লেখায়, আঁকায়, ফিল্মে তারা কেউ রেহাই পাবে না। আর যারা এগুলোকে মদদ দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে তাদের পরিণতি হবে আরো ভয়ংকর!

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted