এটি একটি সাম্প্রদায়িক লেখা
-----------------------------------
আমরা জানি, বিভিন্ন অর্ন্তগত ও বহিরাগত শক্তি এবং সভ্যতার প্রভাবে যুগে যুগে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির রূপান্তর ঘটেছে। তৎসম, অর্ধ তৎসম শব্দ বাংলা ভাষায় ও কথনে এমন করে গেঁথে গেছে যে তাদের জোর করে উচ্ছেদ করে বিকল্প ফারসী বা আরবী শব্দ প্রয়োগের মধ্যে কোন কৃতিত্ব নেই । চলতি ভাষা তার নিজস্ব গতিতেই সহজ, স্বতঃর্স্ফুত হয়ে ওঠে।
এছাড়া বিশেষ বিশেষ রচনা বিশেষ বিশেষ শব্দ ও বাক্য গঠন দাবী করে। “অনুবাদ” এর বদলে সর্বদাই “তর্জমা”, অথবা “লেখা” বা “লেখক” এর জায়গায় “লিখা” বা “লিখক” এই ধরণের সালতামামি সবাই গ্রহণ করবে এ আশা মূর্খামি । বাংলা ভাষাকে নিয়ে বহু টানাহ্যাঁচড়া হয়েছে। নজরুল ইসলাম তাঁর কোন কোন রচনায় অনেক বেশী আরবী ও ফারসী শব্দ ব্যবহার করেছেন, কখনো প্রায় বন্যার তোড়ের মতো। যে অনুষঙ্গে তিনি সেসব ব্যবহার করেছেন, তাতে তা খুবই মানানসই কিন্তু তাই বলে “তাহজীব” আর “তমদ্দুন” এর মত আরোপিত শব্দগুলো গৃহীত হয়নি ভাষার ভান্ডারে। নিত্যদিনের চলতি ভাষা জল, স্নান এর যায়গায় অযৌক্তিকভাবে পানি, গোসল ব্যবহৃত হলে বাঙালি মুসলমানের “বাবু সংস্কৃতি” বা “কলকাতা কেন্দ্রিক বাংলা সংস্কৃতি’র ওপর বিরাগ প্রকট হয়ে পরে । মডারেট বাঙালি মুসলমান এবারে জাতীয়তাবাদের ভূত দেখা শুরু করবেই, সন্দেহ নেই !
মডারেট বাঙালি মুসলমান ভাষার এই দ্বিচারিতার প্রসঙ্গ উঠলেই জাতীয়তাবাদ তথা বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ইসলামের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখতে শুরু করে, যতই নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিত করার চেষ্টা করুক না কেন, এখানে তাদের লেঞ্জা বেরিয়ে পরে ! বাংলা এবং বাঙালি সংস্কৃতিতে বড়বেশী হিন্দুয়ানী গন্ধ, তাই এর খতনা করে মুসলমানী লেবাস পরানো অতি জরুরী ! জাতির সংস্কৃতি কোন ধর্মের মৌলিক আর্দশ বিরোধী হয় নাকি? বাঙালির নিজস্ব ভুখন্ড (দ্বিখণ্ডিত) আছে, ভাষা আছে, সংস্কৃতি আছে, তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদ থাকাটা অবশ্যম্ভাবী । মানব গোষ্ঠী নানা ভৌগলিক অবস্থানে একসাথে বসবাস করার ফলে একেক গোষ্ঠীর দৈহিক গঠন, বর্ণ, আকৃতি, ভাষা-সংস্কৃতির প্রকাশ একেক রূপে। আর এভাবেই জাতির জন্ম । একজন আরবী মুসলমান ও একজন বাঙালি মুসলমানের ধর্মীয় চেতনা এক হলেও দৈহিক গঠন, বর্ণ, এবং সর্বোপরি ভাষা- সংস্কৃতির বিস্তর ব্যবধান। তাই চলতি দৈনন্দিন ভাষায় পানি, গোসল এর ব্যবহার জাতিসত্বাকে অবদমিত করে ধর্মীয় সত্বাকে প্রকাশ করারই সচেষ্ট প্রয়াস । কথা তেতো, কিন্তু সত্যি । বাংলা-বাঙালি সংস্কৃতি আমাদের নিজস্ব অহংকার,আর একে যারা অস্বীকার করতে চায় বা ইসলামীকরণ করার প্রচেষ্টা চালায় তারা হয় হীনমন্যতাগ্রস্ত নয়তো সস্তা সালতামামি করে । এখানে একটা কথা পাঠক জেনে রাখবেন : খোদ আরবে বর্তমানে যে ভাষা-সংস্কৃতি অব্যাহত আছে তা ইসলাম ধর্মের আর্বিভাবের অনেক আগে থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে। আরবের মুসলমানেরা তাদের পূর্বপুরুষদের প্রাচীন বেদুইন সংস্কৃতি অস্বীকার করেনি ।
হযরত মুহাম্মদ এর জন্ম যদি আরবে না হয়ে বাংলায় হতো তাহলে কোরানের ভাষা নিঃসন্দেহে বাংলা হতো ! তখন গোসল করার জন্য পানি লাগতো না, স্নান করার জন্য জল লাগতো !
নোট: এটি একটি সাম্প্রদায়িক লেখা ।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................