ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
আমাদের দেশ নাকি এক ‘মিশ্র সংষ্কৃতির দেশ’। সংষ্কৃতি বলতে কি বোঝায়??? ভাষা, খাদ্যাভাস, পোশাক পরিচ্ছদ, ভাবনা চিন্তা, সাহিত্য, ধর্ম। এই নিয়েই তো সংষ্কৃতি। তা আমাদের দেশের এই সাংষ্কৃতিক মিশ্রন টা ঠিক কি ধরনের?
ভৌগলিক অবস্থান ভেদে খাবার দাবারের পার্থক্য থাকবেই। আমাদের দেশে কিছু জায়গায় ধান বেশী হয় তো সেখানে তিনবার ভাত চলে এখনো। যেখানে গম বেশী হয় সেখানে রুটি খাওয়া হয় বেশী। ইউরোপে আলুর চাষ বেশী, ধান হয়ই না। তা সেখানে আলু বেশী খায় ভাত খুব কম। এই রকম আর কি।
কিন্তু, আমাদের দেশে উত্তর থেকে দক্ষিনে, পুব থেকে পশ্চিমে আবহাওয়া প্রায় একই রকম। আরবের মরুভুমিতে যা চলে তা কি এখানে চলে? কিন্তু পথে ঘাটে তাই তো দেখতে পাই আজকাল।
ভাষা? তাও তো আজ আর ভারতীয় ভাষা চলছে কোথায়? আরবী, ভারতীয় ভাষা কবে থেকে হলো? সংষ্কৃত থেকে নানা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে—কিন্তু আরবী হয়েছে বলে জানি না। আমাদের দেশের নানা স্থানীয় ভাষার মধ্যে যে আরবী কথা ঢুকে গেছে তা কি মেনে নিতে হবে? নমষ্কার বা নমস্তে বলায় আপত্তি তাইতো বলা হয় আদাব বা সালাম। ‘ইশ্বরের ইচ্ছা’ বলায় আপত্তি তাই বলা হয় ‘ইনশাল্লা’। দেশের মুল অধিবাসীদের সঙ্গে থাকা যায় না বলেই তো দেশটাকে ভাগ করা হলো। তা যদি এক ‘সংমিশ্রন’ ঘটেই থাকতো তাহলে কি সেই প্রয়োজন হতো???? আমার তো মনে হয় না।
হ্যা, রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন “হেথায় আর্য্য, হেথায় অনার্য্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন, শক হুন দল, পাঠান মোঘল এক দেহে হলো লীন”। ভুল লিখেছিলেন, মহাভুল।।
আর্য্য –অনার্য্য তত্ব আজ এক বস্তা পচা তত্ব। চীন থেকে আসা বিদেশীরা , দ্রাবিড়ীয় সভ্যতা, বিশাল বৈদিক সভ্যতার সংগে মিশে গেছে , একে বলা যেতে পারে সম্পৃক্ত মিশ্রন যাকে আলাদা করে বোঝা যায় না। শক হুনেরা লুট করতে এসেছে ,আবার চলেও গেছে। গ্রীক রাও (যবন) চলে গেছে, ইংরেজ চলে গেছে। যায়নি পাঠান আর মোঘল। তারা নিজেদের প্রথম থেকেই সব দিক দিয়ে আলাদা করে রেখেছে। বিশাল বৈদিক সভ্যতা তাদের কাছে ‘অবিশ্বাসীদের সভ্যতা”। দেশ আলাদা করেছে। দেশের ভিতরে থেকে আমাদের দেশটাকে খেয়ে ফেলছে—“It is a Moth Eaten country’ “পোকায় খাওয়া দেশ”।
দ্রবন দুই রকম হয়--- ‘সম্পৃক্ত এবং অসম্পৃক্ত’। সম্পৃক্ত দ্রবনে দ্রবীভুত পদার্থের আর আলাদা করে কোনো ধর্ম থাকে না, তাকে আলাদা করা যায় না। অসম্পৃক্ত দ্রবনে পদার্থ সব আলাদা থাকে এবং কিছু নীচে থেতিয়ে পড়ে থাকে, কিছু উপরে থাকে, তাকে আলাদা করে চেনা যায়। চিনি বা লবনের জল মিশিয়ে রেখে দিন, কোনো কিছু নীচে পড়ে থাকবে না। জলের মধ্য বালি মিশিয়ে রেখে দিন বালি নিজেকে আলাদা করে নীচে পড়ে থাকবে।
যারা আমাদের দেশে এই ‘অসম্পৃক্ত দ্রবনকে’ (Un Saturated mixture) এক ‘মিশ্র সংষ্কৃতি’ বলে চালাচ্ছেন, তাদের একবার রসায়ন শাত্রের ওই “মিশ্রন’ নামক অধ্যায়টা একটু ভালো করে পড়ে দেখতে বলি।
Compose না হলে সেই দ্রব্য decompose হয় , অর্থ্যাত পঁচে যায়। তাই বৈদিক সভ্যতার সঙ্গে ‘সম্পৃক্ত না হতে পেরে’ (বা না হতে চেয়ে) আমাদের দেশের প্রাচীন সভ্য সংষ্কৃতিকে আজ এক “পচা সংষ্কৃতি” (De composed Culture) তে পরিনত করা হয়েছে এবং সেটা সম্পুর্ন কিছু মানুষের ‘বিকৃত মনের বাসনা প্রসুত”। এটাই চলছে এবং চলবে।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................