বাংলাদেশের জঙ্গিদের সবচেয়ে নিরাপদ রুট হচ্ছে ভারত।

যতটুকু বুঝা যাচ্ছে এখন পর্যন্ত, বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদ টিউশনি করে সুদে টাকা লাগিয়ে নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবন কাটিয়ে গেছেন কোলকাতা জীবনে। অর্থ্যাৎ অর্থবিত্তে বিশাল না হয়েও সে কোলকাতায় যাদের হাত ধরে বসবাস করতে পেরেছিলেন সেটা ছিলো আদর্শিক অবস্থান থেকে। 


অর্থ দিয়ে মাজেদ কোলকাতা কেনননি, আদর্শই তাকে তার ভাইদের কাছ থেকে সহায়তা এনে দিয়েছিলো। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে সিসি টিভির ফুটেজে যে দুটি লোকের ছবি দেখা যাচ্ছে তাদের নিয়ে। যারা মাজেদকে তার নিরুদ্দেশ হওয়ার সময় থেকে ফলো করেছিলো। এদের চেহারা দেখে বাঙালী মনে হয় না। তাই এরা বাংলাদেশে বিশেষ কোন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য আমার কাছে অন্তত মনে হচ্ছে না। এমন হতে পারে বৃহত্তর কোন সুফলের জন্য ক্ষুদ্রকে অনেক সময় ত্যাগ করতে হয়। কোলকাতার সেই বিশেষ শক্তিরাই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে মাজেদকে তুলে দিয়েছিলো? বিশেষ কোন সুবিধার জন্য? মাজেদ নিজে থেকে করোনায় ভয়ে ঢাকা গিয়েছিলো এই দাবী এখন আর ঢোঁপে টিকছে না। মাজেদের ফাঁসি হয়েছে এটা স্বস্তির। বাংলাদেশের মানুষ দায়মুক্ত হয়েছে। কিন্তু এখন আসল ভাবনার বিষয় পশ্চিমবঙ্গের প্যারালাল রাজনৈতিক শক্তির ইঙ্গিত কতটা সত্যি? পশ্চিমবঙ্গের ইসলামিক বাংলার মানচিত্র, বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গ আসাম ত্রিপুরা নিয়ে যে মুসলিম বাংলার মানচিত্র তার শক্তি যতটাই খর্ব হোক তার উপস্থিতি বিবেচনার বিষয় কিনা? ভোটের রাজনীতিতে সেই খর্ব রাজনীতির সমর্থকদের ভোট কতটা ভারতের সাম্প্রদায়িকতাকে চাগিয়ে দিবে? নিশ্চিত করেই এসব সমিকরণ ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রতি সাধারণ মানুষকে আস্থাবান করে তুলবে। কাজেই এসবই বিজেপির চাল বলা লজিক্যাল ফ্যালাসি তো রইলই। পশ্চিমবঙ্গের সাইলেন্স দ্বিজাতিতত্ত্বের ভোটগুলোর তাহলে এতদিন কি ছিঁড়ল?

১৯৭১ সালের ভারত ফেরত সংস্কৃতি সংগঠনগুলোর শিল্পীদের অনেকের বক্তব্য পরবর্তীতে পাওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের বাংলাদেশের প্রতি অসমর্থনের কথা। বিশেষত উর্দু ভাষী মুসলিমদের পাকিস্তানের প্রতি সমর্থনটা শরণার্থী বাংলাদেশীরা দেখেছে। স্বাভাবিকভাবে মুসলমানদের দেশ পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ হবে এটা মুসলমানরা সমর্থন করতে পারেনি। পাকিস্তান ভেঙ্গে বেলুচ আলাদ দেশ হলে বুকে হাত দিয়ে বলুন তো কতজন সাধারণ মুসলমান সেটাকে সমর্থন জানাবে? ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান আর ধর্মনিরপেক্ষ পার্টির ভোটব্যাংক হিসেবেই তারা পাকিস্তান যে মুসলিম মিল্লাতের ঐক্য গড়েছিলো তা ভেঙ্গে যাক তারা চায়নি। এগুলো খুব কঠিন কথা যা একটি সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি অভিযোগ হিসেবে চলে যায়। অথচ আমরা জানি মুসলিম মানে সেটা হিন্দু নয়। খ্রিস্টান কিংবা বৌদ্ধ নয়। মুসলিম মানে একটি রাজনৈতিক মেনুফেস্টের প্রতি অঙ্গিকার। মুসলিম উম্মাহ যতই কাল্পনিক ও ধোঁয়াশাই হোক, বহু শতাব্দী থেকে এটি মুসলিম সমাজ পরিবারে চর্চার বিষয়। এই চেতনা নিয়েও বাংলাদেশে বামপন্থি হতে দেখেছি। কোলকাতাতে তাহলে কি সমস্যা সিপিএম কংগ্রেস তৃণমূল করতে?

বাংলাদেশের জঙ্গিদের সবচেয়ে নিরাপদ রুট হচ্ছে ভারত। দেওবন্ধ, আজমির, ছোট ছোট পীরের দরগায় বাংলাদেশীদের গা ঢাকা দিতে সবচেয়ে ভালো জায়গা। বাংলাদেশের বিশেষ ইসলামিক আদর্শের কর্মীরা ভিসা ছাড়া দিনের পর দিন বহাল তবিয়তে থাকতে পারে কিন্তু একজন নাস্তিক মুক্তচিন্তক প্রাণ সংহার জেনেও ভিসা নবায়ন করতে বাংলাদেশে আইন মেনে আসতে হয়। কিন্তু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বিশেষ রাজনীতির লোকজনের সেটা না করলেও চলে। মাজেদকে অনুসরণ করা লোকগুলোর চেহারা দেখে যা আন্দাজ হয় তা আর না-ই বা বললাম!

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted