বাঙালির বিবর্তনের নমুনা।
প্রথম দিনঃ হ্যালো ফ্রেন্ডস... করোনা ভাইরাস হইলো আল্লাহর গজব। ইহুদি খ্রিষ্টানেরা মুসলমানদের উপর অনেক নির্যাতন করছে। দেখেন না কিভাবে চীন আর ইউরোপের বিধর্মীরা গণহারে মরতেছে। আল্লাহর মাইর শেষ রাইতে। ইহুদি নাসারাদের আর রক্ষা নাই।
দ্বিতীয় দিনঃ হ্যালো ফ্রেন্ডস, এই করোনা ভাইরাস ইহুদি খ্রিষ্টানরাই তৈরি করছে। আল্লাহ না। যাতে মুসলমানরা মসজিদে যাইতে না পারে। কিন্তু, মুসলমানদের শরীরে যতোক্ষণ একবিন্দু রক্ত আছে, আমরা নামাজে পড়তে মসজিদে যাবোই। আগামীকাল জুম্মাবার। সবাইকে মসজিদে দেখতে চাই।
তৃতীয় দিনঃ জুম্মার নামাজে শত শত মুসল্লী নামাজ পড়লো। কিন্তু কই কারো তো করোনা হইলো না। এতে প্রমাণিত হয়, করোনা ভাইরাস মুসলমানদের কিচ্ছুই করতে পারবে না। আসলে, এটা আল্লাহরই একটা খেলা। করোনা তৈরিই হইছে ইহুদি খ্রিষ্টানদের জন্য। যেমন করে আবাবিল পাখি দিয়া আল্লাহ আবরাহা বাদশারে ধ্বংশ করছিল, তেমনি এই ভাইরাস দিয়া এখন ইহুদি খ্রিষ্টানদের সাইজ করবো।
চতুর্থ দিনঃ শুনতেছি, করোনায় নাকি অনেক মুসলিম রাষ্ট্রও ভয় পাচ্ছে। আমি বলবো, এরা মুসলমান নামের কলঙ্ক। মুসলমান কেবল আল্লাহরে ভয় করবে, কোনো ভাইরাসকে ভয় করতে পারে না। আর করোনা হইলো আল্লাহর সৈনিক। আর আমরা হইলাম আল্লাহর বান্দা। তাই এত দুর্বল ইমান নিয়া চলবেন না। আমরা হলাম মুসলমান, ইহুদি খ্রিষ্টান না।
পঞ্চম দিনঃ আজকে একজন আমারে মাস্ক পড়তে বললো। আমার প্রচন্ড ঘৃণা হয় এমন মুসলমান দেখে। আল্লাহর ভয় নাই, অথচ করোনারে ভয় পায়! আমি শপথ করে বলছি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি মাস্ক পড়বো না। আসমানের নিচে জমিনের উপরে আমি কেবল আল্লাহকেই ভয় পাই। অন্য কিছুকে না। তাদেরকে বলে দিও। যে রক্তে আল্লাহ রাসুলের জিকির চলে, সে রক্তে করোনা ধরতে পারবে না, পারবে না।
ষষ্ঠ দিনঃ শুনলাম মক্কা মদিনা কারফিউ জারি করেছে সেদেশের জালিম বাদশাহ। আল্লাহর লানত তাদের উপর! তারা এতো নিচে নামতে পারলো? একটা বিষয় পরিষ্কার। করোনা ইহুদি খ্রিষ্টানদেরই চক্রান্ত। এটার উছিলায় তারা কাবা ঘরকে বন্ধ করেছে। আল্লাহ তুমি সবি দেখছো, শুনছো। তোমার কাছে বিচার দিলাম। তুমি সৌদির বাদশারে হেদায়েত দাও।
সপ্তম দিনঃ কাবা ঘর বন্ধ তাতে কী হয়েছে? আল্লাহর রহমতে পাখিরা কাবা তাওয়াত করা শুরু করে দিয়েছে, আজ একটা ভিডিও দেখলাম। সাদা রঙের পাখিগুলো কত সুন্দর করে কাবার উপর দিয়ে তাওয়াফ করছে। অবশ্য আগে জানতাম কাবার উপর দিয়ে কোনো পাখি উড়তে পারে না। যাই হোক, এটা ব্যাপার না। এখন তো উড়ছে, এটাই বড় কথা। সবি আল্লাহর ফায়সালা।
