ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় জন্ম নিয়েছিলেন সংগীতের গুরু ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। বিখ্যাত ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ। প্রখ্যাত গায়ক সংগীত পরিচালক শচীন দেব বর্মন। পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলার প্রথম দাবীদার ধীরেন্দনাথ দত্ত। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব উল্লাসকর দত্তের জন্মস্থানও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া। শচীন দেব বর্মন ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতে জন্মেই বাংলাদেশের ঢোলের সঙ্গে তার পরিচয়। সেই ঢোলকে তিনি বিশ্বে পরিচিত করেছিলেন। অথচ ইসলামে ঢোল বাদ্যযন্ত্র হারাম! ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি জাদুঘর এই জন্যই ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বড় মাদ্রাসার ছাত্ররা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো।… ব্রাহ্মণবাড়ীয়া কি বিচ্ছিন্ন কোন জেলা বাংলাদেশের? এই ধর্মান্ধতার কারণ কি?
বাংলাদেশ এখন ঢোলের দেশ নয়। বাংলাদেশ এখন আল কুরআনের দেশ। বাংলাদেশ এখন মাদ্রাসার দেশ। ব্রাহ্মণবাড়ীয়াকে যে ধর্মান্ধ অঞ্চল হিসেবে দেখানো হচ্ছে সে ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতেই জন্মেছিলো বাংলার বেশ কজন বিখ্যাত মানুষ। সংগীত সাহিত্যের মানুষজন এখানে বেড়ে উঠেছিলো। এদের একটা বড় অংশ ছিলো হিন্দু। গোটা পূর্ব বাংলায় হিন্দুরাই ছিলো সাহিত্য সংগীত সংস্কৃতিতে প্রথম সাড়িতে। এদের কারণে মুসলমানরা প্রথম সাড়িতে যেতে পারবে না ভেবেই পাকিস্তানের দাবী জনপ্রিয় হয়ে উঠে মুসলমানদের কাছে। সে ধাক্কায় শচীন কর্তা বাংলাদেশের ঢোল নিয়ে ভারতবর্ষে চলে গেছেন। মুছে গেছে তাদের চিহ্ন। মুসলমানের স্বাতন্ত্র্য পরিচয় প্রতিষ্ঠার নাকি বাধা ছিলো এই হিন্দুরা। তাহলে আহমদ ছফারা কার বা*ল ফালাইলেন যে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার চেহারা এরকম হলো? মনে রাখতে হবে এই ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতেই জন্মেছিলেন কবি আল মাহমুদ। যিনি বখতিয়ারের ঘোড়া কবিতায় লেখেন আল্লার সৈনিক এসে কাফেরদের সায়েস্তা করবে! কোথায় শচীন কর্তার বাংলাদেশের ঢোল আর কোথায় আল মাহমুদের বখতিয়ারের ঘোড়া! তেলে আর জলে কখনো মেশে না। মুসলমানও বাঙালি হতে পারে না! ব্রাক্ষণবাড়িয়া কোন বিচ্ছিন্ন পরিণতি নয়। এরকম ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যখন দেশভাগ হয়ে গিয়েছিল। ...
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান হওয়ার পরও কেন ভারতে চলে যাননি এটায় মুসলমানদের ভীষণ ক্ষোভ ছিলো। এই কাফের বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা চেয়েছিল। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তার পাপের শাস্তি পেয়েছিলেন। ৭১ সালে মাদ্রাসার প্রিন্সিপালদের (শান্তিকমিটি) প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে দীর্ঘদিন নির্যাতন করে। শচীন দেব বর্মনের একই হাল হতো যদি বাংলাদেশে থেকে যেতেন। বাংলাদেশের ঢোল ফুটো করে তার গলায় ঝুলিয়ে দিতো ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বড় হুজুর!
মুসলমান সে শিক্ষিতই হোক আর অশিক্ষিত, যার মধ্যে নুন্যতম তার ইসলাম বিশ্বাস আছে সে তার সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্যকে পদলিত করবে না তা হয় না। বাংলাদেশের এমন কোন জেলা নেই যেখানে একজন করে বড় হুজুর নেই যার হুকুমে পঙ্গপালের মত মাদ্রাসার ছাত্ররা বেরিয়ে আসবে। এরা যেদিন সিদ্ধান্ত নিবে সিনেমা হলগুলোতে হামলা করবে সেদিন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এরা যেদিন সিদ্ধান্ত নিবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গুড়িয়ে দিবে সেদিন শেখ হাসিনা চেষ্টা করেও সেটা রক্ষা করতে পারবেন না। ‘বাঙালী মুসলমান’ বলে যারা সারা বছর বুক ঠুকে আত্মপরিচয় দেয় সেরকম বুদ্ধিজীবী লেখকদের দেখলাম ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার ঘটনা নিয়ে তাদের হতাশা জানাতে! এরাই অদ্বৈত মল্লবর্মণদের খেদিয়ে ছিলো নিজেদের মুসলমান ভাষা সাহিত্য তৈরি করতে। আজ যখন সেই ভাষা সংস্কৃতি ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতে প্রকাশ পাচ্ছে তখন এত লাগছে কেন?
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................