শয়তানের আয়াত নিয়ে লেখার পর এখন যারা আমাকে বলছেন, কুরআন নাযিলের পর ১৪০০ বছর ধরে এর একটি অক্ষরও পরিবর্তন হয়নি। বাইবেল তাওরাত গীতা অনেক ভার্সন পাওয়া যায়। কিন্তু কুরআনের দাড়ি কমা পর্যন্ত অবিকৃত যা কিয়ামত পর্যন্ত তাই থাকবে। এটা কি কুরআনের একটা ঐশ্বরিক প্রমাণ নয়?
প্রথম কথা হচ্ছে কুরআনে আল্লাহ নিজে কুরআনের হেফাজতকারী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আর আল্লাহ কারোর মুখাপেক্ষি নন! কিন্তু দেখা গেলো “ইয়ামামা যুদ্ধে ( যে যুদ্ধে বহু সংখ্যক কোরানে হাফেজ মারা যায়) বহু সংখ্যক সাহাবী হতাহত হওয়ার পর আবু বকর সবাইকে ডেকে পাঠালেন যেখানে ওমরও উপস্থিত ছিলেন, বললেন, ওমর আমার কাছে এসে বললেন, ইয়ামামার যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক মানুষ (যাদের মধ্যে অনেক কোরানে হাফেজও আছে) হতাহত হয়েছে এবং আমার আশংকা হয় অন্যান্য যুদ্ধক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে যাদের মধ্যে অনেক কোরানে হাফেজও থাকবে, আর এভাবে কোরানে হাফেজ মারা যেতে থাকলে কোরানের একটা বিরাট অংশই হারিয়ে যাবে যদি তুমি তা সংগ্রহ না কর। (সহি বুখারি, বই-৬০, হাদিস-২০)।
দেখা যাচ্ছে আল্লাহ যে কুরআনের হেফাজতকারী নয় সেটা ইসলামের প্রথম যুগেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। হাফেজ মরে সাফ হয়ে গেলে কুরআন নিশ্চহৃ হয়ে যাবে এই আশংকা করেছেন স্বয়ং হযরত ওমর! যাই হোক, শেষে কুরআন সংরক্ষণ কমিটি করে প্রত্যেকের কাছে থাকা কুরআনের আয়াত এনে কমিটির কাছে জমা দিতে বলা হলো। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, সুরা তওবার শেষ আয়াতটি কেবলমাত্র ‘খুজাইমার’ নামের এক ব্যক্তির কাছে পাওয়া যায়! এই ব্যক্তিটি যদি মারা যেতো যুদ্ধে তাহলে নিশ্চিত করেই সুরা তাওবার শেষ আয়াতটি চিরতরে হারিয়ে যেতো? তাহলে ইয়ামামা যুদ্ধে যেসব হাফেজ (কুরআন মুখস্তকারী) মারা গিয়েছিলেন তাদের কাছে মুখস্ত থাকা আয়াতগুলো কি চেক করে নেয়া হয়েছে? কি করে বিশ্বাস করব যে বিশেষ আয়াত তাদের কাছে ছিলো না?
বলে রাখা উচিত কুরআন তখন পর্যন্ত যেহেতু সংকলিত হয়নি তাই যে যতটুকু পেরেছিলো মুখস্ত করে রেখেছিলো, কেউ লিখে রেখেছিলো পার্চমেন্ট, খেজুর পাতা, হাড়ের মধ্যে। মুহাম্মদের সঙ্গে যখন যে থাকত তিনিই সেটা লিপিবদ্ধ বা মুখস্ত করে রাখতেন। সহি হাদিসে সুরা তওবার শেষ আয়াত কিভাবে পাওয়া গেলো দেখুন- “আমি সূরা আত-তাওবা এর শেষ আয়াতটি খুজাইমার কাছ থেকে সংগ্রহ করলাম যা আমি অন্য কারও কাছ থেকে পাই নি( সে আয়াতগুলো ছিল- তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। কোরান,০৯:১২৮) সহি বুখারি, বই-৬০, হাদিস-২০”।
কুরআনের কতটুকু সংরক্ষণ থেকে ছিলো এই সংশয় থেকেই এবার দেখা যাক কুরআন সংরক্ষণের কি ঘটল। কুরআন সংরক্ষণ কমিটির ডাকে সাড়া দিয়ে যার কাছে যত ডকুমেন্ট ছিলো কুরআনের সব জমা পড়ল। তার মধ্যে যাচাই বাছাই করে কমিটি যেগুলো রেখে দিলো বাকীগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হলো। এখন কথা হচ্ছে যেগুলি পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়া হলো সেগুলো কি ছিলো? সাহাবীরা কুরআনের আয়াত জেনে যা নিজেদের কাছে যত্ন করে সংরক্ষণ করেছিলো সেগুলো কেন আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হলো? কুরআনের বাইরে এত এত আয়াত সেগুলো কি বিচারে কুরআনের বাইরে হিসেবে বিবেচনা করা হলো? একইভাবে যেগুলো কুরআনের আয়াত হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছিলো সেগুলোর কোন নির্দশন কেন পরবর্তীকালে সংরক্ষণ করে রাখা হলো না? সাহাবীদের পার্চমেন্ট, খেজুর পাতা, হাড়ে লেখা কুরআনের আয়াতগুলো তো এখন জাদুঘরে রেখে দেয়ার কথা? আশ্চর্যজনকভাবে সেগুলোর একটিও নেই কেন? এগুলো কি ইচ্ছে করেই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিলো পরবর্তীকালে? প্রমাণ নষ্ট করতে?
এবার সহি হাদিস থেকে দেখাই কুরআনের আয়াত বিচ্ছিন্নভাবে হারিয়ে গিয়েছিলো যা ইসলামের সোর্স থেকে জানা যায়। আয়েশা নিজে সাক্ষি দিচ্ছেন কুরআনের একটি আয়াত একটি দাড়িঅলা রাম ছাগল খেয়ে ফেলেছিল! “আয়িশা(রা) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রজমের ও বয়স্কদের দশ ঢোক দুধপানের আয়াত নাযিল হয়েছিল এবং সেগুলো একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রাসুলুল্লাহ ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি বকরী এসে তা খেয়ে ফেলে।(সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস নং ১৯৪৪ প্রকাশনা ভেদে হাদিস নং-১৯৩৪)”
এই আয়াত হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় হযরত ওমর ভীষণ কুন্ঠিত ছিলেন যা জানা যায় আরেক সহি হাদিস থেকে। “ইবনে আব্বাস বর্ণিত- ওমর বললেন, আমার ভয় হয় অনেক দিন পার হয়ে গেলে লোকজন বলাবলি করতে পারে -“ আমরা কোরানে রজম(পাথর মেরে হত্যা) সম্পর্কে কোন আয়াত পাচ্ছি না এবং অত:পর তারা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম ভূলে বিপথগামী হয়ে যেতে পারে। (সহি বুখারী, বই-৮২, আয়াত-৮১৬)”
এই হচ্ছে অবস্থা! এ হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র ‘অবিকৃত গ্রন্থ’! অথচ তলস্তয়ের আন্না কারেনিয়ার একটি অক্ষরও পৃথিবী ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত অবিকৃত থাকবে আমরা বলতে পারি। রবীন্দ্রনাথের কবিতার একটি অক্ষরও কোনদিন বিকৃত হবে না। পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত কবিদের লেখা মহাকাব্যগুলোও কোন বিকৃতি ঘটবে না! কিন্তু কথিত সর্বশক্তিমানের বইয়ে জাল থেকে জোচ্চুরি সবই ঘটে গেছে!
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................