ভারতের দিল্লী চুলকাবেন নিশ্চই : অধুনা বাংলাদেশ চুলকাবেন না ?

ভারতের দিল্লী চুলকাবেন নিশ্চই : অধুনা বাংলাদেশ চুলকাবেন না ?
----------------------------------------------------------------------------
আপনেরা দিল্লীর ঘটনায় উত্তেজিত প্রতিবাদী কিন্তু নিজ বাসভূমি অধুনা বাংলাদেশের ইতিহাসটাও একটু ঘেঁটে দ্যাখেন ! উস্কানি দিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন কি এই ভৌগলিক অঞ্চলে নতুন নাকি ? পূর্ব পাকিস্তান, তদুপরি বাংলাদেশ, কোনটাতেই তো এর খামতি হয় নি ! কিছুদিন আগে রংপুরে ইসলাম অবমাননার অছিলায় খান তিরিশেক হিন্দুর ঘর পুড়েছে আর লুঠপাঠ হয়েছিল। ছাড়েন তো ! এইগুলা হামেশাই হয়ে এসেছে ওই ভৌগোলিক অঞ্চলে । বিশ্বাস হচ্ছেনা ? কেন, কয়েকদিন আগে গুজব ছড়ানো হয়নি রাজধানী ঢাকার বাড্ডার এক মন্দিরের পুরোহিত কোরান পুড়িয়েছে ? ঢাকার গেন্ডারিয়াতে নাকি হিন্দুরা মুসল্লিদের মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছে ! মসজিদে নামাজ পড়তে দিচ্ছে না। আদতে দেখা গেছে সেখানে মসজিদ তৈরীই হয়নি ! নির্মাণ কাজের জন্য টাকা তোলা শুরু হয়েছে মাত্র। গুজব ছড়িয়ে,উসকানি দিয়ে সংখ্যালঘু নিধনের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। বাংলাদেশের ভূমিতে বাঙালি মুসলমানরা যে এরকম হাজারো গুজব ছড়িয়ে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সবকিছুই বদলে দিয়েছে; দেশের মানচিত্র থেকে তারা অমুসলিমদের সরিয়ে দিচ্ছে, স্ট্রাটেজি মেনে । শুরুর গোড়ায় ধরি ? তাহলে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত শুনুন:

১. নোয়াখালী হিন্দু নিধন :
স্থানঃ বৃহত্তর নোয়াখালী, ১৯৪৬:
-------------------------------------
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মুসলিম লীগ ও সাঙ্গপাঙ্গরা গুজব ছড়ায় যে, হিন্দুরা তাদের বাড়িতে অস্ত্র মজুদ করছে, তারা মুসলমানদের ওপর আক্রমন করবে। ফল: কোজাগরি লক্ষী পূজার দিন থেকে নিয়ে কিছুদিন ধরে হিন্দুদের হত্যা, ধর্ষন ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ চলতেই থাকে। চলতে থাকে বীভৎস ও বিকৃত কর্মকাণ্ডও। রাজেন্দ্রলাল রায়চৌধুরী নামে এক জমিদার, তার পরিবার ও সাঙ্গপাঙ্গদের খুন করার পরে হত্যাকারীরা চৌধুরীর রক্তমাখা মাথা বড় খাবারের প্লেটে করে পরিবেশন করে । প্রায় ৫,০০০ হিন্দুর মৃত্যু; অগনিত ধর্ষন; হিন্দুদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ। ধর্মান্তরকরণের ব্যাপারে সংসদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের এক প্রশ্নের জবাবে মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহওয়ার্দী প্রায় দশ হাজারের কথা উল্লেখ করেছিল, কিন্তু বাস্তবে ছিলো তার চেয়ে ঢের বেশি।

২.ঢাকায় হিন্দু নিধন ও গণহত্যা :
স্থানঃ ঢাকা শহর ও বৃহত্তর ঢাকা, ১৯৫০:
---------------------------------------------
১৯৫০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও কোলকাতার মধ্যে চিফ সেক্রেটারি লেভেলে মিটিং হচ্ছিলো। কোলকাতা থেকে এসেছিলেন কোলকাতার চিফ সেক্রেটারি সুকুমার সেন। সকাল দশটার দিকে ভিতরে যখন মিটিং হচ্ছিলো তখন সচিবালয় এলাকায় রক্তমাখা শাড়ি পরা এক নারীকে নিয়ে মিছিল হয় এবং গুজব রটানো হয় যে, পশ্চিমবঙ্গে ঐ নারী হিন্দুদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। সাথে সাথে সচিবালয়ের সকল কর্মচারীরা বাইরে নেমে আসে এবং হিন্দুবিরোধী মিছিল দিতে থাকে। সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি লুটপাট, পোড়ানো, হত্যা। এরই মধ্যে বরিশাল থেকে আরেকদফা দাঙ্গা শুরু হয়। মার্চ মাস পর্যন্ত এই হত্যা ও নির্যাতনযজ্ঞে বহু হিন্দু প্রাণ হারিয়েছিল ও নীট ফল ৫০-৮০ হাজার হিন্দুদের দেশত্যাগ।

