চট্টগ্রামে মামুনুল হককে আটকে দিয়ে নিজেদের বিজয় ভাববেন না। হেফাজত ইসলামের সঙ্গে যতদিন যাবে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ বাড়তেই থাকবে। মডারেটরা ধর্মব্যবসায়ীদের মাথায় করে নাচে শেষ দিকে তাদের সঙ্গে মরণ সংঘাতের মধ্যে দিয়ে এর যবনিকাপাত ঘটে। এগুলো কোন নতুন ইতিহাস নয়।
গত একযুগে সরকার হেফাজতের যে কোন দাবীকে নিরবে সহে গেছে বা মান্য করে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন? জাস্টিসিয়া, সিলেবাস থেকে 'হিন্দু লেখকদের' লেখা বাদ, মাদ্রাসাকে পাবলিক ইউনিভার্সিটির মর্যাদা, মিল্ক ব্যাংক বাতিল, নারী বান্ধব আইন পাশ না করার মত সিদ্ধান্ত সরকার কেন নিয়েছিল যদি চট্টগ্রামে হেফাজত ইসলামকে পুলিশ আর কর্মী বাহিনী দিয়ে প্রতিরোধ করাই যায়?
সৌদি আরব গোটা বিশ্বে মাদ্রাসা বানানোর টাকা দিতো জিহাদী মুসলমান ও মুসলমান উম্মাহ ধারণাকে শক্তিশালী করতে। কিন্তু নিজ দেশের রাজতন্ত্রকে যখন জিহাদের সাপ ফনা তুলল ছোবল দিতে তখন সৌদি আরব সংস্কার শুরু করল ঘর থেকে এবং জিহাদী বিশ্বের বিপরীত ধারায় যেতে বাধ্য হল। ফলাফল সৌদি আরবের রাজতন্ত্র দুর্বল এবং সংকটে। এটা সৌদি আরবই তৈরি করেছিল মুসলমানদের জিহাদের শিক্ষা দিয়ে। জিহাদ শিখেই মুসলমানরা বুঝেছিল ইসলামে রাজতন্ত্র হারাম খিলাফতই সমাধান। অর্থাৎ নিজেদের অর্থায়নে সাপের খামার এখন খামারীকেই খেতে চাইছে। সংস্কার করতে গিয়ে ওদিকে মুসলিম উম্মাহর ক্যাপ্টেনসি চলে যাচ্ছে জঙ্গি এরদোয়ানের হাতে। সৌদি আরব নিজে জানে ওদের গ্রান্ড মুফতিই মনে মনে জিহাদের ঝান্ডা ধরে বসে আছে। এরকম রাষ্ট্রীয় পদ সৃষ্টি করে ধর্মের *খাসিদের হাতে ক্ষমতা দিলে সেটা সে একদিন প্রয়োগ করবেই। এই যে ইসলামী ফাউন্ডেশন বানানো হয়েছিল বাংলাদেশে সেখান থেকে হেফাজত ইসলামের প্রতিটি দাবী যে ইসলাম সম্মত সেটা এদেশের জনগণ অতি সহজে জানতে পারছে। ইসলামী ফাউন্ডেশনের প্রকাশনীর পিছিয়ে অর্থ ব্যয় করে আপনি কেমন মানুষ আশা করেন?
মোল্লাদের* কখনো রাষ্ট্রের ধারেকাছে তো আনতেই নেই উল্টো এদের দ্বিনী শিক্ষাকে ভাতে মারতে হয়। সৌদি আরব জিহাদ মোকাবিলা করছে তখন যখন সে নিজেই আক্রান্ত। আওয়ামী লীগ তখনই প্রথম প্রতিবাদ করল যখন বঙ্গবন্ধু আক্রান্ত হলো। এটা না করে তাদের উপায় ছিলো না। কিন্তু আওয়ামী লীগ ভুলেও আর নতুন করে ভাস্কর্য মূর্তি প্রতিকৃতি বানাবে না। মতিঝিল থেকে হেফাজত ইসলাম সরকার পতনের ডাক দেয়ার পর সরকার এ্যাকশন নিয়েছিল, কিন্তু অতি পলিটিক্স করতে গিয়ে তারপর হেফাজত তোষণ বেড়ে গিয়েছিল জামাত ইসলামকে দমন করতে। এক ধর্ম ব্যবসাকে দমন করতে আরেক ধর্ম ব্যবসাকে পৃষ্টপোষকতা করে আওয়ামী লীগ শুধু নিজের নয় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তালেবানী শাসনের শংকার সামনে এনে দিয়েছে।
না, বলছি না হেফাজত ইসলাম সেনাবাহিনীর সঙ্গে ফাইট করে ক্ষমতা নিয়ে নিবে আফগানিস্তানের নজিবুল্লাহ সরকারের সময়ের মত। কিন্তু নজিবুল্লাহ সরকার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে আলেম ওলামাদের যে পেট্রোনাইজ করেছিল তাতে তার সরকারই নয় আফগানিস্তানের ভবিষ্যতই বদলে গিয়েছিল। এই এক যুগে সরকার নিজেকে 'ইসলামিক সরকার' এরকম একটা রূপ ধরে ইসলামপন্থিদের খুশি করতে গিয়ে দেশে প্রগতিশীল সংস্কৃতি মনস্ক নাগরিক তৈরিতে একটি টাকাও ব্যয় করেনি। উল্টো মসজিদ মাদ্রাসা তৈরিতে ভূমিকা রেখে, জামাত দমনের অংশ হিসেবে ওয়াজী হুজুরদের মুখের লাগাম আনলিমিটেড করে দিয়ে রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে প্রগতি বিরোধী জনমত শক্তিশালী করেছে। পুলিশ ডিউটি হিসেবে বা চাকরি রক্ষার তাগিদে চট্টগ্রামে হুজুরদের দৌড়ানি দিলেও সেদিন চরমোনাইয়ের ভাস্কর্য বিরোধী মিটিংয়ে পুলিশ কিন্তু মোনাজাত ধরেছিল ঈমানী দায়িত্বের অংশ হিসেবে কারণ মোনাজাত ধরা পুলিশের ডিউটি নয়। হেফাজত, জামাত, চরমোনাই অমুক ইসলামী তমুক ইসলামী পার্টির শক্তি এখানেই । আওয়ামী লীগ ললিতকলার পিছনে অর্থ ব্যয় করেনি, সংস্কৃতির পিছনে পৃষ্টপোষকতা করেনি, কনসার্ট, নাটক, শিল্প সাহিত্যের পিছনে না থেকে বরং নিরাপত্তার অজুহাতে সব বন্ধ করে দিয়েছে। এরাই হত আওয়ামী লীগের শক্তি। মন্দের ভালো, ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিকল্প হিসেবেও তারা হত আওয়ামী লীগের সমর্থক। ২০১৩ পর্যন্ত আমরাও তো তাই ছিলাম!
দেশে এখন প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষতার কথা শুনলেই কাফের ইহুদি নাস্তিক বলে বিষোদগার করার লোকজন সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই সংখ্যাগরিষ্ঠ লোককে পছন্দ করে সরকার বাছতে দিলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তাহলে এদের ভোট বানচাল করে ক্ষমতায় থেকে একনায়কতন্ত্রের অভিযোগ কাঁধে নিয়ে সরকার যখন সংকটে পড়বে তখন গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য এই টুপি দাড়িঅলারাই রাজপথে বিপ্লবী সাজবে। মধ্যপাচ্যের আরব বসন্তের সৈনিকরা ছিলো মুসলিম ব্রাদারহুড নয়ত জিহাদী জঙ্গি খিলাফতবাদীরা। হেফাজতের উত্থানকে মিশেল ফুকোর মত আন্তর্জাতিক বুদ্ধিজীবীর অভাব হবে না যারা সেটাকে প্রলেতারিয়েতের উত্থান বলতে দ্বিধা করবে না। কাজেই বন্ধুরা, আপনারা কাঁচের ঘরে বসে হেফাজতকে ঢিল ছুড়ছেন। সাপ এখন খামার ছেড়ে বেরিয়ে গেছে!
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................