অষ্টম দিনঃ ফ্রেন্ডস, আজ আরেকটা ভিডিও দেখলাম। শত শত বছর ধরে যে স্পেনে আজান বন্ধ, সেই স্পেনে আজকে আজান হচ্ছে। মুসজিদের সামনেই দেখলাম বিশাল লাইন। দলে দলে ইহুদি খ্রিষ্টানের দল মুসলমান হতে চাচ্ছে। আর চীনের মসজিদগুলো খুলে দিয়েছে সেদেশের সরকার। তারাও দলে দলে মুসলমান হচ্ছে। আল্লাহর খেলা বোঝা বড় দায়। দুঃখ একটাই, বিধর্মীরা মসজিদ খুলে দিচ্ছে, আর আমাদের মুসলমান নামধারী সরকারগুলো কাবা শরীফ বন্ধ করে দিচ্ছে।
নবম দিনঃ শুনলাম, সব ধরণের লোক জমায়েত নাকি নিষিদ্ধ করেছে? যদি তাই হয়, আমি বলবো, তোদের মনে বিন্দুমাত্র ঈমান নাই। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, করোনা ভাইরাস মুসলমানকে ধরবে না, ধরবে না। তোরা যে করোনার ভয়ে ঈমান দুর্বল করে ফেলেছিস, এটাও কেয়ামতের লক্ষণ। চৌদ্দশত বছর আগেই রসুল এটা বলে গিয়েছেন। অবশ্য হাদিসটা এখন ভুলে গেছি। যাইহোক, এখনও সময় আছে ভাই, ঈমান শক্ত করুন।
দশম দিনঃ কিছু নাস্তিকের বাচ্চা বলছে মসজিদ বন্ধ করে দিতে। মুসলমান নামধারী কিছু মুনাফিকও দেখি তাদের কথায় তাল মিলাচ্ছে। আমি বলি কি, তোরা কি মুসলমানের সন্তান না? করোনা ধরলেই তোদেরকেই ধরবে। যদি কোনে মুসলমান করোনায় মারা যায়, বুঝবেন সে মুনাফিক ছিল। কথা পরিষ্কার। মুসলমান আর মসজিদের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হতে দিবো না।
এগারোতম দিনঃ এইমাত্র জানতে পারলাম, একজন মুসলমান নাকি করোনা আক্রান্ত হয়েছে। আমি আগেই বলছিলাম, এটা ইহদি খ্রিষ্টানদের কাজ। তারাই করোনা ভাইরাসটা ল্যাবরেটরিতে তৈরি করে সারাবিশ্বে ছড়ায় দিছে। এজন্য তাদের কয়েক লক্ষ লোক হয়তো মারবে, কিন্তু তাদের আসল টার্গেট মুসলমান দেশগুলো। কোটি কোটি মুসলমান মাইরা তারা তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু মুসলমানদের ভয় পাইলে চলবে না। আমি একটা দোয়া কমেন্টে লিখে দিচ্ছি। সেটা পড়লে করোনা তো দূরের কথা, করোনার বাপও কিছু করতে পারবে না।
বারোতম দিনঃ ফ্রেন্ডস, অবস্থা খারাপ মনে হচ্ছে। কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে এটাও একটা কঠিন পরীক্ষা। তিনি দেখছেন যে, কারা মসজিদে যায় আর কারা না যায়। ইনশাল্লাহ, মসজিদে যাবোই। যদি মরি মসজিদে গিয়েই মরবো। মুসলমান করোনায় মরলে শহীদ বলে গণ্য হবে। এমন সুযোগ আর জীবনে পাবো না। তাই নাস্তিকদের আজেবাজে কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে সকলকে মসজিদে আসার অনুরোধ করছি।
তেরোতম দিনঃ আজ সরকার মসজিদ বন্ধ করে দিছে। এইটা কোনো কাজ হইলো? খুব কষ্ট হচ্ছে, নাস্তিকদের কাছে আমাদের হার মানতে হইলো। অথচ এইদেশের ৯৫ ভাগ লোক মুসলমান। হায় আল্লাহ, তোমার কাছে বিচার দিলাম। তুমি এই জালিমদের বিচার করো। তারা তোমার ঘর মসজিদে তালা মারছে। তোমার বান্দাদের নাকি ওরা নামাজ পড়তে দিবে না!
চৌদ্দতম দিনঃ যাক, কোন সমস্যা নেই। আল্লাহপাক যা করে ভালোর জন্যই করে। এক মসজিদ লুকান্তরে, লক্ষ মসজিদ ঘরে ঘরে। এখন প্রতিটা ঘরই যেন একেকটা মসজিদ। শুধু ঘরই নয়, বাসার ছাদগুলোও এক টুকরা মসজিদ। মাশাল্লাহ! নাস্তিকরা দেখুক। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের দমিয়ে রাখা যায় না।
পনেরোতম দিনঃ আজ একটা দুঃখের খবর শুনলাম। মসজিদের ইমাম সাহেবও নাকি করোনায় আক্রান্ত! নাউজিবিল্লাহ, এইরকম একজন বুজুর্গ লোকরে আল্লাহ পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিলো। খুব দুঃখ হচ্ছে। ফ্রেন্ডস, সবাইকে অনুরোধ করছি ঘরে থাকার জন্য। আল্লাহর নবীও বলে গেছেন, মহামারীর সময় ঘরে থাকার জন্য। আজকের এইসব কোয়ারেন্টাইন আর আইসোলেশনের কথা আমাদের নবীজী অনেক আগেই বলে গেছেন।
ষোলতম দিনঃ হ্যালো ফ্রেন্ডস, আমি মনে হয় করোনায় আক্রান্ত। গতকাল সারারাত করোনার দোয়া পড়েছি। পড়তে পড়তে এক পর্যায়ে ঘুম এসে যায়। জেগে উঠে অনুভব করলাম গলায় প্রচন্ড ব্যাথা। সর্দি-শ্বাসকষ্ট। জোহরের আজান হওয়ার পর, পাশের এক বড় ভাই আসলো, জামাতে নামাজ পড়তে। একদম কথা বলতে পারছিলাম না। তারপরেও খুব কষ্ট করে আমি না করে দিলাম। তখন গলার ব্যাথাটা মোচড় দিয়ে উঠলো। আর বড় ভাইটা আমাকে ধিক্কার দিতে দিতে বললো, তোমার ঈমানও শেষ পর্যন্ত দুর্বল হয়ে গেল? আমি তখন কিছু বলিনি। বড় ভাই টুপিটা মাথায় লাগিয়ে বাড়ির গেইট দিয়ে বেরিয়ে চলে গেল।
সতেরোতম দিনঃ মনে হচ্ছে, আমি আর বাঁচবো না ফ্রেন্ডস। ইমাম সাহেব করোনায় আক্রান্ত। আমাদের এলাকায় তেরোজন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের সবাই ইমামের সাথে কোনো না কোনোভাবে মিশেছে। হয়তো আমিও অনেককে আক্রান্ত করেছি। নিজের অজ্ঞতার কারণে অনেক মানুষকে বিপদে ফেলে দিলাম। সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। প্লিজ ক্ষমা করে দিও। যদিও আমার এই অপরাধ ক্ষমা করার মতো নয়।
মৃত্যুপথযাত্রীর সাক্ষাতকারটি নিয়েছেনঃ আনসারি
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................