৩.বরিশাল গণহত্যা ও হিন্দুনিধন :
স্থানঃ বৃহত্তর বরিশাল ও সারা বাংলাদেশ ১৯৫০:
---------------------------------------------------
১৯৫০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে দু’জন অচেনা যুবক গুজব রটায় যে, পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতায় হিন্দুরা এ.কে. ফজলুল হককে হত্যা করেছে। ঐ দিন রাতেই বরিশাল শহরে হিন্দুদের দোকান-পাট ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় ভয়ংকর তাণ্ডব। ফলাফলঃ ৬৫০০ নিহত ও ৬৫০,০০০ হিন্দুর দেশত্যাগ। আনসার বাহিনী নিরাপত্তা তো দেয়ই নি, উল্টে দাঙ্গাকারীদের সাহায্য করেছিল । দেশত্যাগী হিন্দুদেরকে পথে পথে লুট করা হয়েছিল, যাতে তারা বাংলাদেশ থেকে কিছুই না নিয়ে যেতে পারে।

৪.খুলনা তথা পূর্ব পাকিস্তান হিন্দু গণহত্যা:
স্থানঃ খুলনা ও সারা বাংলাদেশ ১৯৬৪:
---------------------------------------------
১৯৬৪ সালের ২৭ ডিসেম্বরে গুজব রটে যে, কাশ্মিরে ‘হযরতবাল মসজিদ’-এ রক্ষিত মোহাম্মদের চুল (চুলকে হিন্দিতে বাল বলে, তাই ঐ মসজিদের নাম হযরতবাল মসজিদ) পাওয়া যাচ্ছে না এবং রটানো হয় যে, উক্ত চুলগাছি হিন্দুরা চুরি করেছে। আবদুল হাই নামে এক মুসলিম নেতা পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে। ঢাকা বিমানবন্দরে আইয়ুব খান বলে যে, সে পূর্ব পাকিস্তানের কোন কিছু ঘটলে তার দায় নিতে পারবে না। এদিকে ওর কিছু দিন আগে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবদুস সবুর খান রূপচাঁদ বিশ্বাস নামে এক হিন্দুর সাথে ৩০ বিঘা জমির মামলায় হেরে যায়। সবুর খান ঐ জমি অবৈধ দখল করে ছিলো। জমির মামলায় হারা ছাড়াও পূর্বে দখল করে থাকা বাবদ আদালত সবুর খানকে ১৩৫,০০০ রুপি জরিমানা করে। সবুর খান হিন্দুদের শিক্ষা দেয়ার একটা বড় সুযোগ পেয়ে যায়। ৩ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানে কাশ্মির দিবস পালন করা হয়। আজকের বাংলদেশে তখন উত্তেজিত মুসলমান হিন্দু হত্যায় ছড়িয়ে পড়ে। হত্যার সাথে পাল্লা দিয়ে চলে ধর্ষন। সাথে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ তো আছেই। খুলনা লঞ্চঘাটে একসাথে ২০০-৩০০ হিন্দুদের হত্যা করা হয়। ৪ জানুয়ারি মংলা পোর্টে হত্যা করা হয় প্রায় ৩০০ হিন্দু শ্রমিককে। ১৯৬৪ দাঙ্গায় নিহত হওয়া মানুষের কোন পরিসংখ্যন ইন্টারনেট সার্চ করে তেমন পাওয়া যায়না । এই দাঙ্গার পরে এতো বেশি হিন্দু খুলনা থেকে মাইগ্রেট করে যে, দেশের একমাত্র হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা খুলনা হিন্দু সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়। এছাড়া বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে প্রায় ৭৮০০০ মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়, যাদেরকে ভারত সরকার প্রাথমিকভাবে অস্থায়ী ক্যাম্পে রাখলেও পরে তারা আর বাংলাদেশে ফেরত আসতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ভারত তাদের বিরাট একটা অংশকে পূনর্বাসন করে।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted