ধীরেন্দ্রনাথ ও তাঁর পুত্র দিলীপ দত্তকে ময়নামতী ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়।

ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে মনে আছে? ১৯৭১ সালে তাঁকে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়েছিল। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলার অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রথম থেকেই সরব ছিলেন তিনি।

১৯৪৮ সালে, ঢাকার রেসকোর্স ময়দান থেকে মহম্মদ আলি জিন্নাহ ঘোষণা করলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। অন্য কোনও ভাষা নয়। এব্যাপারে কোনও সংশয়-দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে যারা, তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। 

জিন্নাহর এ ঘোষণা বহু বাংলাভাষী মেনে নিতে পারেননি। তাঁদেরই একজন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি তৎকালীন পাক প্রশাসনের কাছে দাবি জানান বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। আমৃত্যু স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথকে ১৯৭১ সালে হত্যা করা হয়। 

১৮৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ। প্রাথমিক পড়াশুনো ঢাকায়। উচ্চতর শিক্ষালাভ করেছিলেন কলকাতার রিপন কলেজে। ছাত্রাবস্থা থেকেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। ১৯৪৬ সালের ভোটে কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচন লড়ে মনোনীত তৎকালীন বাংলা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন ধীরেন্দ্রনাথ। স্বাধীনতার পরে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে যোগ দেন একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিক হিসেবে। ১৯৫৪ সালে, পূর্ব পাকিস্তানে গভর্নরের শাসন জারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে  অনাস্থাপ্রস্তাব এনেছিলেন তিনি। ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ধীরেন্দ্রনাথ পাকিস্তানের আতাউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। 

১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময়ে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে পাক সরকার গৃহবন্দি করে রাখে। কিন্তু সে বন্দিদশা বাঙালি জনগণের মুক্তি আন্দোলনে সংহতিজ্ঞাপন থেকে তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার কিছুদিন আগে, ধীরেন্দ্রনাথ ও তাঁর পুত্র দিলীপ দত্তকে ময়নামতী ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়। তাঁর স্মৃতিকে জাগরূক রাখতে ধীরেন্দ্রনাথের বাড়ির সামনের রাস্তাটি তাঁর নামাঙ্কিত করা হয়েছে।

রফিক-সালাম-বরকতকে তাও কিছুটা মনে রেখেছে বাঙালি। তবু এই প্রজন্মের কাছে তাঁদেরও নতুন করে পরিচয় দরকার।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted