হিন্দু মেয়েরা কেন ধর্মান্তরের প্রেম-যুদ্ধে সহজ শিকার-এ পরিনত হচ্ছে??

হিন্দুদের সমস্যা নিজেদের আধ‍্যাত্মিক বিশ্বাসের মধ্যে। বিগত ৩০০ বছরে,ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মালম্বীদের রাষ্ট্র কেন বহু সংখ‍্যায় বাড়লো, আর ওই সময়কালে হিন্দুদের দেশ কেন এতগুলো কমলো ?
চীনে সংখ্যাগরিষ্ঠ হান জাতির জনসংখ্যা হার বাড়ছে, মিয়ানমারে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের সংখ্যা বাড়ছে ; তাহলে স্বাধীন ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের জনসংখ্যা হার কেন আশঙ্কাজনক ভাবে কমছে ?
এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে -  কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা করা প্রয়োজন।

বৈদিক গণতন্ত্র লঙ্ঘন করে - পরিবারতান্ত্রিক রাজতন্ত্র-কে চিরস্থায়ী করার জন্য, সর্বপ্রথম বর্ণভেদ প্রথা সৃষ্টি করা হয়। অতীতে একটাই বর্ণ ছিল ব্রাহ্মণ - তা থেকে ক্ষত্রিয় বর্ণ-এর উদ্ভব ঘটে। বর্ণের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে হিন্দুদের মধ্যে এখন  চার হাজারের বেশি বর্ণ বিদ‍্যমান। বাংলাদেশে বংশানুক্রমিক ব্রাহ্মণ-এর সংখ্যা হিন্দুদের মধ্যে মাত্র ১%। তাদের মধ্যে শ্রেণিভেদ ৬০ টি ; মতান্তরে আরো বেশি।

ক্ষত্রিয় রাজারা নিজেদের নররূপী অবতার ঘোষণা করে বসে। ব্রাহ্মণরা ছিল আজকের দিনের দলিল লেখকদের মতো। ক্ষত্রিয় রাজারা তাদের দিয়ে ইচ্ছামাফিক শাস্ত্র লেখাতো। যারা প্রতিবাদ করেছে, তাদের দলিত-শূদ্র বানিয়ে দিয়েছে।
ক্ষত্রিয় অবতার রাজারা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েদের নিজেদের জন্য রেখে দিয়ে, দ্বিতীয়সারির মেয়েদের মন্দিরের পুরোহিতের কাছে পাঠাতো। কিছুদিন পরে দেখা গেল, সমাজপতিদের দাপটে, পুরোহিতরা ঐসব দেবদাসীদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তারা অপমান বোধ করে। এই বিরোধের জের ধরে,রাজশক্তি ব্রাহ্মণদের সমস্ত রাজ-অনুদান  বন্ধ করে দিয়ে, ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করে। অপমানিত ব্রাহ্মণরা গিয়ে জোট বাধে নিষ্পেষিত শুদ্রদের সাথে। শূদ্র মহাপদ্মনন্দ, ক্ষত্রিয় অবতারদের অহঙ্কার চিরতরে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছিলেন - কাত‍্যায়ণ নামক এক বিচক্ষণ ব্রাহ্মণ-এর সহায়তায়।
পরবর্তী আড়াই হাজার বছরে বিষ্ণুর নররূপ ধারণকারী প্রতিপালক বা অবতার - বংশানুক্রমিক ক্ষত্রিয় রাজশক্তি, আর সেভাবে মাথা তুলতে পারেনি। ভারতবর্ষে বৌদ্ধ মতাদর্শের উত্থান ঘটে। বৌদ্ধ শাসক উচ্ছেদ করতে, ব্রাহ্মণ চাণক‍্য  ও শূদ্র চন্দ্রগুপ্তের জোট - ইতিহাস প্রসিদ্ধ।

বৈশ‍্য বর্ণ থেকে উঠে আসা গুপ্ত সাম্রাটদের শাসন আমল-কে বলা হয়, ভারতবর্ষের স্বর্ণযুগ। বংশানুক্রমিক ক্ষত্রিয়দের মোকাবিলা করতে গিয়ে, গুপ্ত সম্রাটগণ ব্রাহ্মণদের সাথে জোট বাঁধেন।  ব্রাহ্মণরা বৈশ্য-কুলোদ্ভব গুপ্তদের ক্ষত্রিয় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
এরপরে হিড়িক পড়ে যায় অন্য বর্ণ থেকে ক্ষত্রিয় হওয়ার। যেমন বাংলার সেন রাজারা ছিলেন ব্রহ্মক্ষত্রিয়। ভারতের অধিকাংশ ইতিহাস পুস্তক তুর্কি আক্রমণে ধ্বংস হয়ে গেছে। 'বল্লালচরিত' গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ব্রহ্মক্ষত্রিয় সেন রাজারা বঙ্গীয় ব্রাহ্মণদের নমঃশূদ্র ও চর্মকার বর্ণে নামিয়ে দিয়েছিলেন। এজন্য বাংলায় একটা প্রবাদ আছে,
                ' বামুন নমো ধোপা মুচি
                       একইদিনে সূচি'
 অর্থাৎ তারা অতীতে একই জাতের লোক ছিল।

ভারতভূমিতে শঙ্করাচার্য নামক এক আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের মহাউত্থান ঘটে। তিনি প্রচার করেন, মায়াবাদ বা জগৎমিথ্যা তত্ত্ব। এই মতবাদ ভারতবাসীর মন জয় করে নেয়। এই মায়াবাদের  উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ধারার বিষয়-বৈরাগ্যবাদ, আজ হিন্দুর হৃদয়-সাম্রাজ্য শাসন করছে।
অর্থাৎ মোক্ষ লাভের জন্য কামনা-বাসনা ত্যাগ করো, উত্তেজক খাবার পরিহার করো। উপবাস ও যৌন আকাঙ্ক্ষা দমন করে - শরীরকে কষ্ট দিয়ে ভগবানকে খুশি করো ...। 
ঠিক ওই সময় ভারতবর্ষে মুসলমান আক্রমণ শুরু হয়।  বিষয় বৈরাগ্যবাদী দর্শন ও পুষ্টিহীন খাদ‍্যাভাসের ফলে, হিন্দুরা মাংসাসী আক্রমণকারীদের নিকট পরাজিত হয়।

বিজেতাদের ধর্মের লক্ষ্যই হচ্ছে - ভূমি বৃদ্ধি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি। তারা যৌন আকাঙ্খাকে স্বাভাবিক দৈহিক-প্রবৃত্তি মনে করে।
হিন্দু মেয়েরা কেন ধর্মান্তরের প্রেম-যুদ্ধে সহজ শিকার-এ পরিনত হচ্ছে, তা শুধু সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিশ্লেষণ করলেই চলবে না। ভ্রান্ত আধ্যাত্মিক দর্শনের  প্রভাবে - হিন্দু যুবকরা উত্তেজক আহার পরিহার করে, কেবল যে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে-সেটাই নয়, তারা যৌনতা-বিমুখ হয়ে পড়ছে। তারমধ্যে ধর্মগুরুদের  ব্যাপক নারীবিদ্বেষ প্রচারের ফলে, হিন্দুরা বেপরোয়া ভাবে কন্যাশিশু ভ্রূণ হত্যা করে, হিন্দু জাতিকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted