বিবাহিতা হিন্দু নারীর শাখা ও সিঁদুর পরিধান।

প্রসঙ্গ : বিবাহিতা হিন্দু নারীর শাখা ও সিঁদুর পরিধান।

২০১১ সালের ঘটনা। আমি তখন চট্টগ্রাম শহরে একটি কোম্পানিতে কর্মরত। বিকেলে অফিস থেকে ফেরার সময় সিট না থাকায় বাসে দাঁড়িয়েছিলাম। পাশেই দুই মহিলা বসেছিলেন। আলাপচারিতায় বুঝলাম দুইজনই একই অফিসে কর্মরত। দুইজনের পরনেই ছিল ত্রিপিজ। এরমধ্যে একজন হিজাব পরিহিতা এবং অন্যজন সাধারণ পোশাকে। আমি দুইজনকেই মুসলিম ভেবেছিলাম। কিন্তু কথাচ্ছলে হঠাৎ জানালার পাশে বসা মহিলাটি "হায় ভগবান" বলে উঠায় আমি অবাক হয়ে মহিলার হাত ও মাথায় লক্ষ্য করে দেখলাম যে মহিলার পরনে শাঁখা বা সিঁদুর কোনটাই নেই। তাঁদের দিকে না তাকিয়ে দুইজনের আলাপ শুনছিলাম। পরে নিশ্চিত হলাম যে "হায় ভগবান" বলা মহিলাটি আসলেই হিন্দু। কেবলমাত্র সিঁথিতে অনিন্দ্যসুন্দর সিঁদুরের ফোঁটা আর হাতে নয়নাভিরাম শাঁখার অভাবে আমার অবিশ্বাসী মন ওই মহিলাকে মুসলিম ভাবিয়েছিল! সেদিন বুঝেছিলাম কপালের ওই সামান্য সিঁদুর ও হাতের শাখা একজন বিবাহিত হিন্দু নারীকে কতটা স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য, ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দর্যে সমুজ্জ্বল করে। আর এসবের অভাবে একজন বিবাহিতা হিন্দু নারী কতই না বিবর্ণ, মলিন, ফ্যাকাসে ও স্বাতন্ত্র্যহীন!

শৈশবে আমার মা যখন স্নান সেড়ে কপালে ও সিঁথিতে সিঁদুর পরত তখন আমি মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ওই সিঁদুর পরা দেখতাম। সিঁদুর পরিহিতা আমার মায়ের প্রতীমাসদৃশ ওই মায়াবী মুখ দর্শনে এক অবিশ্বাস্য ভক্তি শ্রদ্ধা ও ভক্তি বিরাজ করত। মায়ের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা আজও সমান কিন্তু সদ্য বৈধব্য বরণ করা শাঁখা,সিঁদুর বিহীন আমার মায়ের বিবর্ণ ও মলিন মুখ আমাকে বড্ড পোড়ায়।

আমার স্ত্রী যখন সিঁদুর পরে সন্মুখে দাঁড়ায় তখন অনুরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। সিঁদুর পরিহিতা বিবাহিতা হিন্দু নারীগণ কেবল সৌন্দর্য নয় বরং ব্যক্তিত্ব,স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য লালনকারী এক একজন সর্বজয়া।

এখন আসি মূল প্রসঙ্গে। ইদানিং বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজে কিছু নারী এবং ক্ষেত্র বিশেষে কিছু পুরুষ বিবাহিতা হিন্দু  নারীদের শাখা-সিঁদুর পরিধানকে "অপ্রয়োজনীয়" বলতে চাইছেন। আবার অনেকে আরও এক কদম এগিয়ে শাখা-সিঁদুরকে "দাসত্বের শৃঙ্খল" বলতে চাইছেন! সত্যিই কি শাঁখা-সিঁদুর বিবাহিতা হিন্দু নারীদের দাসত্বের শৃঙ্খল? শাখা-সিঁদুর পরিহিতা হিন্দু নারীগণ কি সত্যিই নিজেদের দাসী মনে করেন? যে শাখা-সিঁদুর হিন্দু নারীদের ব্যক্তিত্ব, স্বাতন্ত্র্য,, শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসায় পূর্ণতা দেয় সেই শাখা-সিঁদুরকে "দাসত্বের শৃঙ্খল" বলে অভিহিত করা এই নামধারী রুচিহীন হিন্দুরা আসলে কারা? অস্তিত্বের সংকটে থাকা স্বজাতি হিন্দুদের প্রতি এই তথাকথিত "আধুনিক" নারী ও পুরুষ হিন্দুদের অবদান কি? নাকি কেবল আলোচনায় থাকার প্রত্যাশায় এইসব রুচিহীন প্রলাপ?

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted