পৃথিবীর কুৎসিততম ধর্মনিরপেক্ষতা!
সাম্প্রতিক বিহার বিধানসভা নির্বাচনে পুনরায় সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। হঠাৎ করেই প্রার্থী দিয়ে পাঁচটি আসন জিতে নিয়েছে ইসলামিক মৌলবাদী দল অল ইন্ডিয়া মজলিস ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) বা মিম। এর আগে বিহার বিহার বিধানসভায় ওয়াইসির কেবল একটি আসন ছিল। লন্ডন থেকে পাস করা ব্যারিস্টার কট্টর মৌলবাদী আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল মিমের পাঁচটি আসন পাওয়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে নানা হিসাব-নিকাশ, নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। উগ্র ইসলামিক দলের নেতা হিসেবে যে ওয়াইসির সমালোচনা হচ্ছে তা কিন্তু না, ওর সমালোচনা হচ্ছে ‘ভোট কাটুয়া’ হিসেবে। কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং ওয়াইসিকে ‘ভোট কাটুয়া’ বলে তোপ দেগেছেন। কেউ কেউ বলছে, ওয়াইসিকে বিহারে ঢুকিয়েছে বিজেপিই। এদের উদ্দেশ্য, মুসলিমদের সংরক্ষিত ভোট যা এতদিন কংগ্রেস এবং সিপিএমের ঝুলিতে ছিল সেখানে মিমকে ভাগ বসাতে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ প্রশস্ত করা। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সমালোচনা হচ্ছে তা দেখে কিন্তু আপনি বিভ্রান্ত হতে পারেন! আপনি ভুল করে ভোটলোভী মানুষদের ধর্মনিরপেক্ষ ভেবে বসতে পারেন! ঠিক যেমন উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দেশপ্রেমিক ভেবে ভুল করে অনেকেই।
যারা ওয়াইসির কঠোর সমালোচনা করছে তারা কেউ ইসলামী মৌলবাদী দল হওয়ার কারণে কিন্তু ওয়াইসির সমালোচনা করছে না, বরং সমালোচনা করছে ওয়াইসি কেন মুসলিমদের রিজার্ভ ভোটে ভাগ বসালো সেজন্য! কথিত বিশেষজ্ঞদের যাচাই বাছাই থেকে বুঝতে পারলাম, বিজেপি নেতৃত্বাধীন মৌলবাদকে ঠেকাতে হলে মুসলিম ভোটগুলোকে নিরঙ্কুশভাবে কংগ্রেস এবং সিপিএমের ঝুলিতে ভরে দিতে হবে, অর্থাৎ মুসলিমরা এখানে কেবল ‘ভোটমানব’। মুসলিমরা কেবলমাত্র ভোটমানব যদি না-ই হয় তাহলে এতদিন পর্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী কংগ্রেস এবং সিপিএমকে ভোট দিয়ে, কংগ্রেস এবং সিপিএমের সাথে থেকেও তারা কেন সেকুলার হতে পারল না? তারা কেন প্রগতি ধারণ করতে পারল না? কেন তাঁরা মৌলবাদী আসাদউদ্দিন ওয়াইসির কট্টর ইসলামের দিকেই ঝুঁকে পড়ল?
এই সকল ‘কেন’র উত্তর পাওয়া যাবে ভারতবর্ষীয় বুদ্ধিজীবীগণের বুদ্ধির পুষ্টিহীনতা দেখলে। তারা বিজেপি, শিবসেনা, আরএসএস ও বজরং দলের সমালোচনা করে এবং এটি করাও উচিত; কিন্তু তাঁরা ইসলামিক মৌলবাদী দলগুলির সমালোচনা করে না। হিন্দু মৌলবাদ যদি ভারতবর্ষের মাথাব্যথার কারণ হয় তাহলে ইসলামী মৌলবাদও কেন ভারতবর্ষের মাথাব্যথার কারণ নয়? হিন্দু মৌলবাদীদের হিন্দুত্ববাদের আবেদন ভারতের বাইরে অন্য কোথাও নেই, কিন্তু কিন্তু ভারতের মাটিতে বেড়ে ওঠা ইসলামী মৌলবাদের আবেদন সারা বিশ্বজুড়ে। ভারতে এমন কোন হিন্দু পন্ডিত আপনি খুঁজে পাবেন না যার আহবানে সাড়া দিয়ে পৃথিবীর অন্য কোন দেশের মসজিদ, গির্জা, রেস্তোরাঁ ও শপিংমলে কোন হিন্দু সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। কিন্তু ভারতে আপনি জাকির নায়েককে খুঁজে পেয়েছেন, ভারতে আপনি দেওবন্দী মোল্লাদের খুঁজে পেয়েছেন যাদের আদর্শের সৈনিকেরা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্থানে ভয়াবহ সব জঙ্গি হামলা পরিচালনা করেছে। ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের উগ্রতা কেবল ভারতের মাটিতেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু ভারতের ইসলামী মৌলবাদীদের উগ্রতা ভারত তো বটেই, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে! ভারতের ইসলামী মৌলবাদের উগ্রতার উত্তাপে ঝলসে গেছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ। দেওবন্দের গাজওয়ায়ে হিন্দের ফতোয়া বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মুসলিমদের মনের মধ্যে প্রজ্বলিত করেছে জিহাদের লেলিহান শিখা। আর এই জিহাদের লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে রাখার জন্য এবং বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর পরিচালিত ধারাবাহিক গণহত্যার জন্য কি আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মত ভারতীয় রাজনীতিবিদরা দায়ী না? এমনকি মস্তিষ্কের পুষ্টিহীন সেসব বুদ্ধিজীবীরাও যারা কেবলমাত্র সিলেক্টিভ সমালোচনা করে, যারা কেবলমাত্র বিজেপির উত্থানে ভীত হয় কিন্তু আসাদউদ্দিন ওয়াইসির উত্থানে ভীত নয় তারাও কি দায়ী না? জয় শ্রীরামকে ভয় পেলে আল্লাহু আকবারকে কেন ভয় পাবেননা? ত্রিশূলকে ভয় পেলে তরবারিকে কেন ভয় পাবেন না? গেরুয়াকে ভয় পেলে দাড়ি-টুপিকে কেন ভয় পাবেন না?
ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো চায় বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান সরকার তাদের দেশের ইসলামিক মৌলবাদকে নিশ্চিহ্ন করে দিক, কিন্তু ভারতের মধ্যে একের পর এক জাকির নায়েক তৈরি হতে থাকুক। যখন বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় ছিল আর ভারতে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল তখন বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উত্থানের বিরুদ্ধে কংগ্রেস অত্যন্ত সরব ছিল। যখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলো তখন কংগ্রেস ইসলামী মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আওয়ামীলীগকে অনুরোধ করল, অথচ আশ্চর্যের বিষয় এই যে, কংগ্রেস ভারতের ভেতরে থাকা ইসলামিক মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তো নিলই না বরং তাদেরকে রাজনৈতিক জোট সঙ্গী হিসেবেই গ্রহণ করল! তাহলে ব্যাপারটা কি এরকম দাঁড়াল না যে, আমি আমার বাড়িতে থাকা পোষা কুকুরের ঘেউঘেউ চিৎকার বন্ধ করতে রাজি নই কিন্তু আমার প্রতিবেশীর বাড়ির যে বিড়ালটি কুকুরের ঘেউঘেউ শব্দ শুনে মিঁউমিঁউ করছে সেটা নিয়ে আমি খুব চিন্তিত! আমি আমার প্রতিবেশীকে বলছি, “তোমার বিড়ালের মিঁউ মিঁউ মিউ শব্দ থামাও, শব্দ দূষণ খুবই খারাপ!”😁😁😁
ভারতবর্ষীয় পুষ্টিহীন বুদ্ধিজীবীদের নির্বুদ্ধিতা দেখে যদি মুসলিমরা কট্টর মৌলবাদী দলকে ভোট দেয় আর হিন্দুরা কট্টর হিন্দুত্ববাদী দলকে ভোট দেয় তাহলে সেটা কি খুবই আশ্চর্যজনক? মৌলবাদী ইসলামের উত্থান যদি দোষের না হয় তাহলে মৌলবাদী হিন্দুত্ববাদের উত্থান কেন দোষের হবে? আবার একইভাবে মৌলবাদী হিন্দুত্ববাদ যদি দোষের না হয় তাহলে মৌলবাদী ইসলাম কেন দোষের হবে? আর সবচেয়ে বড় কথা, আপনি যখন মৌলবাদের সমালোচনা করছেন তখন সে সমালোচনা সিলেক্টিভ হয়ে যাচ্ছে কেন? আপনি একটি মৌলবাদের সমালোচনা করছেন আর অন্যটির ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকছেন কেন? এটাও কি আপনার ব্রাহ্মণ্যবাদী শিক্ষার অংশ?
এর নাম কি ধর্মনিরপেক্ষতা? এমন কুৎসিত ধর্মনিরপেক্ষতা পৃথিবীর আর কোন দেশ আছে কিনা আমার জানা নেই!
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................