মহাভারত স্বর্গারোহণ পর্ব

মহাভারত স্বর্গারোহণ পর্ব 
---------------------------------

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর অনেক বৎসর কেটে গেলো । পঞ্চপান্ডব রা একদিন সংবাদ পেলেন যে যাদব রা সবাই নিজেদের মধ্যে মারামারি করে সবাই ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেই দুঃখে বলরাম ও আত্মাত্যাগ করছেন ।
পান্ডবদের সবচেয়ে বড় পরামর্শ দাতা শ্রীকৃষ্ণও জরা নামক শিকারির তীরের আঘাতে অভিশাপের কারণে মৃত্যু প্রাপ্ত হয়েছেন ।
শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু তে পান্ডব রা খুব ভেঙে পড়েন ।
যুধিষ্ঠির ভাবলেন তাদের প্রয়োজন এখন ফুড়িয়ে গেছে । তাই তিনি মহাপ্রস্থানের জন্য তৈরি হলেন ।
তার সাথে সাথে অন্য পান্ডব ও দ্রোপদিও তৈরি হলেন ।

তারা তাদের রাজ্য অভিমন্যু পুত্র পরীক্ষিত কে সমর্পণ করলেন ।

এবং মহাপ্রস্থানের পথে হিমালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করলেন।

মহাপ্রস্থানের যাত্রী কখনো পিছনে ফিরে যায় না । তাই পঞ্চ পান্ডব ও দ্রোপদিও এগুতে থাকলেন সামনের দিকে ।

পথে একটি কুকুর ও তাদের অনুসরণ করে চলতে লাগলো ।

এভাবে কিছুদিন চলার পর দ্রোপদী স্থবির হয়ে পড়লেন ,,
এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ।

তখন ভীম যুধিষ্ঠির কে বললেন : হ্যাঁ  ভ্রাতা দ্রোপদি অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ আর ধার্মিক স্ত্রী ছিলো ।তার কেন মৃত্যু হলো ?

তখন যুধিষ্ঠির বললেন ,,দ্রোপদি আমাদের সবার থেকে অর্জুন কেই অধিক ভালোবাসতো । তাই পক্ষপাতের কারণে মহাপ্রস্থানিক পথে তার মৃত্যু হলো।

দ্রোপদির মৃত্যুর কিছুদিন পর  সহদেব ও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।
তখন ভীম যুধিষ্ঠির কে বললেন,, হ্যাঁ ভ্রাতা সহদেব অত্যন্ত সুশীল লোক ,,,তার কেন মৃত্যু হয়েছে?

জবাবে যুধিষ্ঠির বললেন , সহদেব ভাবতো তার মতো সুশীল আর জ্ঞানী জগতে আর নেই ,,,তার আত্মগর্ব ই তার মৃত্যুর কারণ

এভাবে কিছুদিন চলার পর নকুলের মৃত্যু হলো ।
ভীম ফের যুধিষ্ঠির কে জিজ্ঞেস করলেন , নকুল অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ  তার কেন মৃত্যু হয়েছে?

ভীমের জবাবে যুধিষ্ঠির বললেন ,,,ভ্রাতা নকুল ভাবতো তার মতো সুন্দর আর সুদর্শন পুরুষ পুরু আর্যাবর্তে নেই । অহংকারের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

এবার মৃত্যু ঘটলো অর্জুনের ।
অর্জুনের মৃত্যুতে ভীম খুব দুঃখ পেলেন ।এবং বললেন ভ্রাতা 
অর্জুন অত্যন্ত সুড়বীর আর মহাজ্ঞানী তার কেন মৃত্যু হয়েছে?

যুধিষ্ঠির উত্তর দিলেন : অর্জুন নিজের বীরত্ব নিয়ে অহংকার করতেন এবং তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় বলেছিলেন যে একদিনেই সব সৈন্য শেষ করতে পারবেন । বাস্তবে তার দ্বারা এ কাজ কখনো সম্ভব ছিলো না ।
তাই অহংকার এর জন্য তার মৃত্যু হলো ।

চার ভাই আর দ্রোপদি কে হারিয়ে যুধিষ্ঠির ভীম চলতে চলতে অবশেষে ভীম ও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন,,,ভীম বললেন হ্যাঁ ভ্রাতা আমি সারাজীবন আমাদের পরিবারের রক্ষা কবচ ছিলাম এবং পরিবারের রক্ষা ও আপনার সেবা করেছি ,,,, আমার কেন মৃত্যু হবে?

যুধিষ্ঠির বললেন ,,ভ্রাতা ভীম ,,, তুমি ও ছিলে অর্জুনের মতোই অহংকারী । নিজের বল আর শক্তি নিয়ে খুব অহংকার করতে এবং অন্যের শক্তি আর বলকে না জেনে ই কটাক্ষ করতে 

তাছাড়া তুমি কারো কথা বিবেচনা না করে ই অনেক আহার করতে 
তাই তোমার মৃত্যু হবে।

এভাবে চার ভাই আর দ্রোপদি কে হারিয়ে যুধিষ্ঠির এগুতে থাকলেন দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে এবং সঙী তার কুকুর ।

মহাপ্রস্থানের যাত্রী কখনো পিছনে ফিরে তাকায় না তাই তিনি এগুতেই থাকলেন । এভাবে চলতে চলতে একসময় ইন্দ্র স্বয়ং আসলেন রথ নিয়ে যুধিষ্ঠির কে স্বর্গে নিয়ে যেতে ।
কিন্তু বাধা হলো কুকুর কে নিয়ে ।
কুকুর কে নিয়ে স্বর্গে যাওয়া যাবে না ।
কিন্তু যুধিষ্ঠির অনড় ,,,, অনেক কষ্ট করে কুকুর টি ও তার সঙ্গে এসেছে তাই ওকেও সাথে নিতে হবে ।
নাহলে তিনি ও যাবেন না ।

যুধিষ্ঠিরের এমন কার্য দেখে ইন্দ্র খুব মুগ্ধ হলেন।
বাস্তবে কুকুর টি ছিলো ধর্মরাজ।
পরে তিনি নিজের রূপ বেরিয়ে আসেন এবং যুধিষ্ঠির কে আশীর্বাদ দেন।
ইন্দ্রের রথে করে যুধিষ্ঠির স্বর্গে গেলেন । কিন্তু গিয়ে দেখলেন সেখানে তার প্রিয় ভাই আর পত্নী নেই ।

তিনি দেখলেন দূর্যোধন স্বর্গের সুউচ্চ সিংহাসন দখল করে বসে আছেন ।
তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলা হলো যে দূর্যোধন শেষ অবধি লড়ে গেছেন এবং একটুও বিচলিত হন নি ,,তাই তার এ প্রাপ্তি ।

কিন্তু যুধিষ্ঠির বললেন আমার ভ্রাতা রা ধর্মের জন্য যুদ্ধ করছেন ,,তারা কোথায় ।
তখন ইন্দ্র বললেন ,, তোমার ভ্রাতা রা কিছু পাপ করেছিলো, তাই তারা নরকে ,,,

যুধিষ্ঠির নরকে তাদের ভাইয়ের কাছে যেতে চাইলেন ।
এবং কেন তিনি নরক দর্শন করবেন সেটাও বলা হলো ।

ভীম যখন অশ্বথামা নামক হাতিকে মেরে ফেলে তখন তিনি গুরু দ্রোণ কে অশ্বথামা নিহত হয়েছে বলে মিথ্যা কথার চল করেছিলেন ,,তাই তার এ প্রাপ্তি ।

অবশেষে যুধিষ্ঠির নরকে গেলেন এবং দেখলেন নরকের বিভৎস দৃশ্য।

তিনি সেখানে ভীম ,,অর্জুন,, নকুল সহদেব,, দ্রোপদি কে দেখতে পেলেন ।

পাপের শাস্তি দেখে তিনি খুব ভারাক্রান্ত হলেন । এবং শ্রী হরি কে স্মরণ করলেন ।

সাথে সাথে সবার নরক যন্ত্রণা উধাও হয়ে গেলো ।

যুধিষ্ঠির এর পুন্যবলে সব পাপী মুক্তি পেলো ।

এবং তিনি তার ভাই পত্নী সবাইকে নিয়ে পুনরায় স্বর্গে মিলিত হলেন ।


0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted