সকাল সকাল একটা বাজে লেখা পড়ে দিনটা শুরু হলো। জার্মানির ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগে স্যমন্তক ঘোষ নামের একজন করোনাভাইরাস নিয়ে ‘ইসলামফোবিয়া’ চলছে বলে দাবী করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতে বিভিন্ন ধর্মের অনুষ্ঠান চললেও শুধুমাত্র ইসলামফোবিয়ার কারণেই তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে। আমি অপেক্ষা করেছিলাম ভারতীয় কোন হিন্দু লিবারাল তাবলীগ জামাতের পক্ষে গলা ফাটাবে। আশা করেছিলাম করোনাভাইরাসের মধ্যে ইসলামফোবিয়া চলে আসবেই যখন স্পষ্টত ভারতে করোনাকে কাফের মুশরিকদের জন্য গজব বলছিলো মুসলিম ধর্মবেত্তারা। এগুলোকে ডিফেন্ড করতে ‘ইসলামফোবিয়া’ না এসে পারে না।
স্যমন্তক ঘোষ কিছু সরল দাগে যুক্তি তুলে ধরেছেন। যেমন ভারতে একজন শিখ ধর্মগুরু জার্মানি ইতালি থেকে ভারতে ফিরে পাঞ্জাবের অনেকগুলো গ্রামে করোনা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ১৯ মার্চ পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতের তিরুপতি মন্দির খোলা ছিলো যেখানে প্রতিদিন ৪০ হাজার দর্শানার্থী আসতেন। স্যমন্তক ঘোষের ক্ষোভ তাহলে শুধু তাবলীগ জামাতের উপর দোষ চাপানো হচ্ছে কেন? কেন শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর আঙ্গুল তোলা হচ্ছে?
মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর আঙ্গুল তোলা হচ্ছে কারণ তাদের ধর্মগুরু মাওলানা সাদ কান্দলভি তার অনুসারীদের স্পষ্টত বলেছিলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে যে সামাজিক শিষ্টাচার মানার কথা বলা হচ্ছে, তা মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক ধরনের ষড়যন্ত্র। শুরু থেকে করোনাভাইরাসকে অমুসলিমদের জন্য গজব, করোনাভাইরাস আল্লার সৈনিক, ভারতে করোনাভাইরাস এসেছে হিন্দুদের মারতে- এসব বলে মুসলিম কমিউনিটিকে সরকারের নির্দেশ অমান্য করতে তারাই বলেছিলো। ভারতে যে শিখ ধর্মগুরু নিজ গ্রামে করোনা ছড়িয়েছিলেন তিনি একটা ধর্মান্ধ মূর্খ হতে পারেন কিন্তু তিনি কি ঘৃণা ছড়িয়েছিলেন? তিনি তো বলেন নাই, করোনা ভাইরাস এসেছে মুসলমান বা হিন্দুদের মারতে- করোনা হচ্ছে গুরুনানকের সৈনিক! তিরুপতি মন্দিরের ধর্ম ব্যবসায়ী হিন্দুরা তাদের ধর্মান্ধতার কারণে মন্দির খোলা রেখেছিলেন, কিন্তু তারা কি বলেছিলো করোনা কোন হিন্দুকে মারবে না- এটা শুধু মুসলমানদের মারবে। সরকার যখন ভারতে মন্দির, গুরুদুয়ার, মঠ বন্ধ করে দিয়েছিলো তখন তো তারা আইন মেনে সবাই বন্ধ করেছিলো। কিন্তু ১৯ মার্চের পরও নিপীড়িত নির্যাতিত ফোবিয়ার শিকার মুসলিমরা কেন দিল্লির মার্কাজ সরকারী নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চালু রাখল? ভারতে প্রচন্ড মুসলিম বিদ্বেষ আর ফোবিয়া চলার মধ্যে এতখানি ক্ষমতা নিয়ে মুসলমানরা কিভাবে চলে মোদির ‘হিন্দু ভারতে’?
সমস্ত ভারতে এখনো মসজিদে জামাতে নামাজ বন্ধ হয়নি। ভারত নাকি হিন্দু রাষ্ট্র অথচ ভারতে মসজিদ বন্ধ করতে পারা যায় না! এরকম অদ্ভূত ব্যাপার শুধু ভারতেই সম্ভব। বিচ্ছিন্ন হোক, তবু ইন্টারনেটে বহু মুসলিমের ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে যারা নিজেদের দেহে করোনা ভাইরাস নিয়ে কাফের হিন্দুদের উপর ছড়িয়ে দিতে উশকানি দিচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে মাওলানা সাদ কান্দলভি গোপন বার্তায় তার অনুসারীদের মসজিদ ছেড়ে যেতে নিষেধ করছেন এবং আল্লাহ তাদের রক্ষা করবে বলে আশ্বস্ত করছেন। এরকম অসহযোগিতা ভারতের আর কোন ধর্ম সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুরা করছে? ভারত আসলে শতকোটি গুণ ভালো যে তারা ১০০ কোটি অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরও মাওলানা সাদ কান্দলভি মত কোন স্টুপিট মুসলিম ধর্মগুরুকে সহ্য করছে। ইসলাম প্রচারের জন্য তাবলীগ জামাতের অনুমোদন ভারতে আছে সেটাই আশ্চর্য। এরকম নেটওয়ার কোন মুসলিম দেশে খ্রিস্টান মিশনারীদের দেয়া হয় না। বাংলাদেশের হিন্দু মিশনারী ইসকনদের এরকম ধর্ম প্রচার কোনদিনই মেনে নেয়া হবে না। ভারত কেন তাহলে মুসলিমদের ইসলাম প্রচারকে অবাধ রাখবে? ভারত ইসলামিক দেশ হলে, ভারত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলে ভারতে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, ইহুদীদের পরিণতি হবে ৫৭টি মুসলিম দেশে যেমন হয়েছিলো। ৫৭টি মুসলিম দেশে ঘোষ বাবুদের কিন্তু কখনই হিন্দুফোবিয়া খুঁজতে দেখি না। ইহুদীফোবিয়া, খ্রিস্টানফোবিয়া এগুলো যেন সোনার পাথরবাটি! দিল্লির মার্কাজ খোলা রেখে করোনাকে আল্লার সৈনিক বলতে দিলেই ভারত সেক্যুলার ধর্মনিরপেক্ষ হবে?
https://www.sangbadpratidin.in/india/coronavirus-several-quarantined-people-accused-of-spitting-in-hospital/
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................