ভারতে মজা হচ্ছে মাওলানা সাদের জন্য অরুন্ধতী রায় আছে! মাওলানা সাদ কান্ধলভী যতই তার ফলোয়ারদের বলুক করোনার অজুহাতে মুসলিমদের ঘরে আটকে রাখার রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র হচ্ছে, করোনা কাফেরদের মারতে এসেছে, করোনা আল্লার সৈনিক- তবু সাদ কান্ধলভী জার্মানির নিপীড়িত ইহুদী আর দিল্লির শাসকরা সবাই ন্যাৎসিবাদী!
অরুন্ধতী ডয়চে ভেলেতে বলছেন, ‘মুসলমানদের দমন বাড়াতে কোভিড-১৯কে কাজে লাগাচ্ছে ভারত সরকার৷ নাৎসিরাও একই কৌশল ব্যবহার করতো’।
এই মহিলা যে এখনো বলে নাই করোনা তৈরি করা হয়েছে মুসলিমদের হত্যা করতে এটাই বড় কথা!
ভারতে সব ধর্মের লোকজনই করোনা লকডাউন ভেঙ্গেছে কমবেশি। শিখ ধর্মগুরু থেকে মন্দির, শেষে গরুর শেষকৃত্যের শোভাযাত্রা করেও লোকজন করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এগুলোর সবকাটাই তীব্র সমালোচনা ট্রল প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু মুসলিম ব্যতিত কেউ বলেনি এটা মুসলিমদের হত্যা করতে আসেনি, এটা এসেছে অমুসলিম কাফেরদের হত্যা করতে। সাদের অনুসারীরা কোয়ারেন্টিনে গিয়ে যেভাবে নার্সদের সামনে উলঙ্গ হয়েছে, থুতু ছিটিয়ে করোনা প্রসঙ্গকে হাইলাইট করেছে তেমনটা কি আমরা অন্য কোথাও দেখেছি?
ইংলেন্ডে ইসকনের মন্দিরে লোক সমাগমের কথাও উঠেছে। সেটা তো ইতালিতে চ্যাম্পিয়নস লীগের ম্যাচ আয়োজন নিয়েও কথা হচ্ছে। বলা হচ্ছে ইন্টার মিলানের ঐ ম্যাচের মাধ্যমে বড় আকারে করোনা সংক্রমন ছড়িয়েছিলো। কিন্তু কেউ কি অভিযোগ করেছে উফেফা করোনা ছড়িয়ে দিয়েছে ইচ্ছে করে? ইসকনের অনুষ্ঠান আয়োজন ছিলো করোনাকে গুরুত্ব না দেয়া। সেটা তো ডোনাল্ড ট্রাম্পও করেছেন! কিন্তু কোথাও কি এমন ঘটেছে- করোনা বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের উপর কিছু করবে না, এটা শুধু অমুক তমুকদের মারবে তাই এটা ছড়িয়ে দাও…।
হ্যা, বাংলাদেশের শত শত ওয়াজের ভিডিও পাওয়া যায় যেখানে বলা হয়েছে কাফেরদের মারতে এসেছে করোনা। সাদের বাংলাদেশী অনুসারী তাবলীগ জামাত ও বাংলাদেশী মাওলানা জুবায়ের অনুসারী তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপই তাদের নিয়ন্ত্রিণ মসজিদ থেকে সবাইকে বলেছে, করোনা নিয়ে মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। একটি মুসলিমও ঈমান নিয়ে থাকলে আক্রান্ত হবে না। এটা আল্লার তরফ থেকে অমুসলিমদের প্রতি প্রতিশোধ…।
জার্মানির ইহুদীরা এভাবেই কি বাকী জার্মানদের প্রতি ঘৃণা প্রচার করেছিলো? জার্মান ইহুদীরা কি রাষ্ট্রীয় নির্দেশকে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মনে করত? তারা একই রাষ্ট্রে তাদের নিজেদের জন্য আলাদা আইন চাইত? তারা কি জার্মান ভাগ করতে বলত? অরুন্ধতী কাদের সঙ্গে মৌলবাদী ধর্মান্ধ মুসলিমদের তুলনা দিচ্ছেন?
