তবুও এরা সেক্যুলার !

তবুও এরা সেক্যুলার !

২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে, নচিকেতা, বাংলাদেশে বেড়াতে এসে দেখতে যান তার পৈতৃক ভিটা, যেটা কিনা ঝালকাঠি জেলায় অবস্থিত। নচিকেতার বাবা ১৯৪৫ সালে 


মুসলমানদের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে কোলকাতায় পালিয়ে গেলে, তার সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখল করে নেয় এদেশের মুসললমানরা। মুসলমানদের কাছে ভিটে-মাটি হারানো পরিবারের সন্তান, নচিকেতা, পিতা-মাতার প্রতি হওয়া মুসলমানদের অত্যাচারের কথা ভুলে গিয়ে বর্তমানে কোলকাতার সবচেয়ে বড় মানবতাবাদী শিল্পী। ২০০২ সালের গুজরাটের গোধরা দাঙ্গা, যে দাঙ্গা শুরু হয় মুসলমানরা পরিকল্পনা করে ট্রেনে আগুন লাগিয়ে ৬৯ জন হিন্দুকে পুড়িয়ে মারার ফলে, সেই দাঙ্গাকে ব্যঙ্গ করে নচিকেতা তার গানে বলেন,....

‍"তুমি আসবে বলে দেশটা এখনো গুজরাট হয়ে যায়নি।‍"

অথচ এই নচিকেতা তার গানে প্রশ্ন তোলে না, কেনো আমার বাবার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষকে সব কিছু ফেলে শুধু প্রাণ বাঁচাতে তাদের জন্মভূমি পূর্ববঙ্গ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে আসতে হয়েছিলো ? এখনও কেন বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্মভূমি ত্যাগ করতে হচ্ছে ? নচিকেতার দৃষ্টিতে হিন্দুরা যদি মানুষ হতো, তাহলে এই মানবতাবাদী শিল্পী নিশ্চয়, সেই প্রশ্নগুলো তুলতো।

পোস্টের সাথে যে ছবিগুলি দিয়েছি, সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে এবং সেই সময়ের পত্রিকাতেও বেরিয়েছিলো, নিজের বাপের ভিটা, যে ভিটা অলরেডি মুসলমানদের দখলে, সেই ভিটায় বসে নচিকেতা কেঁদেছেন। 

আমার প্রশ্ন হচ্ছে তাকে কাঁদতে হবে কেনো ? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে, নচিকেতা বলেছিলেন, ভিটে মাটি সব দখল হয়ে গেছে, তাতে দুঃখ নেই।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তাতে আপনার দুঃখ থাকবে না কেনো ? আপনার বাবার সম্পত্তি কিছু লোক দখল করে খাচ্ছে, তাতে আপনার কিছুই করার বা বলার নেই ? আপনি যদি অপনার বাপের মেয়ে হতেন, তাহলে হয়তো এই কথা বলা অপনার মুখে কিছুটা শোভা পেতো। কিন্তু পিতার প্রতি হওয়া অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিশোধ না নেওয়া বা তার বিরুদ্ধে কথা না বলা কোনো পুত্রের শোভা পায় না। কারণ, পুত্রের জন্মই হয়, পিতার আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং পিতার উপর হওয়া অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে ও প্রতিশোধ নিতে। আপনার পুরুষ জন্ম ব্যর্থ।

নচি আরও বলেছিলেন, সরকার যদি তাদের দখল হওয়া সম্পত্তিগুলো উদ্ধার করতে পারে, তাহলে সেখানে যেন একটা হাসপাতাল নির্মান করেন, তাহলেই তিনি খুশি।

-আপনি কিভাবে ভাবলেন, যে মুসলমানরা আপনার বাপের সম্পত্তি দখল করে এতোদিন ধরে খাচ্ছে, সেই জমি তারা ফেরত দেবে ? আর বাংলাদেশ সরকার যদি এতই মহান হতো, তাহলে আপনার বাবার মতো প্রাণের ভয়ে পালানো লক্ষ লক্ষ হিন্দুর সম্পত্তিকে বাংলাদেশ সরকার শত্রু সম্পত্তি বলে গণ্য করতেন না।

সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ আপনার বাবার জন্মভূমি, সেই ভূমিতে আসতে আপনাকে পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে আসতে হবে কেনো ? এই প্রশ্নগুলো আপনার গানে আপনি কোনো দিন করেন নি কেনো ? নাকি এই প্রশ্নগুলো তুললে, মুসলমানরা আপনার গান শুনবে না, আপনার অ্যালবাম বিক্রি কমে যাবে, সেজন্য ? 

আপনি অনেক বড় মানবতাবাদী শিল্পী, কিন্ত বাংলাদেশ থেকে যে লোকগুলো শুধু সম্মানের সাথে বাঁচার জন্য ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে এবং এখনও যাচ্ছে, তাদেরকে কি আপনার মানুষ বলে মনে হয় না ? তাদের পক্ষ হয়ে একটা কথাও এ যাবৎ আপনি বলেছেন ? হিন্দু হিসেবে না হয়, না ই বললেন, কিন্তু মানুষ হিসেবেও তো বলতে পারতেন ? এই ভিটে-মাটি ছেড়ে পালানোর দলে তো আপনার বাবাও ছিলো, আপনার বাবাকেও কি আপনি মানুষ বলে মনে করেন ? না, নিজে ভেড়া হয়ে এটা প্রমান করছেন যে, আপনার বাবাও একটা ভেড়া ছিলো ।

নায়িকা শ্রাবন্তীও একবার খুব গর্বের সাথে প্রকাশ করলো যে, সে বরিশালের মেয়ে; কারণ, তার বাপ ছিলো বরিশালের। শোনা যায়, ফাটাকেষ্ট মিঠুনও নাকি বরিশালের। দেশভাগের আগে ও পরে মুসলমানরা এরকম লক্ষ লক্ষ হিন্দুর সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তাদেরকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এই বিতাড়িত জাতির বংশধরদের এ নিয়ে না আছে কোনো জ্বালা, না আছে কোনো যন্ত্রণা। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আছে বেশ গর্ব ! বাংলাদেশ থেকে কেউ কেউ আবার পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে গিয়ে গর্বের সাথে প্রতিবেশিদের কাছে বলে, ওখানে আমার এই ছিলো, সেই ছিলো। এরা যে কী পরিমাণ স্টুপিড, সেটা ভেবে আমি আশ্চর্য হই। এরা এটাও বোঝে না যে, যে বা যারা আত্মরক্ষা করতে পারে না, নিজ জন্মভূমিতে টিকে থাকতে পারে না, তাদের আত্ম অহংকারেরও কোনো মূল্য নেই। আর এরা বোধহয় এটাও জানে না, যে কোনো কিছু নিয়ে গর্ব করার আগে, নিজের পায়ের তলার, নিজের জন্মভূমির মাটিতে, নিজের অবস্থান আগে শক্ত করতে হয়। জন্মভূমি থেকে যারা বিতাড়িত হয়, তাদেরকে বলে উদ্বাস্তু; আর উদ্বাস্তুদের না থাকে সম্মান, না থাকে কোনো গর্ব করার বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুরা, উদ্বাস্তু হয়ে পশ্চিমবঙ্গে গিয়েও তাদের গর্ব ও অহংকারের শেষ নেই। এমন নির্বোধ, হীনদুর্বল ও নপুংসক জাতি, মনে হয়, সারা পৃথিবী খুঁজলেও আর একটা পাওয়া যাবে না। এদের কেউ কেউ আবার বাংলাদেশে এসেও মিডিয়ার সামনে বেশ গর্বের সাথে বলে, এই দেশেই আমার জন্ম বা আমার বাবার বাড়ি এই দেশেই ছিলো। মানুষ হিসেবে এদের জন্ম যে কেনো হয়েছে, সেটাই তো আমি ভেবে পাই না। 

নচিকেতা, শ্রাবন্তী বা মিঠুন এক একটা উদাহরণ মাত্র। এদের মতো মন-মানসকিতার মানুষ পশ্চিমবঙ্গে আছে লাখ লাখ, যারা সবাই মুসলমানদের হাতে সর্বস্ব হারিয়ে পূর্ববঙ্গ থেকে বিতাড়িত হওয়া উদ্বাস্তু বা উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তান; কিন্তু পূর্ব পুরুষের প্রতি হওয়া অত্যাচার নির্যাতনের কথা ভুলে গিয়ে আজ তারা মহান মানবতাবাদী, সেক্যুলার। কিন্তু অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা না বলে, সেই সব অত্যাচারীর পক্ষ নিয়ে মানবতার কথা বললে যে পূর্ব পুরুষের প্রতি অসম্মান করা হয়, সেই বোধটুকুও এদের নেই। এরা কি মানুষ, না অন্য কোনো প্রজাতির প্রাণী ??

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted