“বর্তমান ভারতের আইনি ব্যাবস্থা”--- "ফতোয়া-ই- আলমগিরি"
মৃনালানন্দ হিন্দু
১৯৪৭ সাল থেকে আমরা এক স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। স্বাধীন ভারতে এক স্বাধীন আইনী ব্যাবস্থা চালু হবে সেটাই উচিত। কিন্তু তাই কি?
আমি কথায় কথায় বৈদিক যুগে চলে যাই, সেটা আমার এক বদ অভ্যাস। কারন ‘হিন্দুদের দেশ’ ভারতবর্ষের কথা মনে এলেই আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে বেদ বেদান্ত উপনিষদ এই সব। কিন্তু ১০০০ বছরের পরাধীনতার পর, স্বাধীনতার পরেও এক দেশ দুই আইন কোথা থেকে এলো????????
‘মনু সমহিতা’ এক বহু প্রাচীন ‘আইনি ব্যাবস্থা’ সেই বৈবষত্ব মনুর সময়ে এক আইনি ব্যাবস্থা চালু হয়েছিলো, যা মুলত তৈরী হয়েছিলো, শ্রুতি (বেদ) এবং স্মৃতি শাস্ত্র থেকে। তাছাড়া ছিলো ‘আচার’, এবং ‘আত্মতুষ্টি’। মনু সমহিতার আগে এর নাম ছিলো ‘মানব ধর্ম শাস্ত্র’। ভৃগুমুনি ১০০০০০ শ্লোকের এই শাস্ত্র মানুষের কল্যানের জন্য প্রচার করার দ্বায়িত্ব দেন ১০ জন ঋষি এবং মুনিকে। সেই মতো চলে আসছিলো ‘হিন্দু সমাজ’।
রাজসভায় ‘আইনি পন্ডীতদের সংগে আলোচনা করে রাজা ‘বিচার করতেন। তাছাড়া সাধারন মানুষ স্থানীয় শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ দের থেকেও বিচার নিতেন। প্রাচীন বৈদিক সমাজ সেই ভাবেই চলে এসেছিলো
এই ‘মানব ধর্ম শাস্ত্র’ ভিত্তিক বিচার ব্যাবস্থার আমুল পরিবর্তন হলো বাদশা আলম গীরের (আওরংজেব) এর সময়। ইতিপুর্বে মুসলমান শাসকেরা মুলত ‘আরবী হাদিস’ থেকে এবং তাদের নিজেদের মনে যা আসতো সেই মতো বিচার করতো। মুসলমান হলে সাত খুন মাফ, বিধর্মী হলে অন্য শাস্তি। সেই বিচার ব্যবস্থায় কোনো মানবিকতা ছিলো না। আকবরের ( মহান) সময়ও তিনি যা খুশী সেই বিচার করতেন। ফতেপুর সিক্রি তে আছো আছে শাস্তি প্রাপ্ত অপরাধীরকে পাগলা হাতির পায়ের তলায় পিষে মারার ব্যাবস্থার নিদর্শন এবং সেই হাতির কবরস্থানের ওপরে একটি স্মৃতি স্তম্ভ।
প্রচন্ড ভাবে মুসলিম “আলমগীর” তৈরী করলেন এক অভুতপুর্ব আইনি ব্যাবস্থা। যা ইতিহাসে “ফতোয়া –ই- আলমগিরি’ নামে খ্যাত। তিনি মদিনা থেকে ৫০০, দক্ষিন পুর্ব এশিয়া (বর্তমান ভারত, পাকিস্তান , বাংলাদেশ) থেকে বেছে নিলেন ৩০০, ইরাক থেকে ১০০ এবং সৌদি আরবে্র হেজাজ থেকে ১০০। এই ১০০০ মুসলিম পন্ডিত মিলে তৈরী করলেন “ফতোয়া-ই- আলমগিরি’ সপ্তদশ শতকে। সেই আইন চালু হলো ‘হিন্দুস্তানে’, যখন প্রায় সমস্ত ভারত আওরংজেবের শাসনাধীনে। এই আইনের বিশদ বিবরন দিলে আমার জেল খাটতে হবে, তাই বিরত থাকলাম। শুধু জেনে রাখুন ‘বিধর্মী—হিন্দু, জৈন, শিখ, বৌদ্ধ ইত্যাদি’ দের যে কোনো মহিলাকে ‘দাসী রুপে’ রাখা এবং তাকে নিয়মিত শয্যা সংগীনি করা আইন সিদ্ধ ছিলো। আবার একজনে্র “যৌন দাসী’ কে অন্য কোনো মুসলিম, দাসীর মালিকের অনুমতি নিয়ে যৌন সংসর্গ করায় কোনো বাধা ছিলো না। এর বেশী আর কিছু না বলাই ভালো।
এবার এলো ইংরেজ। তারা এই আরবী, পারসী ভাষায় প্রচলিত আইনের মাথা মুন্ডু কিছু বুঝতে পারলো না। আরবীয় প্রথা এবং ধর্মীয় গোড়ামী, নিষ্ঠুরতার সঙ্গে মিল করে আইন প্রনয়ন প্রায় অসম্ভব। ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করে “ফতোয়া-ই- আলমগিরি’ র প্রায় হুবহু আইন চালু হলো। কারন, মুসলমানরা তো বটেই, হিন্দুরাও মুসলমানী শাসনে নিজেদেরকে ওই “ফতোয়া-ই- আলমগিরি’ তে অভ্যস্ত হয়ে গেছিলো।
হিন্দুদের মধ্যে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ছাড়া নিজস্ব কোনো আইন আর রইলো না। ‘দাসদের আবার আইন কি? প্রভু যা বলেন সেটাই আইন, তাই মানতে হবে”। ইংরেজরা অবশ্য বেশ কিছু আইন পরিবর্তন করে একটু মানবিক রুপ দিয়েছিলো।
এলো খন্ডিত দেশের স্বাধীনতা। ভারতের এক তৃতীয়াংশ সেই “ইসলামিক রাষ্ট্র’, অর্থ্যাত “ফতোয়া-ই- আলমগিরি” অধীনে ফিরে গেলো। বাকী অংশ “ভারত মানে হিন্দুস্তান” পুরানো ‘ফতোয়া-ই- আলমগিরি’ এবং ইংরেজদের মিশ্রনে তৈরী আইনে চলছে।
এক দেশ দুই আইন। কি সুন্দর ব্যাবস্থা!!!!!!!! একেই বলে ‘অসাম্প্রদ্বায়িকতা।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................