হিন্দু জাতির এই অস্তিত্ব সঙ্কট থেকে উত্তরণের সমাধান-সূত্র আমার জানা

২০১৭ সালের ২ জুলাই উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বাদুড়িয়ায় হিন্দুদের উপর বর্বরোচিত সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়েছিল, আলালের ঘরের দুলাল দুধেল গাইয়েরা। হিন্দুরা যে যার কাজে ব্যস্ত।


হঠাৎ করে ধর্মনিরপেক্ষ দুধেল গাইদের একটি সশস্ত্র মিছিল এসে,হিন্দু-বসতির উপর তাণ্ডব শুরু করে দিলো। হিন্দুদের বাড়িঘর দোকানপাট অবাধ লুন্ঠন শেষে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হলো। ভূলুণ্ঠিত হলো হিন্দু নারীর সম্ভ্রম। বৃদ্ধ কার্তিক ঘোষ ভয়ে পাট ক্ষেতের মধ্যে গিয়ে লুকিয়েছিলেন। পাকিস্তানপন্থী ধর্মনিরপেক্ষ দুধেল গাইয়েরা পাটক্ষেতের মধ্য থেকে নিরীহ বৃদ্ধ কার্তিক ঘোষকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে, বিকট শব্দে আরবি ভাষায় স্লোগান দিয়ে, তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করলো। সেক‍্যুলার কনডম-বুদ্ধিজীবীরা কোনো প্রতিবাদ করেনি, উল্টো মুচকি হেসেছে; কেননা, ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুরা।

ঘটনার অল্প কয়েকদিন পরে,আমাকে যেতে হয়েছিল বাদুড়িয়ার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে। ভ্যানযোগে ফেরার সময়, অতিবৃদ্ধ ভ্যানচালক হিন্দুদের উপর চালানো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রসঙ্গে বলছিলেন,"বাবু, পূর্ব পাকিস্তান থিকা ধাওয়া খাইয়ে পচ্চিমবঙ্গে আইয়েছি। এইখান থিকা তাড়ায়া দিলে, কোথায় গেলি আশ্রয় পাব, বলতি পারেন?"

অতিবৃদ্ধ ভ্যানচালকের এই জ্ঞানগর্ভ প্রশ্ন শুনে আমি চমকে উঠলাম! কথায় কথায় বললেন, তিনি ছিলেন পূর্ববঙ্গের বাগেরহাট অঞ্চলের একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। তার সাড়ে সতের একর চাষের জমি ছিল। তার বসত বাড়িটিও ছিল বেশ বড়সড় আকৃতির । তার বাড়ির তিনটি পুকুরের মধ্যে একটি এত বৃহৎ আকৃতির ছিল, লোকে সেটাকে দিঘি বলতো। ছিলেন ফ্রিডম ফাইটার। কিন্তু বহুমুখী সাম্প্রদায়িক আক্রমণে সব হারিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এসে, ৮৩ বছর বয়সে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

পার্টিশনের সময় পশ্চিম পাকিস্তানে হিন্দু ছিল ২৮ শতাংশ। পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু ছিল ৩৫ শতাংশ। পাকিস্তানের এখন হিন্দু জনসংখ্যার হার মাত্র ১.৬ শতাংশ। পাকিস্তান ভেঙে সৃষ্টি হওয়া বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা হার কমে ৮ শতাংশে নেমে গেছে। পক্ষান্তরে, পার্টিশনের পরে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যার হার ছিল ১৭ শতাংশ। পূর্ববঙ্গ থেকে কোটি কোটি হিন্দু আসা সত্ত্বেও,২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যার হার ছিল ২৭.০১ শতাংশ। বিগত নয় বছরে, অনুকূল শাসন ব্যবস্থা - রোহিঙ্গা ও উগ্রপন্থীদের অনুপ্রবেশ প্রভৃতি কারণে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যার হার এত বৃদ্ধি পেয়েছে, ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের একজন তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ভিডিও আলোচনায় গর্বের সঙ্গে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে এখন মুসলিম ভোটার ৩৭ পার্সেন্ট। অবশ্য অনেকের মতে সেটা ৩৩ থেকে ৩৪ শতাংশ হতে পারে। পাকিস্তানে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার নানাবিধ কারণ আছে। কিন্তু ভারতে হিন্দু জনসংখ্যার হার কমছে কেন? পার্টিশানের সময় ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা হার ছিল ৮৭ শতাংশ, এখন সেটা কমে হয়েছে ৭৮ শতাংশ। এভাবে হিন্দু জনসংখ্যার হার কমতে থাকলে,অদূর ভবিষ্যতে হিন্দুদের হাতে আর ভারতের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। সেক্ষেত্রে কাশ্মীর ভ্যালির মতো সমগ্র ভারতের হিন্দুরাই দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাবে।

ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা হার কমে যাওয়ার ব্যাপারে আমার নিজস্ব যে পর্যবেক্ষণ, তাতে আমার দৃষ্টিতে হিন্দুদের সন্তান জন্মদানের হার তুলনামূলক কম; নারী-বিদ্বেষী ধর্মগুরুদের প্রভাবে হিন্দুদের মধ্যে কন্যাশিশু ভ্রুণ হত্যার প্রবণতা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। হিন্দু মেয়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায়,হিন্দু সন্তান কম জন্মাবে এটাই স্বাভাবিক। ধর্মগুরুরা উদ্ভট কামিনী-কাঞ্চন ত‍্যাগের মতবাদ প্রচার করে, হিন্দু যুবকদের যৌনতা-বিমুখ করে ফেলছে, ফলে হিন্দু মেয়েরা লাভ জিহাদে উৎসাহিত হচ্ছে। মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মগুরুরা বাইরে থেকে তাদের সমাজের লোক আনতে পারে। হিন্দু ধর্মগুরুরা বাইরে থেকে লোক আনতে পারেনা, বরঞ্চ কতিপয় ধর্মগুরু বর্ণবিদ্বেষ উস্কে দিয়ে, নিম্নবর্ণের হিন্দুদের অপমান করে অন্য ধর্মে ঠেলে পাঠাচ্ছে।

ভারতের সেক‍্যুলার শাসকগোষ্ঠী, হিন্দু জাতিকে বিভক্ত ও দুর্বল করে রাখতে, বর্ণভিত্তিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। এর ফলে তথাকথিত উচ্চবর্ণের মেধাবীরা, সরকারি ধর্মনিরপেক্ষতাজাত বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়ে, দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ভারতের মেধাবী সন্তানদের সেবায় ইউরোপ-আমেরিকা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। আর সেক‍্যুলার-ষড়যন্ত্রকারীরা মেধাবী ছেলেমেয়েদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ফলে, ভারতের সর্বিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে ভারত এখনও দরিদ্র ও অনুন্নত দেশ হিসেবেই পিছিয়ে রয়েছে।

হিন্দু জাতির এই অস্তিত্ব সঙ্কট থেকে উত্তরণের সমাধান-সূত্র আমার জানা নেই। আমি সবজান্তা নই। আমি কেবল কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা চিহ্নিত করে দিতে পারি। তবে আমি পূর্ববঙ্গে লক্ষ‍্য করেছি, তথাকথিত নিম্নবর্ণের হিন্দু থেকে যারা খ্রিস্টান হয়েছে, তারা অত্যন্ত সংগঠিত। ঢাকা শহরে হিন্দুরা জমি ধরে রাখতে পারেনা, কিন্তু হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হওয়া খ্রিস্টানদের জমিতে হাত দেওয়ার সাহস কারো নেই। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ২৭ লক্ষ হিন্দু হত্যা করা হয়েছে; হিন্দু নারী ও বিষয়সম্পত্তি - মাল এ গনিমত হিসাবে জোরপূর্বক ভোগদখল করা হয়েছে। অথচ হিন্দু থেকে যারা খ্রিস্টান হয়েছে, তাদের গায়ে ফুলের টোকাটিও লাগেনি; বরং খ্রিস্টানদের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাতে গিয়ে, শান্তির ধর্মের লোকেরা উল্টো বেধড়ক মার খেয়েছে। 

আমি গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি, খ্রিস্টানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা দিয়ে দরিদ্র বিধর্মীদের আকৃষ্ট করে, এবং সুবিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে, দরিদ্র স্বজাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও সুরক্ষিত রাখে। মেধাবী হিন্দুরা যদি খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, মন্দ হবে কি? ভাবুন,ভাবতে থাকুন....

কৃত্তিবাস ওঝা
২৭/১০/২০২০খ্রিঃ

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted