অরুন্ধতী রায়কে বলতে দিন : আমাকেও লিখতে দিন।

অরুন্ধতী রায়কে বলতে দিন : আমাকেও লিখতে দিন
-------------------------------------------------------------
সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে ফেসবুক আজ সকাল থেকেই সরগরম অরুন্ধতী রায়কে নিয়ে। অরুন্ধতী রায় বাংলাদেশে, আর তিনি কিছু বলতে চান মানুষের উদ্দেশ্যে কিন্তু তাকে নাকি বলতে দেওয়া হবেনা, তার বাকরুদ্ধ করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার চিহ্নিত মুক্তমনারা বিক্ষোভে ফেঁটে পরে, কালো কালির ছয়লাপ করে দিলো তাদের প্রোফাইল পিক আর টাইমলাইন। বিশিষ্ট মানবতাবাদী, বিখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী বলতে চান, আর তাকে কিনা বলতে দেওয়া হবেনা ? না, না ওনাকে বলতে দিতেই হবে। আমাদের উপমহাদেশে 'মানবতাবাদী' শব্দটা কিন্তু মিরাকেল ঘটিয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে এই 'মানবতাবাদী' ট্যাগটা যদি 'গড অফ স্মল থিংস' বিখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায়ের নামের সাথে জুড়ে যায়।  অরুন্ধতী রায় বাংলাদেশে গেছেন কি কোনো বিশেষ মহলের আমন্ত্রণে ? ওনাকে কি বাংলাদেশের তথাকথিত খৎনা করা মুক্তমনা সমাজ নিমন্ত্রণ করে ডেকে এনেছেন সে দেশে কিছু বলার জন্য, মানুষের উদ্দেশ্যে ? পাকিস্তান পুস্ট সন্ত্রাস নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক ডামাডোলের বাজারে হঠাৎ অরুন্ধতীর বাংলাদেশ যাত্রা এবং তদুপরি কিছু বলতে চাওয়ার মহৎ উদ্দেশ্যের শেঁকড় কোথায় ? একটু খতিয়ে দেখবো কিন্তু তার আগে চলুন এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব অরুন্ধতী রায়ের সাথে আপনাদের একটু পরিচয় করিয়ে দিই :

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে জন্ম এই অরুন্ধতী রায়ের। বাবা রাজীব রায় আর মা জন্মসূত্রে, কেরালার মালয়লি সিরিয়ান খ্রিস্টান মরিয়ম রায়।  না, না পাঠক অরুন্ধতী রায়ের পরিচয় এত সরলীকরণ করে জানবেন না ! আপনাদের NDTV খ্যাত প্রণয় রায়কে নিশ্চই মনে আছে ? হ্যা, এই বিখ্যাত NDTVর মালিক প্রণয় রায়ের কাজিন হলো অরুন্ধতী।  অতএব, খ্যাতির ট্যাগ অরুন্ধতীর রাতারাতি নতুন নয়, বেশ অনেকদিনের। বাবা-মার ডিভোর্স হয়ে গেলো, অরুন্ধতী আর তার মায়ের পেটের ভাই, মায়ের সাথে কেরালা চলে এলো। করপাস ক্রিস্টি, কোটায়াম, লরেন্স স্কুল, লাভডেল-হ্যা, এটাই অরুন্ধতীর স্কুল, তারপর দিল্লিতে স্থাপত্যে নিয়ে পড়াশোনা। এই পড়াশোনার সূত্রে অরুন্ধতীর একটা প্রেম হয়ে গেলো, স্থাপত্য বিশ্বের 'বিগ শট', জেরার্ড দা কুনহার সাথে। সম্পর্কটা টেঁকেনি। এরপর বিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রদীপ কিষেনকে।  বিয়েটাও টিঁকলো না। ব্যক্তি জীবনের টানাপোড়েনের মাঝেই কিন্তু কাজিনের খ্যাতির ক্যারিশ্মাকে কাজে লাগিয়ে, অরুন্ধতী সুকৌশলে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আরবান এফেয়ার্স এ পদ বাগিয়ে নিয়েছিলেন। খ্যাতিকে কিভাবে কোন কাজে কখন ব্যবহার করতে হয় এটা অরুন্ধতী ভালোই জানেন। এইবার এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ১৯৯৭।  অরুন্ধতীর লেখা 'গড অফ স্মল থিংস' ম্যানবুকার অ্যাওয়ার্ড পেল আর এরপরেই অরুন্ধতী তার ভোল অন্য ধাঁচে পাল্টে ফেললেন। তিনি এইবার নিজেকে পুরোদস্তুর মানবাধিকার কর্মী বলে পরিচয় দিতে শুরু করলেন। আজকে বাংলাদেশে অরুন্ধতী কেন বলতে চায়, কি বলতে চায়, একটু ধৈর্য্য ধরে পয়েন্ট ধরে শুনুন :

