ফ্রান্সে এক শিক্ষকের নবী মুহাম্মদের এর কার্টুন আঁকা, পরবর্তী ঘটনাবলী আমাদের ইসলামী ফেবু জিহাদীদের রক্তে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ফরাসী সরকারের মুসলিমদের প্রতি অন্যায় অবিচারের চিত্র আর ফরাসী উপনিবেশী মানসিকতার চিত্র আঁকতে আজ উনারা ব্যস্ত। কিন্তু ফেবু জিহাদি ভাইয়েরা, ফরাসীদের বা যে কোন অমুসলিম দেশের বিরুদ্বে যখন আপনারা আংগুল তোলেন, একবারও কি ভেবে দেখেছেন, ইসলামের সোল এজেন্ট, সৌদি আরব অমুসলিমদের প্রতি কিরূপ আচরন করে? কখনো কি সে ব্যাপারে আপনাদের কলম বা বিবেক একটি বর্নও বলে? আসুন একটু দেখি সৌদিদের কোন কোন অন্যায় আপনাদের চোখে পড়ে না-
১. সৌদি আরবে অমুসলিমদের প্রতি বৈষম্যের শুরু হয় আকামা অথবা আইডি কার্ড ইস্যু করা থেকেই। মুসলিম এবং অমুসলিমদের জন্য প্রচলিত ভিন্ন রংয়ের আইডি কার্ড যাতে সহজেই অমুসলিমদের চেনা যায়। কর প্রথাও ভিন্ন রকম। শুধু মাত্র ধর্মের কারনে নাগরিকদের পরিচয়ে বিভেদ আর কোন দেশে আছে?
২. সৌদি আরবে অমুসলিমদের উপাসনালয় তৈরীর কোন অনুমতি নাই।
৩. সৌদি আরবে কোন অমুসলিম কোন ক্রমেই একজন মুসলিম নারীকে বিবাহ করতে পারে না—এটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।
৪. অ-সৌদিকে, তা জন্মসূত্রেই হোক অথবা ন্যাচারালাইজশনের মাধ্যমে হোক সৌদি নাগরিকত্ব দেওয়া হয় না। একজন অমুসলিম কোনক্রমেই সৌদি নাগরিকত্ব পায় না।
৫.বিধর্মীরা সৌদি আরবে কোন বিদ্যালয় স্থাপন করতে পারেনা।
৬. সৌদি শরিয়া আইন অনুযায়ী সমস্ত অমুসলিম নারীরাও সোদি আরবে ইসলামী পোষাক পড়তে বাধ্য।
৭. সৌদি আরবে কোন বিধর্মী ইসলামে দীক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত কোন রকম দান খয়রাত (যাকাত) পেতে পারেনা।
এখন তুলনা করুন অমুসলিমদের প্রতি সৌদিদের এই ঘৃণিত ব্যবহারের সাথে অমুসলিমদের দেশে মুসলমানদের কি ভাবে আপ্যায়িত করা হয়।
১. অমুসলিমদের দেশে নাগরিকদের পরিচয় পত্রে বা সুযোগ সুবিধায় ধর্মের কারনে কোন রকম বৈষম্য করা হয় না।
২. মসজিদ, মন্দির, গীর্জা কোন কিছুরই স্থাপনায় কোন ধর্মীয় বাধা নেই।
৩. অমুসলিমদের দেশে অবস্থানরত মুসলমানরা তাদের পছন্দমত যে কোন মহিলাকে বিয়ে করতে পারে।
৪. এইসব মুসলমানরা তাদের ইচ্ছামত ইসলামী বিদ্যালয়ও তৈরী করতে পারে।
৫. এইসব মুসলমানরা জন্মগতসুত্রে অথবা ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে অমুসলিম দেশের নাগরিকত্ব পেতে পারে।
৬. অমুসলিম দেশগুলোতে পোষাকের পূর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। কয়েকটি দেশ (ফ্রান্স, হল্যান্ড, নরওয়ে) মানূষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এমন ধর্মীয় পোষাক যেমন হিজাব, ক্রস, কিপ্পাহ (ইহুদিদের টুপি) ইত্যাদি স্কুলে পরিধান নিষিদ্ব করেছে। যদিও হিজাব কেন পড়তে দেয় না এটা নিয়ে মুসলিমরা চরম সোচ্চার।
৭. অমুসলিম দেশ গুলোতে নাগরিক এবং আশ্রিতরা সরকারি যে দান খয়রাত পায় তাতে ধর্মাশ্রয়ী কোন বৈষম্য নেই।
সবচেয়ে লক্ষনীয় ব্যাপার হল অমুসলিমদের দেশে মুসলমানদের ইসলাম প্রচারের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। পাশ্চাত্য দেশে মুসলমানেরা যাচ্ছেতাই ভাবে অন্য ধর্ম, বিশেষ করে ঈহুদি ও খৃষ্টান ধর্ম এবং নাস্তিকদের সমালোচনা করতে পারে, কিন্তু মুসলিম দেশে বসবাসকারী অমুসলিমরা ইসলামের সমালোচনা করে একটা শব্দও বলতে বা লিখতে পারেনা না আইনী কারনে। ইসলামী দেশগুলোতে ইসলামের নিন্দা অথবা সমালোচনার মানেই হচ্ছে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়া। অথচ ইংল্যন্ড এবং কানাডায় ইতিমধ্যে শরিয়া আইন বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন শুরু করেছে মুসলিমরা।
তথাকথিত ফেবু জিহাদিরা আজকে ফরাসী পন্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। মনে আছে কয়েক বছর আগে একই রকম পরিস্থিতিতে ড্যানিশ পন্য বর্জনের ডাক দিয়েছিল। আমার ফেবু জিহাদী বন্ধুরা, আপনারা ফরাসীদের কলোনিয়াল শাসনের ইতিহাস ঘাটছেন? কিন্তু উপমহাদেশে আরব, তুর্কী, আফগানীদের প্রায় হাজার বছরের শাসন শোসনের কথা ভুলে যান কেন?
ফেবুতে পশ্চিমকে গালি দেবেন, কিন্তু ভিসার জন্য মধ্য রাতে উঠে ওইসব অমুসলিম দেশের এম্ব্যাসীর সামনে লাইনে দাড়াবেন, ভিসা পেলে জীবন ধন্য মনে করবেন- এর চেয়ে বড় ভন্ডামী আর কি হতে পারে?
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................