অরুন্ধতী রায়ের লেখা এবং উনার বোল্ড ক্রিটিসিজম আমি পছন্দ করি। ভারতে বসে ভারতের রাজনৈতিক দল, সরকার, সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে মেরুদণ্ড লাগে। বেশিরভাগ পা চাটা সুবিধাভোগী দালালের সেই মেরুদণ্ড থাকে না। তবে আমি মনে করি যতটা না এর জন্য মেরুদন্ড প্রয়োজন হয় তার থেকে বেশি প্রয়োজন হয় দেশটিতে কতটা গণতন্ত্র চর্চা আছে। কথাটি বাঙলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের শিক্ষিত সমাজের মানুষগুলোর জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু উনার সকল মতের সাথে আমি একমত নই। বরঞ্চ, বর্তমানে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের খুশি করতে উনার পাকিস্তানের গণহত্যার সাফাই গাওয়া আমার কাছে রীতিমত অপরাধ বলেই মনে হয়েছে। আমি বুঝলাম না, ভারতের সেনাবাহিনীর কাজের নিন্দা করার জন্য পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রশংসার প্রয়োজন কী! ইউরোপে বসে গণহত্যার পক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ এরকম সাফাই গাইলে উনার এই অপরাধে জেল হয়ে যেতো। উনাকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হতো। উনি বলেছেন,
'Pakistan army was never used against its own people’
বাঙলাদেশ থেকে বেলুচিস্তান, এরকম অসংখ্য জায়গায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্মম গণহত্যা ও নিপীড়ন ঐতিহাসিকভাবে সত্য। নারী ধর্ষণ এবং নিরীহ বেসামরিক জনগণকে হত্যার ক্ষেত্রে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মত দক্ষ এবং অভিজ্ঞ পৃথিবীতে সম্ভবত নাৎসী বাহিনী ছাড়া আর কেউ ছিল না৷ এরকম গণহত্যার ইতিহাস গোপন করার চেষ্টা নিঃসন্দেহে গণহত্যার সমর্থন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা। আমি কাশ্মীরের জনগণের স্বাধীনতার পক্ষে, সেখানে শুধু ভারতীয় আগ্রাসন নয় পাকিস্তান, চীন সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে। তারপরেও, অরুন্ধতী রায়ের মত অসৎ এবং নির্লজ্জ হতে পারছি না। উনার বক্তব্য আমাকে অত্যন্ত ব্যথিত করেছে। এরকম কথা পাকি জেনারেল ইয়াহিয়া খানও সম্ভবত বলতে লজ্জা পেয়ে যেতো৷
অরুন্ধতী রায়ের অত্যন্ত অশালীন এবং বিকৃত মন্তব্যের জন্য অবিলম্বে ক্ষমা প্রার্থণা করা উচিত। অন্যথায় ভারত সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি, অবিলম্বে বাঙলাদেশে গণহত্যা এবং বেলুচিস্তানে নির্মম নিধনযজ্ঞ চালানো পাকি সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গাওয়া, ইতিহাস বিকৃত করা, পাকিস্তানী গণহত্যা নিয়ে মিথ্যা বলা, গোপন করার চেষ্টা, পরোক্ষভাবে সমর্থন দেয়ার অপরাধে তাকে বিচারের আওতায় নেয়া হোক। একইসাথে, বাঙলাদেশ সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি, অরুন্ধতী রায়ের এই ধরণের মন্তব্যের জন্য উনাকে বাঙলাদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক। উনার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থণা করতে হবে, সেইসব নিহত মানুষের স্মৃতির প্রতি, যারা পাকি গণহত্যার শিকার হয়েছে। উনার ক্ষমা প্রার্থণা করতে হবে সেই সব নারীর কাছে, যারা দিনের পর দিন ধর্ষিত হয়েছে, এমনকি গলায় ফাঁস দেয়ার জন্য একটুকরো কাপড়ও যাদের দেয়া হয় নি। সেই সব সন্তানের কাছে, যারা পিতা মাতা হারিয়েছে। স্বজনদের হারিয়েছে। যাদের সবার লাশের ওপর অরুন্ধতী রায় হেঁটে যেতে পারেন না৷ তাদের রক্ত নিয়ে তামাশা করতে পারেন না। উনার সেই অধিকার নেই।
কারণ গণহত্যার মত ভয়াবহ অপরাধ যারা করে, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন করে, যারা গোপন করে, এইসবই মানবতা বিরোধী এবং আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দিত অপরাধ। আমি অবিলম্বে উনার কাছে কৈফিয়ত অথবা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থণা আশা করছি।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................