বাদ দেই জর্মানির ইতিহাস। এখন পর্যন্ত করোনায় মন্দির গির্জা সব বন্ধ আছে। মসজিদ কেন অল্প সংখ্যক মানুষ নিয়ে খোলা থাকবে? ভারত তো মুসলিম কোন রাষ্ট্র নয় তবু কোলকাতায় কেন ইমাম কমিটিকে দিয়ে বলাতে হয় রমজানে বাড়িতে তারাবী পড়েন? পশ্চিম বঙ্গের সরকারের তো এক ঘোষণাই যথেষ্ট। তারপরও তারা পৃথিবীতে সবচেয়ে নিপীড়িত সংখ্যালঘু!
এই করোনা ক্রান্তিকালে অরুন্ধতি অভিযোগ তুলেছেন ভারত সরকার করোনা দিয়ে মুসলিমদের গণহত্যা করে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ভারত তো হিন্দু রাষ্ট্রই! ভারত হিন্দু রাষ্ট্র না হলে ভারতের শিখ খ্রিস্টান জৈন বৌদ্ধ পার্সি ইহুদীদের ঠাই কোথায় হবে? ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হলে ভারতের মুসলমানদের সমস্যা কি? এই প্রশ্নের জবাব কিন্তু কেউ সোজাসুজি দেয় না। ৫৭টা মুসলিম রাষ্ট্র হওয়াতে ঐ অঞ্চলগুলোর অমুসলিমদের কি কি সমস্যা হয়েছে তেমন কোন গবেষণাও কিন্তু এই বুদ্ধিজীবীদের করতে দেখবেন না। ভারতে অখ্রিস্টান কিংবা অশিখ কিংবা অবৌদ্ধ বলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের সঙ্গে কিন্তু ঐ সম্প্রদায়গুলোর বিবাদ নেই। শুধু মুসলিমফোবিয়া, মুসলিম বিদ্বেষ ছাড়া আর কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ নেই।
কেন ভারত মুসলিমদের ধর্মান্তরিত করার সুযোগ দিবে? কেন তাবলীগ জামাত চলতে দিবে? কোন গণতান্দ্রিক সেক্যুলার সমাজ কি ইসলামের মত তীব্র জাতি বিদ্বেষ একটি বিশ্বাসকে তার জনগণের মধ্যে প্রচার করতে দিতে পারে? ভারত যেহেতু কোন মুসলিম দেশ নয় ভারত ইসলামিক প্রচার প্রসারের কোন সুযোগই দিবে না!
করোনা সংকটের সময় অরুন্ধুতির ‘ভারতে ইসলামফোবিয়া’ চলছে বলাটা বিশেষ পরিকল্পনা মাফিকই মনে হয়। তিনি যখন ডয়চে ভেলেতে বললেন বিশ্বকে ভারতের দিকে নজর দিতে হবে এই ইসলামফোবিয়ার দিকে ঠিক তারপরই ইসলামিক মিডিয়াগুলো এগুলো প্রচার করে শোরগোল তোলে। তারপর ওআইসি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়। এই ওআইসি কিন্তু একবারও সারা বিশ্বে মসজিদগুলো করোনা প্রতিরোধে বন্ধ করতে কোন বিবৃতি দেয়নি। তারা চুপ করে ছিলো যখন মসজিদ বন্ধ রাখা হবে কিনা এমন বিতর্ক উঠেছিলো। কিন্তু ভারতে কথিত ইসলামফোবিয়া নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে! মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেয়ার পরই মূলত আরব বিশ্বে ভারতের শ্রমবাজারকে টার্গেট করে ওআইসি কারোকে দিয়ে খেলাচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক ধনকুবের টুইট ছিলো ভারতীয়দের তার দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে যদি ইসলাফোবিয়া বন্ধ না করা হয়। এটা আসলে মাওলানা সাদের সাঙ্গপাঙ্গদের ছেড়ে দেয়ার থ্রেট। ভারতকে ব্যবসার জন্য শ্রমবাজার ধরে রাখার জন্য জিহাদী কানেকশন চালাতে দিতে হবে অবাধে। ধর্মান্তকরণের মিশন জোরেশোরে চালাতে দিতে হবে। অরুন্ধতিদের কিন্তু এতে কোন সমস্যা নেই। ইসলামিকদের সঙ্গে তাদের কাজ করতে কোন আপন্তি নেই। তারা মিলেমিশে কোয়ালিশনও করতে পারবে। ভারতের তাই বিদেশী শত্রুর চাইতে নিজের অভ্যন্তরের শত্রুই বড় থ্রেট। জিহাদীদের অমুসলিম বামপন্থি মুখপাত্র ভারতের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীতেই রয়ে গেছে…।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................