➤ ভারতে প্রতিটি উন্নয়নমূলক প্রকল্পকে আক্ষরিকভাবে বিরোধিতা করে এই অরুন্ধতী। তার মতে, ভারতের শিল্পায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতির প্রকল্প ও পারমাণবিক অস্ত্র বিষয়ক রিসার্চ মানবতা বিরোধী। বিদেশী আপাত NGO আখ্যাধারীদের অর্থে পুস্ট এই তথাকথিত মানবধিকার কর্মীর এজেন্ডা হলো ভারতের সবরকমের উন্নয়নমূলক কাজ স্তব্ধ করে দেওয়া। শিল্পায়ন হলে চাকরির সুযোগ হবে, ভারত অর্থনৈতিকভাবে জোরালো হবে, অতএব তার বিরোধীতা করতেই হবে। পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে রিসার্চ চলবেনা, কারণ তাতে ভারত একটি নিউক্লিয়ার শক্তি হয়ে উঠবে। পাক মদতে কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদে বাধা আসবে। NGO র পেছনে ISI এর যে পয়সা খাঁটে, তা থেকে বঞ্চিত হবে অরুন্ধতী। 
➤ আগেই লিখেছিলাম, কাজিনের খ্যাতির ক্যারিশ্মাকে কাজে লাগিয়ে, অরুন্ধতী সুকৌশলে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আরবান এফেয়ার্স এ পদ বাগিয়ে নিয়েছিলেন। এবারে পদের সদ্ব্যবহার করেছিলেন মেধা পাটেকারের সাথে হাত মিলিয়ে, নর্মদা বাঁধ প্রকল্পের বিরোধিতা করে যা গুজরাটের লক্ষ লক্ষ মানুষকে উপকার করার জন্য ছিল। এইবার ভারত সরকার নড়েচড়ে বসলো।  তারা এই প্রোপাগান্ডার মূল খোঁজার জন্য তদন্ত চালায়।  তদন্তে উঠে আসে,অরুন্ধতী রায় এই প্রকল্প বন্ধ করার জন্য বিদেশী সংস্থার 500 কোটি টাকা পেয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য টাকা নেয়া হলেও বলা হয়েছে যে পুনর্বাসনে ব্যয় করা অর্থের কোন রেকর্ড ছিল না। তুলে দিলাম তদন্ত রিপোর্টের অংশ :
"Then, there is the question of how does Medha Patkar get her finances? Medha Patkar has the Right Livelihood Award, the Rev. MA Thomas National Human Rights Award, Amnesty International's Human Rights Defender's Award, and the BBC's Green Ribbon Award for Best International Political Campaigner. Her Narmada Bachao Andolan (NBA) is described as a "social movement". Presumably this social movement handles money, if only for its own expenses. But the Supreme Court has noted the NBA is not a registered entity. So, how does it bank its money? How does it account for its expenses? The NBA, which, as we have seen, has international connections, does not seem to have its own website. Foreign sources fund its support groups. But which foreign sources? Could the American Security agencies, which have no qualms about using a Richard Headley - and still shelter him from the Indian justice - covertly fund Medha Patkar? Finally, accused of taking medical certificates, fined more than once for dodging court hearings, Patkar is now accused by the Supreme Court itself oft filing a false affidavit before it."
➤ ভারতের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, সুপ্রিম কোর্ট অরুন্ধতী রায়কে নোটিশ দিয়েছিল। ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করা এবং জরিমানা না ভরার জন্য, একদিন কারাবাসও হয় তার। পরে,৩ মাসের কারাদন্ডের ভয়ে তিনি ২৫০০ টাকা জরিমানা দেন এবং আদালতে ক্ষমা চান। মেরুদণ্ডের জোর থাকা মানবধিকার কর্মী অন্যায় না করে ক্ষমা চাইবে কেন ?
➤ ৯০ দশকে, কাশ্মীরের ভূমিপুত্রদের, কাশ্মীরের দখলদার বাসিন্দাদের হাতে কি করুন পরিণতি হয়েছিল, পাঠক বলেন নি নিশ্চই ? লাগাতার হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে গৃহত্যাগী হয়েছিল অগুনতি কাশ্মীরের ভূমিপুত্র।  এর নেপথ্য নায়ক ফারুক আবদুল্লা যে কৌশলে জেল থেকে কুখ্যাত অপরাধীদের ছেড়ে আরবি বাপের জ্বারজদের সাথে ভূমিপুত্রদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল। এই তথাকথিত মানবতাবাদী অরুন্ধতী রায় এই আরবি বাপেদের জ্বারজদের পক্ষে সওয়াল করে যে কাশ্মীর ভারতের অংশই নয়। এ হলো সেই মানবধিকার কর্মী অরুন্ধতী, যে কিনা ১৮ই অগাস্ট, ২০০৮ এ শ্রীনগরে ৫০০০০০ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে একটি সমাবেশ পরিচালনা করেছিল। এ হলো সেই মানবধিকার কর্মী যে কিনা ভারতের সংসদে হামলাকারী আফজাল গুরুর মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করেছিল। এই অরুন্ধতী হলো এমনই মানবতাবাদী যে কিনা, ২৬/১১ র মুম্বাই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সাফাই গাইতে বলেছিল : 'আমাদের অবশ্যই পাকিস্তানকে দোষারোপ করা উচিত নয়, আমাদের অবশ্যই এই অঞ্চলের ইতিহাস এবং ব্যাপক দারিদ্র্যের মতো সমাজের বৃহত্তর সমস্যা প্রসঙ্গে বোঝা উচিত।'

পাঠক, পাকিস্তান মদতপুষ্ট সন্ত্রাস ভারতে নতুন নয় আর অরুন্ধতী রায়ের দাবী 'আজাদ কাশ্মীরে' তা খুব বেশি করে প্রকট। অরুন্ধুতী রায় এটা খুব ভালো বোঝেন যে, ১৯৭১ এ পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হলেও পূর্ব পাকিস্তান থেকে অধুনা বাংলাদেশে আর সলিমুল্লাহ থেকে আহমেদ ছফাদের পাকি প্রেম ওরফে কওমি প্রেম নিখাঁদ তাই ভারত বিরোধী বক্তব্য যে অধুনা বাংলাদেশের আমজনতা বিশেষ করে খৎনা করা তথাকথিত বিদ্বসমাজ বেশি করে খাবে কোনো সন্দেহ আছে ? তাই আজ বাংলাদেশে অরুন্ধতী রায়কে তো কিছু বলতেই হবে............

@রাজর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted