দেশত্যাগ কথাটা মুখে বলা যতটা সহজ একজন দেশত্যাগীর জন্য আদতেই এক নির্মম বাস্তব !

NRC, CAA : এইরকম হত ভাগ্যদের জন্যই
---------------------------------------------------------
দেশত্যাগ কথাটা মুখে বলা যতটা সহজ একজন দেশত্যাগীর জন্য আদতেই এক নির্মম বাস্তব ! একটি দেশ একটি মানুষকে যেমন লালন করে, সেই মানুষটিও যে দেশে জন্মেছে তাকে অন্তরে লালন করে। তার ভাষা, জলবায়ু, আশপাশের মানুষজন, সমাজ ও সংস্কৃতি সবকিছুকেই সেই মানুষটি অন্তরে লালন করে। চরম নিপীড়নে, কঠিন পরিস্থিতিতে প্রাণনাশের আশঙ্কায় যখন কেউ দেশত্যাগ করে, তখন সে তার সমগ্র পারিপার্শ্বিকতা থেকে ছিন্নমূল হয়ে যায়। নিজের সাথে না ঘটলে এর পুরোটা বোধহয় অনুধাবন করা সম্ভব নয়। আমি যতটা সহজে ল্যাপটপের কি-বোর্ডে ১৯৫০ এর পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববঙ্গের দেশত্যাগী সংখ্যালঘুর কথা লিখছি, যারা সে সময় দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাদের জন্য বাস্তব অনেক অনেক বেশি নির্মম ছিল। এই নির্মমতা তাদের উপরে নেমে এসেছিল সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের কুলাঙ্গার বাঙালী মুসলমানের ধর্মীয় জিঘাংসার জন্য ! পাঠক, চলুন সেই নৃশংস ধর্মীয় জিঘাংসার আরো কিছু প্রকৃত ইতিহাস আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরি :

১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পুরোটাই ছিল পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুর জন্যে মূর্তিমান বিভীষিকা ! ১১ ই ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্বপাকিস্তানের জায়গায় জায়গায় চলমান ট্রেনে আক্রমণ করে কামরায় কামরায় হিন্দুদের কেটে মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এই কর্মকাণ্ড প্রায় গোটা পূর্ব পাকিস্তান জুড়েই হয়েছিল ! ১১ তারিখ সন্ধ্যেবেলা, ৮-৯ জন হিন্দু পুরুষ ও নারী টঙ্গী স্টেশনে নেমে দৌড়িয়ে দত্তপাড়াতে গোসাইবাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলো। রাত্রির আশ্রয় চায় তারা। ভৈরব থেকে ঢাকা যাচ্ছিল এই মানুষগুলো, পথিমধ্যে ট্রেন থামিয়ে কামরায় কামরায় হিন্দু হত্যা করে মৃতদেহ বাইরে ফেলে দেওয়া দেখে টঙ্গীতে ভয় নেমে পরেছে। চোখের সামনে দেখেছে একদল বাঙালি মুসলমান, ট্রেন থেকেই হিন্দু নারী-পুরুষদের টেনে নামিয়ে প্লাটফর্মে, প্রথম শ্রেণি ও তৃতীয় শ্রেণীর কামরাতে আটকে রাখছে। কামরাগুলোর ভিতর থেকে নারী-পুরুষের গোঙানির শব্দ ভেসে আসছে ! এই বাঙালি মুসলমানদের গ্যাং লিডার বিহারী মুসলমান স্টেশন মাস্টার হুমকি দিয়ে বলছে: হিন্দু আজ খতম করুঙ্গা ! একই ঘটনা ঘটলো ১২ তারিখ সকালেও। ১০-১২ জন ভীত নারী-পুরুষ দত্তপাড়া এল আশ্রয় নিতে ! আর সীতাকুণ্ডের মেলা যাত্রীদের নারকীয় হত্যাকান্ডের ইতিহাস আপনাদের আগেই বলেছি ! একই ঘটনা ঘটেছিল পূর্ব পাকিস্তানের নদীপথের সংখ্যালঘু হিন্দু যাত্রীদের সাথে। নদীবহুল পূর্ব-পাকিস্তানে স্টিমারে সংখ্যালঘু হিন্দু যাত্রীদের উপরে নেমে এসেছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ১৪ তারিখ বরিশালগামী 'নাগা' স্টিমারে হিন্দুদের হত্যা করে লাশ নদীর জলে ফেলে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের পথে ভোলা থেকে সাত মাইল দূরে ইলিশাঘাটে 'সীতাকুন্ড' স্টিমারে ৩০ জন হিন্দু যাত্রীকে হত্যা করা হয় ! 'অস্ট্রিচ' স্টিমার ২৭ তারিখ নারায়ণগঞ্জ থেকে গোয়ালন্দের পথে ভাগ্যকূলে থামলে বাঙালি মুসলমান ও আনসাররা হিন্দু যাত্রীদের 'রাজখারা' তে আক্রমণ করে। নারীদের উপরে চলে পাশবিক ধর্ষণযজ্ঞ ! দুই হাজার নির্যাতিত যাত্রীকে 'রাজখারা' নামিয়ে স্টিমার চলল ! মনিন্দ্র স্টিমারে লুকিয়ে যাত্রী হিসেবে রইল লুঙ্গি পরে মুসলমান সেজে। স্টিমারের বাথরুমে পাওয়া গেল দুজন হিন্দুকে। তাদেরকে তৎক্ষণাৎ পদ্মার জলে নিক্ষেপ করা হলো ! গোয়ালন্দ পৌঁছলে মনিন্দ্রর কানে বাজতে থাকলো ২০০০ নর-নারীর আর্তনাদ !

পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘুর উপরে এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের আগে পিছে অনেক হিসেব-নিকেশ ছিল। এটা ছিল সম্পূর্ণ সুপরিকল্পিত বাঙালি মুসলমানের ধর্মীয় জিঘাংসা ও এক ধরনের হীনমন্যতার বহিরপ্রকাশ।

বাঙালি মুসলমান এই ইতিহাস কৌশলে চেপে যায় আর বখতিয়ারের ঘোড়ায় চেপে তিতুমীরের হিরোইক জগতে চারণ করে......

[
 ](https://www.facebook.com/photo.php?fbid=912183672532938&set=a.229963767421602&type=3&eid=ARB9WvlG-_Mzf_Jyh6DqPuf49lZF9e9fNxlwqwvUtYGkeEFwggXIef9c1A5SK92Gazg-cx9Q1thEmhFT)

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted